parbattanews

সেন্টমার্টিনে মালয়েশিয়াগামীসহ উদ্ধার হওয়া দুই থাই ট্রলারের হদিস নেই

ট্রলার

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:
মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকালে ৪৩৪ যাত্রীসহ সাগরে উদ্ধার হওয়া ২টি থাই ট্রলার রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে। থাইল্যান্ডের মালিকানাধীন বিশাল আকারের এই দু’টি ট্রলারের কোন হদিস আর পাওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (১২ মে) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় থাইল্যান্ডের একটি ট্রলার মালয়েশিয়াগামি ১১৬ জন বাংলাদেশী যাত্রীসহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশনের সদস্যরা। যাত্রীদেরসহ উদ্ধার হওয়া ট্রলার ওই দিন প্রথমে সেন্টমার্টিন নৌ-ঘাটে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে মুমূর্ষু অভিবাসীদের চিকিৎসা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে কোস্টগার্ড সদস্যরা ট্রলারটি নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় পৌঁছালে ট্রলারটি চরে আটকা পড়ে। এই সময়ে সেন্টমার্টিন থেকে দু’টি ইঞ্জিন বোট নিয়ে এসে ১১৬ যাত্রীকে বুধবার ভোরে টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।

স্থানীয়রা জানান, চরে আটকা পড়া থাই ট্রলারটি শাহপরীরদ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা গেলেও পরের দিন থেকে আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। শাহপরীরদ্বীপে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মানব পাচারকারিদের একটি সিন্ডিকেট রাতের আধাঁরে বিশাল সাইজের ট্রলারটি সরিয়ে নিয়ে গেছে। কোস্টগার্ডের কতিপয় সদস্যও এর সাথে জড়িত রয়েছে। তারা জানান মূল্যবান এই ট্রলার পাহারায় কোস্টগার্ড লোকবল নিয়োগ করার কথা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে রহস্যজনক ভাবে তা করা হয়নি।

একইভাবে গত বছর ১৫ জুন মালয়েশিয়াগামি ৩১৮ জন বাংলাদেশী আরোহী সহ আরো একটি থাই ট্রলার বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এই সময়ে পাচারকারিদের গুলিতে ৫ যাত্রী নিহত ও ৬০ জন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। ওই দিন রাতে ট্রলারটি টেকনাফে নিয়ে আসার পথে নাফ নদীর মোহনায় চরে আটকা পড়ে। তখন ওই ট্রলারে থাকা যাত্রীদের অপর একটি ট্রলারে করে রাতে টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রাতে চরে আটকা পড়া থাই ট্রলার থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় পাচারকারি চক্র। ট্রলারে বিপুল পরিমাণ জ্বালানী তেল ছিল। রাতের আধারে তাও লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। পরের দিন কোস্টগার্ড ট্রলারটি ডুবে গেছে বলে জানালেও এটির আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়- কোস্টগার্ডের কতিপয় সদস্যের সহযোগিতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব মাঝির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট চরে আটকা পড়া ট্রলারটি উদ্ধার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। এর আগে ট্রলারে থাকা বিপুল জ্বালানী তেল সহ মূল্যবান মালামালও লুট করে এই সিন্ডিকেট। তবে অভিযুক্ত আবু তালেব মাঝি জানিয়েছেন- চরে আটকা পড়া ট্রলারের ৩১৮ জন যাত্রীকে সরিয়ে নিতে কোস্টগার্ডকে সহযোগিতা করেছেন মাত্র। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লে. এম শাহিদ হোসেন চৌধুরী জানান, প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে আটকা পড়া থাই ট্রলার দু’টি সময় মতো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে জোয়ারের স্রোতের টানে ট্রলারগুলো সাগরে তলিয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান খোন্দকার জানান- ‘মালয়েশিয়াগামি যাত্রী সহ আটক থাই ট্রলার দু’টি থানায় হস্তান্তর করা হয়নি। শুনেছি ইঞ্জিন অচল হয়ে ট্রলারগুলো চরে আটকা পড়ে। পরে ট্রলার দু’টি সাগরে ডুবে যায়।’

Exit mobile version