parbattanews

বারবার পাহাড়ী জনগণের উপর মানবিক আঘাত আসলে নাগরিক সমাজ রাজপথে নেমে আসবে, সেই আন্দোলন অহিংস নাও হতে পারে- সৈয়দ আবুল মকসুদ

dru

স্টাফ রিপোর্টার:

বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বার বার পাহাড়ী জনগণের উপর মানবিক আঘাত আসলে নাগরিক সমাজ শুধু মাত্র সংবাদ সম্মেলন কিংবা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বসে থাকবেনা। পাহাড়ী মানুষের পাশে দাঁড়াতে নাগরিক সমাজ রাজপথে নেমে আসবে, সেই আন্দোলন সব সময় অহিংস নাও হতে পারে বলে তিনি সরকারকে সতর্ক করে দেন।

 বিজয় দিবসে রাঙ্গামাটির বগাছড়িতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলী সরেজমিন পরিদর্শনোত্তর নাগরিক প্রতিনিধি দলের উদ্যোগে রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবুল মকসুদ একথা বলেন।

 তিনি আরো বলেন, বগাছড়ির চারা ধ্বংসের প্রথম ঘটনাটি ফৌজদারি অপরাধ কিন্তু পাহাড়ীদের ঘরবাড়ী আগুন দেওয়া ও লুঠপাট করা একটি মানবিক বিপর্যয়। তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশ তৃতীয় পক্ষকে দোষারোপ করছে। এটা সম্পূর্ণ দায়িত্ব অবহেলা। প্রশাসন নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে ততৃীয় পক্ষ নামক একম গায়েবী শক্তির উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলাচ্ছে। তিনি ৭ দিনের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবী জানান।

 বগছড়ির ঘটনা একটি মানবিক বিপর্যয় আখ্যায়িত করে পাহাড়ী মানুষের জানমালের নিরপত্তা প্রদানের দাবী জানিয়ে আযোজিত দীপায়ন খীসার  সঞ্চালনায় ঢাকা রিপোর্টার্স  ইউনিটির গোলটেবিল কক্ষের এই সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক প্রতিনিধি দলের লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য অধ্যাপক অজয় রায়, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো আনিসুর রহমান মল্লিক, লেখক মমতাজ লতিফ এবং  চলচ্চিত্র নির্মাতা রাশেদ রাইন।

 সংবাদ সম্মেলনে সংহতি জানান ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য খুশী কবীর, আইইডি নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মেদ খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস  প্রমুখ।

 লিখিত বক্তব্যে রাজীব মীর বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর রাতে কে বা কারা বাঙালিদের ৯ একর জায়গার আনারস ও সেগুনগাছের চারা কেটে ফেলে। তবে জমির মলিক বলে দাবীদার আফসার মাষ্টার অভিযোগ করেছেন চুক্তি বিরোধী সংগঠন  ইউপিডিএফ এর সদস্যরা রাতের আঁধারে তার বাগানের চারা কেটে দেয়।  লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর সকাল শুরু হয় সেটলার  বাঙালির তাণ্ডব। পুড়ানো হয় শুভেন্দু চাকমা সহ কয়েকটি দোকান।  বাড়িতে বাড়িতে আগুন। একে একে ৩টি পাহাড়ী গ্রাম পুড়ে ছাই’।

 রাজীব মীর লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ‘আদিবাসীরা অভিযোগ করেছেন আক্রমণকারী বাঙালিদের সহায়তা করতে সেনা সস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। পাহাড়ীদের এই অসাহায়ত্ব দেখে নাগরিক প্রতিনিধি দল ব্যথিত, ক্ষুব্দ ও লজ্জিত। লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরা হয়, আক্রমণ থেকে বুদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান কিয়াংও বাদ যায়নি। বৌদ্ধ ভিক্ষুকে পর্যন্ত মারধর করা হয়। চুরি করা হয়েছে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি এবং ভাঙচুর করা হয়েছে অনেকগুলো’।

 প্রবীণ রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘পাহাড়ী জনগণকে পার্বত্য এলাকায় সংখ্যালঘু করতে বঘাছড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সেনা শাসন চলছে, সামরিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। সেনাপ্রশাসনের সহায়তায় পাহাড়ী জনগণকে নির্মূল করার জন্য বার বার এই ধরণের হামলা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের প্যালেস্টাইন। সেখানে বাংলাদেশ ইহুদীদের ন্যায় পাহাড়ীদের উপর জাতিগত আগ্রাসন চালাচ্ছে। পাহাড়ের একটি একটি এলাকা যেন অধিকৃত গাজা ভূখণ্ড’।

 পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য খুশী কবীর বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের এই জাতিগত সহিংসতার মূলে রয়েছে ভূমি সমস্যা। বাঙালি সেটেলারদের সেখানে বসতি স্থাপন করে পাহাড়ীদের ভূমি জবর দখল করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না করে সরকার সেখানে বাঙালি সেটালারদের মাধ্যমে জাতিগত সহিংসতা চালাচ্ছে।

সামরিক বাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জাতিগত সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে অভিযোগ করে খুশী কবীর বলেন, ‘সর্বশেষ বগাছড়ির হামলাও সেই পরিকল্পনার একটি অংশ’। খুশী কবীর আরো বলেন, ‘সরকার এখন বিজিবি ক্যাম্প নির্মাণ করে পাহাড়ের জায়গা অধিগ্রহণ করে পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করছে’।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, ‘এইভাবে বার বার পাহাড়ীদের উপর হামলা করা হবে, আমরা নাগরিক সমাজ পরিদর্শন করতে যাবো, ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলন করবো- এই প্যাটার্ন বদলানোর সময় এসেছে। নাগরিক সমাজকে ভিন্ন পদ্ধতির কথা চিন্তা করতে হবে’। তিনি বলেন, ‘বিজয়ের দিনে পাগাড়ী গ্রামে আগুন জ্বালানো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য লজ্জ্বার বিষয়। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন পাহাড়ে একটি নির্ভেজলার সামরিক শাসন চলছে। এই সামরিক শাসন থেকে পাহাড়কে মুক্তি দিতে হবে’।

 সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষের নিকট ৫ দফা সুপারিশমালা উত্থাপন করা হয়। সুপারিশসমূহ হচ্ছে: “১. আমরা নাগরিক প্রতিনিধি দল অবিলম্বে বগাছড়ির ঘটনার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ  তদন্ত ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। ২. বগাছড়ি-চৌদ্দমাইলের আক্রান্ত পাহাড়ী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও খাদ্য,আশ্রয় ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হোক ৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইন সংশোধনপূর্বক যথাযথভাবে দ্রুত জাতীয় সংসদে পাশ করা হোক এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যক্রম শুরুর লক্ষে ভূমি কমিশনকে কার্যকরী করার উদ্যোগ নেয়া হোক। ৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষে সময়সূচীভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হোক। ৫.মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে এ বিষয়ে আরও মনযোগী হয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবহ ফিরিয়ে এনে বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের হামলার পুনারাবৃত্তি বন্ধ করার কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে”।

Exit mobile version