parbattanews

সৈকতের ছিন্নমূল শিশুরা ‘স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠে’

সৈকতের ছিন্নমূল শিশুরা ‘স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠে’ এসে পড়াশোনা করছে। টাকার অভাবে পড়াশোনা তো দূরে থাক তিনবেলা ঠিকভাবে খাবারও জুটত না তাদের। স্থানীয় কিছু তরুণের উদ্যোগে দিন বদলেছে তাদের জীবন।

প্রতিদিন সৈকতে ঘুরে বেড়ানো লামিয়ার মতো শিশুদের জন্য পাঠশালা চালু করেছেন স্থানীয় কয়েক তরুণ। নাম ‘স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠ’। গত চার বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে ছিন্নমূল শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। এসব শিশুদের কেউ কেউ ডাকেন ‘সাগরপাড়ের ফুল’ বলে।

স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠের পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে বন্ধুরা মিলে সৈকতে ঘুরতে গিয়ে দেখেন, চারদিকে ঘোরাফেরা করছে অনেক শিশু। তাদের কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করছে, আর কেউ ছিল ছিন্নমূল। কারোরই পড়াশোনার সুযোগ ছিল না। অবহেলা আর বঞ্চনা ছিল তাদের নিত্যদিনের ঘটনা।

মোরশেদুল বলেন, শিশুদের বঞ্চনার কথা শুনেই পাঠশালাটি করার উদ্যোগ নেন। শহরের সমিতিপাড়ায় একটি ঝুপড়ি ঘরে যাত্রা শুরু হয় স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠের। এরপর থেকে এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা হয়ে উঠেছে এটি। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

বর্তমানে জেলা পুলিশ লাইনসের পেছনে নতুন বাদশা ঘোনা এলাকায় একটি নতুন ঘরে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে। নতুন বাদশা ঘোনা এলাকার তিশা আক্তার মায়ের সঙ্গে কাজ করত সৈকতে। এখন সে স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী। তিশা বলে, ‘আগে লেখাপড়া করতাম না। এখন বড় ভাইরা পড়ায়। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও হয় আমাদের স্কুলে।’

স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আরিয়ান বলে, ‘আগে স্কুল বা পড়াশোনা কী জানতাম না। বড় ভাইরা এসে বাবা-মাকে বুঝিয়ে স্কুলে নিয়ে এসেছিল। এখন আমি প্রতিদিন স্কুলে আসি।’

স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠের পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে একটি ঝুপড়ি ঘরে হলেও এখন নতুন স্কুলঘর পেয়েছি। এখন হয়তো আরও ভালো পড়াশোনা করতে পারবে শিশুরা।’

বিদ্যাপীঠে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক দুজন। তারা কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আরও ছয়জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক আছেন। প্রতিদিন দুজন করে নিয়মিত পাঠদান করেন।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বপ্নচারী বিদ্যাপীঠের শিক্ষিকা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘ওরা আসলেই খুব অবজ্ঞা ও বঞ্চনার শিকার। একটু শিখিয়ে দিলেই ওরা পারে। তবে পুষ্টিহীনতা ও মেধার সঠিক ব্যবহার না হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে এসব শিশুরা।’

বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পর থেকে কখনো খোলা আকাশের নিচে আবার কখনো কারও বাড়ির বারান্দায় পাঠদান করা হয়েছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে স্থায়ী শ্রেণিকক্ষের স্বপ্ন ছিল। সবার সহযোগিতায় তা বাস্তব রূপ পেয়েছে।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মূখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সৈকতে একঝাক শিশু রয়েছে। যাদের পাশে কেউ দাঁড়াতে আসেনি। যারা এসেছেন তাদের সাধুবাদ জানাতে হবে। ছিন্নমূল শিশুদের সুন্দর শৈশব দিতে স্বপ্নচারীর মতো আরও বিদ্যাপীঠ দরকার।

সূত্র: দৈনিক বাংলা

Exit mobile version