সেন্টমার্টিন থেকে মহেশখালী পর্যন্ত ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টার প্লানের গেজেট প্রকাশ

coxbazar-map-sm20120413183359

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:
সুন্দর ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে টেকনাফের সেন্টমার্র্টিন কক্সবাজারের মহেশখালী পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (মাষ্টার প্ল্যান) এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কিছুটা কাঁটছাড় করে সম্প্রতি এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে মাষ্টারপ্ল্যান গেজেট আকারে প্রকাশ পেলেও তা এখনো হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব ও গণর্পূত বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের মাষ্টারপ্ল্যান গত মে মাসে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এটি পাওয়ার জন্য আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি। মাষ্টারপ্ল্যানের গেজেট পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এদিকে কক্সবাজারে মাষ্টারপ্ল্যান এর কাজ শুরুর পর থেকেই দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তারা কক্সবাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে। যতদিন পযর্ন্ত মাষ্টারপ্ল্যান অনুমোদিত হবে না ততোদিন তারা ঝুঁকি নিতে চাননি। মাষ্টারপ্ল্যানে কোথায় কি হবে বা কি করা যাবে-কি করা যাবেনা-এমন সব বাধ্যবাধকতার কারনেই মূলতঃ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এসব বিনিয়োগকারীরা রাজধানীর ‘ড্যাব’ এর মতো জটিলতায় পড়তে চাননি। কিন্তু এখন মাষ্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার প্রায় এক মাসেও মাষ্টারপ্ল্যানে কি আছে তা জানতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন এবং দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তারা। এর ফলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজও ঝিমিয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ‘মাষ্টারপ্ল্যান অনুমোদন দিয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এর কপি আমাদের হাতে আসেনি।’

জানা গেছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের প্রসার শুরু হয় মূলতঃ এক যুগ আগে থেকেই। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের পদভারে মুখরিত কক্সবাজারে দেখা দেয় আবাসন, বিনোদন সহ নানা সংকট। আর এ সুযোগে পর্যটকদের সুবিধা দিতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত গড়ে উঠে শত শত বহুতল ভবন।

গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে কক্সবাজার সাগর পাড়ে হোটেল মোটেল জোন ঘোষনা করে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক অট্টালিকা। হোটেল মোটেল জোনের পূর্ব পাশে গনপূর্ত বিভাগের আবাসিক এলাকার প্লটে এখন শতাধিক গেস্ট হাউস বাণিজ্যিকভাবে হোটেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এর পরিধি বেড়ে কক্সবাজার শহর ছেড়ে বিস্তৃীর্ণ সৈকত হয়ে ঠেঁেকছে দেশের শেষ সীমানা সেন্টমার্টিন পর্যন্ত। পর্যটন শিল্পের অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে শত শত অট্টালিকা। রাজধানী ঢাকায় যেখানে দুইটি পাঁচ তারকা মানের হোটেল নেই সেখানে কক্সবাজারেই গড়ে উঠেছে প্রায় এক ডজন পাঁচ তারকা মানের হোটেল। নিমির্ত হচ্ছে আরো বেশ কটি হোটেল।

এছাড়া স্টুডিও টাইপ তিন তারকা ও পাঁচ তারকা মানের এপার্টমেন্টও রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব নির্মাণে কক্সবাজারে বর্তমানে অর্ধশতাধিক ডেভেলপার কোম্পানি কাজ করছে বলে জানা গেছে। দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে কক্সবাজার একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ নিতে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারী ভাবে কোন ধরনের মাষ্টারপ্ল্যান না থাকায় পুরো কক্সবাজারই অপরিকল্পিত নগরায়নে পরিনত হয়েছে। এর পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে কক্সবাজারবাসী ও বিনিয়োগকারীদের দাবী ছিল পুরো কক্সবাজারকে একটি মাষ্টারপ্ল্যান এর আওতায় আনা। এর পর সরকারের পক্ষে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বেসরকারী সংস্থা শেলটেক কনসালটেন্ট যৌথ ভাবে মাষ্টারপ্ল্যান তৈরীর উদ্যোগ নেয়।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর ২০১১ সালের ১১ মে মাষ্টারপ্ল্যানের খসড়া প্রকাশ করে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। ‘প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অব কক্সবাজার টাউন এন্ড সি- বীচ আপ টু টেকনাফ’ নামক প্রকল্পের আওতায় এ খসড়া পরিকল্পনা (মাষ্টারপ্ল্যান) তৈরী করা হয়। সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভা ও আদিনাথ মন্দির এলাকা থেকে শুরু করে কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর উপজেলার একাংশ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত এলাকা, রামু ও উখিয়া উপজেলার একাংশ, টেকনাফ পৌরসভা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাষ্টারপ্ল্যান প্রনয়ণ করা হয়।

এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলার একাংশে হোটেল-মোটেল জোন, খেলার মাঠ, সরকারী অফিস-আদালত, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, পিকনিক স্পট, এডুকেশন জোন, বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক জোন, সিটি পার্ক, ন্যাচারাল পার্ক, প্রাকৃতিক বন সহ ইকেট্যুরিজম, রেল স্টেশন, চাইন্দায় শিল্প এলাকা, ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং জোন, খুরুশকুলে প্রাকৃতিক বন, পার্ক, মৎস্য জোন, ন্যাশনাল পার্ক, মহেশখালীতে পার্ক, ইকোট্যুরিজম, আবাসিক ও বানিজ্যিক এলাকা টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, সেন্টমার্টিনে ইকোট্যুরিজম সহ নানা পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

এ মাষ্টারপ্ল্যান এর খসড়া প্রকাশের দীর্ঘ দুই বছর পর সম্প্রতি তা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন