parbattanews

‘স্ট্রবেরি’ চাষ করে সফল তরুণ উদ্যোক্তা হুমায়ুন

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় একখন্ড জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে হুমায়ুন কবির নামে তরুণ এক উদ্যোক্তা ব্যাপক সাফল্যের দেখা পেয়েছে। গ্রামীণ জনপদে ব্যাতিক্রমী এ ফলের চাষাবাদ নজর কাড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সাধারণ কৃষকদের।

হুমায়ুন পেশায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের আকতার আহমদের ছেলে। ব্যবসার পাশাপাশি নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের চাষ করতে ভালবাসেন তিনি। এই জন্য নিয়েছেন বিভিন্ন ট্রেনিং।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ক্রেলের মাধ্যমে অপর ৩৯ জনের সাথে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ নেয় রাজশাহী আকাফুজি এগ্রিকালচার টেকনোলজি থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রফেসর ডক্টর মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়ী হুমায়ুন তার নিজ এলাকা খুটাখালীতেই স্ট্রবেরি চাষবাদ শুরু করেন।

বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। উপজেলার চকরিয়ায় এ ফলের চাষাবাদ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে।

কম সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ার পাশাপাশি সৌন্দর্য্য ও মানুষের চাহিদা থাকায় তরুণরা স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যে লোকসান দিতে হওয়ায় চকরিয়ার কয়েকজন তরুণ স্ট্রবেরি চাষ বন্ধ করে দিয়েছে।

লোকসানের মাঝেও শখের বসে স্ট্রবেরি চাষ অব্যাহত রেখেছেন চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর হুমায়ুন কবির।

তিনি বলেন, প্রথম বছর আমি ৫০ হাজার টাকা পুজি খাটিয়ে স্ট্রবেরি উৎপাদনের পর আত্মীয় স্বজনদের উপহার দেওয়ার পরও ১ লাখ টাকা মুনাফা পাই। কিন্তু গত বছর অকাল বৃষ্টিতে পানি জমে স্ট্রবেরি ক্ষেত চার-পাঁচ দিন তলিয়ে থাকায় লোকসান গুনতে হয়।

হুমায়ুন আরও বলেন, এ বছর ২ হাজার টাকা দিয়ে ১৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। এই জমিতে লাগিয়েছি ১ হাজার ৩শ’ চারা। রাজশাহীর ট্রেনিং সেন্টার আকাফুজি এ্যগ্রিকালচার টেকনোলজি থেকে প্রতিটি চারা ২২ টাকা করে ক্রয় করি। শ্রমিক, ঘেরা-ভেড়া, সার-সেচসহ বিভিন্ন খাতে ১৩ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। চারার বয়স এখন ৫৫দিন। এ সময়ে ফুল-ফল এসেছে। দু’একটি করে পাকতে শুরু করেছে। পক্ষকাল পর পুরোদমে ফল পাকবে। প্রতিদিন এই অল্প জমির ক্ষেত থেকে ৫ থেকে ১০ কেজি ফল উঠানো যাবে। টানা দুই মাস ফল তোলা যাবে গাছ থেকে। এই ফল স্থানীয় ও কক্সবাজার শহরে বিক্রি করা হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রতি কেজি স্ট্রবেরি পাইকারী দামে বিক্রি করি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। যারা আমার কাছ থেকে কিনে নেয় তারা খুচরা হিসেবে বিক্রি করে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। শুরু থেকে এ বছর পর্যন্ত শখের বসে করলেও আগামী বছর অধিক জমি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমি এবার কেমারোসা প্রজাতির স্ট্রবেরি চাষ করেছি। আগামী মৌসুমে কয়েকটি প্রজাতির চাষ একসাথে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ক্রেলের মাধ্যমে ২০১৫ সালের বেকার পাহাড় ঘেষা বাসিন্দাদের মধ্যে ৪০ জন তরুণ প্রশিক্ষণ নিলেও এ বছর পুরো কক্সবাজারে মাত্র দুইজন চাষ করেছেন। চকরিয়ার খুটাখালীতে হুমায়ুন ও কক্সবাজারের ইনানীতে আরেকজন।

প্রথমে কাকারা ও লক্ষ্যারচরে দুইজন চাষ করলেও এবছর তারা চাষ থেকে বিরত আছেন। মূলত তামাকের আগ্রাসনে জমি পাওয়া দুষ্পাপ্য হওয়ায় স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ফল-ফুলের চাষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে আগ্রহীদের।

তামাক চাষীরা প্রতি কানি জমি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বর্গা নেয়ায় ফল ও সবজি চাষীদের পক্ষে ওই পরিমাণ টাকায় জমি নেয়া সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, কাঁচা গাছসহ ফুল-ফলের রঙ্গও সবুজ। পাকা ফলের কিছু গাঢ় হলুদ হলেও বেশির ভাগ লাল রংয়ের আভা ছড়ায়। টক-মিষ্টির মিশ্রণে রসালো ফলটি নজর কাড়ে সবার। তবে দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে থাকায় অনেকে খেতে পারে না।

জাপান-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে শীত বা নাতিশীতুষ্ণ এলাকায় এ ফলের যেমন চাহিদা তেমনি চাষাবাদও হয় বেশি। তবে,স্ট্রবেরী ফল খেকো হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে আফ্রিকার একটি দেশ উগান্ডা।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, স্ট্রবেরি একটি দুষ্পাপ্য ফল। এ অঞ্চলে স্ট্রবেরি খুবই কম চাষাবাদ হয়। কিন্তু এই ফলে রয়েছে ব্যাপক উপকারিতা। মানুষের রোগের ক্ষেত্রে চমৎকার উপকারিতা পেয়ে থাকেন এ ফলে। এতে রয়েছে ভিটামিন-কার্বহাইড্রেট, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন মিনারেল। এ ফল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ কাছে স্ট্রবেরি চাষের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে কিনা জানি না। কোন চাষ পাঁচ শতাংশের নিচে হলে আমাদের রেকর্ডে থাকে না। কোন চাষী নিজ থেকে যোগাযোগ করলেই জানতে পারি এবং কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করি।

Exit mobile version