Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

স্বাধীনতা উত্তর পার্বত্যাঞ্চলে বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের বীরত্বগাঁথা

4677e693bf93b

♦ আবছার আহমেদ

বিএসএস-১৭৯১ ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান ঢাকা জেলার ধামরাই থানার মাকডুখালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুস সোবাহান। ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান ১৮ জুন ১৯৭৮ সালে ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান কমিশন লাভ করার পর ২৪ ই বেংগলে যোগদান করেন এবং ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান তৎকালীন সময়ে প্রতিটি অপারেশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। একটি গোপন অবস্থানের উপর হানা পরিচালনায় অসামান্য সাফল্যের জন্য পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে তিনি বীর বিক্রম সম্মানে ভূষিত হন।

১৮ মার্চ ১৯৮২ সালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও চরম সাহসিকতার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক প্রতিকুল অবস্থার মোকাবেলা করেন। তার দুঃসাহসিক নেতৃত্ব ও স্থির মস্তিস্কের সুষ্ঠু পরিকল্পনার জন্য একটি নিজস্ব টহল দল দুর্ভেদ্য অঞ্চলে প্রতিপক্ষ দলকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে নিজেদের জান মালকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন।

২৪ জনের একটি টহল দল নিয়ে ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা রুমা উপজেলার পাকওয়াই পাড়া এলাকায় অজানা শত্রুর ক্যাম্পের দিকে যখন স্বীয় সেকশনকে পেছনে রেখে একাকী একটি গাছের গুড়ির পেছনে আশ্রয় নিয়ে বামদিকে উঁকি দেন। ঠিক তখনই আনুমানিক ৯/১০ গজ দূরে আকস্মিকভাবে জলপাই রং এর ইউনিফর্ম পরিহিত এসএলআর অস্ত্রধারী এক সেন্ট্রীর চোখাচোখি হয়।

ঐ অস্ত্রধারী তৎক্ষণাৎ রাইফেল নিয়ে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবর রহমানকে গুলিবিদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান বিদ্যুৎ গতিতে নিজ এসএমজির দ্বারা উক্ত রাইফেল ম্যানকে গুলিবিদ্ধ করে ধরাশায়ী করেন।

এমতাবস্থায় ঐ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর সন্নিকটে অবস্থিত শেল্টার থেকে ১২/১৩ জন তাদের এলএমজি, এসএমজি ও এসএলআর দিয়ে অনবরত ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের দিকে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। ঐ সময় ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান একটি গাছের গুড়ির আড়ালে থেকে একটি এইচই-৩৬ হ্যান্ড গ্রেনেড ৯/১০ গজ দূরে ঐ সেন্টারের মধ্যে ছুুুুঁড়ে মারেন। ফলে বিকট শব্দ করে ঐ গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। এতে শেল্টারের ভিতরের সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী দল হতাহত হয় এবং ছত্রভংগ হয়ে এদিক ওদিক দৌঁড়ে পালাতে আরম্ভ করে।

ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান তৎক্ষণাৎ নিজের পেছনের সেকশনকে ফায়ার শুরু করার আদেশ দেন। এতে বিপক্ষ দল থেকে কেউ কেউ নিজেদেরকে বিডিআর বলে চিৎকার করতে থাকে এবং উপত্যকার মধ্যবর্তী জায়গা থেকে তাদের অফিসার চিৎকার করে বলে উঠে “থামুন, থামুন”।

ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান তখন তাদের উদ্দেশ্য করে সবাইকে অস্ত্র মাটিতে রেখে উপত্যকার মধ্যবর্তী স্থানে এসে জমায়েত হতে বলেন। প্রতিপক্ষ সেইমত আদেশ পালন করে। ঐ পর্যায়ে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানও নিজ দলের গুলি বর্ষন বন্ধ করেন। পরে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিপক্ষ ভারতীয় নিয়মিত বাহিনীর সপ্তম পাড়ওয়ালী ব্যাটলিয়নের একটি শক্তিশালী পেট্রোল। তাদের সংখ্যা অফিসার-২, জেসিও-২ এবং ৬৬ জন সৈনিক। তাদের দলে ১ নিহত এবং ৪ আহত হয়। অপরপাশে নিজ দলের কোন রূপ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

পরবর্তী পর্যায়ে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান প্রতিপক্ষের নিকট প্রাথমিক চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় নিজ মেডিক্যাল সহকারীর সাহায্যে বিপক্ষের আহত সৈনিকদের ফাষ্ট এইড প্রদান করেন যাতে চারটি মূল্যবান প্রাণ রক্ষা পায়।

বিএসএস-১৭৯১ ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসীম সাহসিকতার প্রমাণ দিয়ে শুধুমাত্র প্রতিপক্ষকেই পরাস্ত এবং স্বীয় দলের জানমালকেই হেফাজত করেননি, অপর দিকে ক্ষণস্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরপরই স্বপ্রণোদিত হয়ে বিপর্যস্ত প্রতিপক্ষের আহত সৈনিকদের সেবা করে চারটি মৃত্যু পথযাত্রী সৈনিকের প্রাণ রক্ষা করেন যা এক বীর ও মহান হৃদয়ের পরিচায়ক।

দেশপ্রেম ও কর্তব্যের প্রতি অসীম আত্মত্যাগের অভূতপূর্ব নিদর্শনের জন্য ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন