Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িকতা, শান্তি চুক্তি বিরোধী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত- ড. ইফতেখারুজ্জামান

IMG_0255

স্টাফ রিপোর্টার :

পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক ও শান্তি চুক্তি বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ আইনসম্মত নয়, তাতে সংবিধানের প্রতি কোন শ্রদ্ধাশীলতা নাই, পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রতি কোন সম্মান নেই। এটা অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িকতা, শান্তি চুক্তি বিরোধী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত। এর জন্য আমরা বিব্রত ও লজ্জাবোধ করছি। সরকারকে বিব্রত করতে কোন একটি মহল পেছনে থেকে এটা করেছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল কক্ষে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি বিশেষ নির্দেশনার পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন-শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।

কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সিএইচটি কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ। প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপন ও সভার সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

ড. ইফতেখারুজ্জামান ইউএনডিপির কার্যক্রম মনিটারিং এর বিষয়ে বলেন, ‘শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন যারা চান না তারাই এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বেসরকারি সংস্থাদের কার্যক্রম তদারকির জন্য এনজিও ব্যুরো থাকার পরেও বিশেষভাবে এটি তদারকির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে পাহাড়ে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও উন্নয়নের নামে সেনাবাহিনীর যে অপারেশন উত্তরণ চলছে সেটিরও জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা দেশের জনগণ দেখতে চায়। এই তদারকির ব্যবস্থা না করলে এই সিদ্ধান্ত একপেশে ও অগ্রহণযোগ্য হবে’।

তিনি বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি ভালো কথা। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে বিজিবির কাজ দেশের সীমানা সুরক্ষা করা। সেটা বাদ দিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির নামে আদিবাসীদের জায়গা জমি দখল করে হেডকোয়ার্টার বানানো উচিত হবেনা। সেনাবাহিনীর কাজ বিজিবিকে দিয়ে  করানোর চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এই কাজ শুভ ফল বয়ে আনবে না। তিনি আরো বলেন বিদেশী নাগরিকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণে  যেতে অনুমতি লাগবে আবার যে কেউ সেখানকার আদিবাসীদের সাথে দেখা করতে চাইলে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে সাথে রাখতে হবে এইরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ নির্বুদ্ধিতা ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার পরিচয় দেয়’।

তিনি সিএইচটি কমিশনের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, ‘সংবিধান স্বীকৃত সংগঠন ছাড়া যদি কোন সংগঠন ‘কমিশন’ শব্দটি ব্যবহার না করতে পারে সে ক্ষেত্রে তা হতে পারে’।

বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে সরকারের এই সার্কুলারের মধ্য দিয়ে সংবিধানের অনেকগুলো ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। এটা দ্বারা সংবিধানের ৭,২৭,২৮ ধারা স্পষ্ট লঙ্ঘিত হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘন করার এখতিয়ার রাস্ট্র কোন মন্ত্রণালেয়র হাতে দেয় নি। এটা মূলত গায়ের জোরে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে পারতো। কিন্তু তা না করে ঘরের ভিতর বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে পার্বত্য চট্রগ্রামের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে’।

সিএইসটি কমিশনের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের এ অধিকার স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কে দিয়েছে? এতদিন পর নাম পরিবর্তনের প্রসঙ্গ কেন তোলা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকার আছে দেশের বাইরে থেকে আসুক বা দেশের ভিতর থেকে কেউ আসুক সে বিষয়ে নজরদারী রাখা। তার মানে তো এই নয় যে, একজন বাঙালী পাহাড়ী কাউকে বিয়ে করতে হলে, বিয়ের বরযাত্রী নিয়ে পাহাড়ে যেতে হলে প্রশাসনের অনুমতি, আইন-শৃঙ্কলা বাহিনীর উপস্থিতি লাগবে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, তাহলে কি বাসর ঘরে আইন-শৃঙ্কলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকতে হবে? পাহাড়ীদের কি কোন বিদেশী মেহমান থাকতে পারে না’? এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তর ফলে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য যে বিদেশী সংস্থাগুলো কাজ করছে তা আর করতে পারবে না। এতে পাহাড়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে’। এসময় তিনি সরকারকে অতিদ্রুত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন‌্য আহবান জানান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৭ বছরে মাত্র ১৭% বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিটা বাস্তবায়ন করতে হয়তো আরো ১০০ বছর লেগে যাবে। আজ যদি পার্বত্য শান্তি চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হতো তাহলে এই সমস্যাগুলো আর হতো না। তিনি আবারো বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সরকার, দেশের জনগণ এবং পার্বত্যবাসী সকলের জন্য অকল্যাণকর’। এটা নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে ভেবে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা জানি জেলে কারোর সাথে দেখা করতে হলে প্রশাসনের উপস্থিতিতে করতে হয়। তাহলে আমার প্রশ্ন, পার্বত্য চট্রগ্রাম কি তাহলে কারাগার যে এখানে বাইরের কেউ যেতে হলে অনুমতি নিতে হবে’।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শান্তি চুক্তি করার সময় দু’পক্ষ এক পক্ষ হয়ে চুক্তি সম্পাদন করলেন, আর এখন তাকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিলেন? এই পদক্ষেপসমূহকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অখণ্ডতার জন্য অশনী সঙ্কেত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পংকজ ভট্টাচার্য আরো বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাঙালি যে একটি উপনেবেশবাদী জাতি তা প্রমাণিত হয়েছে। বাঙালিরা বর্ণবাদী, ইহুদী, জার্মানির মতো। এর মধ্য দিয়ে জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ্যে রূপ লাভ করেছে। পাহাড়ে সেনা শাসনের বিষয়টি এর মধ্য দিয়ে জানিয়ে দেয়া হলো। এটাকে বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িকতা’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দা বিভাগের সাম্প্রদায়িক রিপোর্ট দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিরাপত্তার চশমায় দেখবেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা’। রাজনৈতিক উপায়েই দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি দাবি জানান।

সিএইচটি কমিশনের নাম পরিবর্তনের অনুরোধের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এই কমিশনের সদস্য ব্যরিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই সংবিধান পরিপন্থী। তাছাড়া কোন একটি সংগঠনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আছে কি? তিনি বলেন পাহাড়ী বন্ধুদের সাথে পার্বত্য অঞ্চলে দেখা করতে গেলে আলাপ করতে গেলে প্রশাসন, সেনাবাহিনী বা বিজিবি থাকতে হবে এই ধরণের সিদ্ধান্ত সত্যিই হাস্যকর’।

সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, ‘রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যার কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই রকম সাম্প্রদায়িক একটি নির্দেশনা দিয়েছে।  বলপ্রয়োগ নয়, রাজনৈতিকভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধথান করতে হবে। এই রাষ্ট্র শুধূ বাঙ্গালির রাষ্ট্র নয়, এই রাষ্ট্র দেশের আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সকলের’।

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়েই এই বাংলাদেশের জন্ম। কিন্তু আজ রাষ্ট্র এই দেশেরই নাগরিক আদিবাসীদের প্রতি সাম্প্রদায়িক আচরণ করছে। তিনি স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে নির্লজ্জ সিদ্ধান্ত ও পার্বত্য চুক্তির সাথে বিরোধাত্মক’ বলে অভিহিত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করাই রাষ্ট্রের কাজ। কিন্তু আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত দেশের মানবাধিকারকেই লঙ্ঘন করছে। এই  সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলে তা টিকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন’।

মুক্ত অলোচনায় আরো অংশ নেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল রোকন, এ্যাডভোকেট নীলুফার বানু, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ওয়াসিউর রহমান তন্ময় , নারী পক্ষের কামরুন নাহার  প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন