parbattanews

সড়ক গিলে খাচ্ছে এনজিও ও রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গার ভারে ন্যুয়ে পড়া উখিয়া-টেকনাফ সড়কের কোটবাজার, উখিয়া, থাইংখালী, বালুখালী, পালংখালী, হ্নীলা, লেদা, বাহারছড়া শামলাপুর, টেকনাফ বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের কারণে প্রতিদিন আটকে যাচ্ছে মালবাহী গাড়ি, অপরদিকে অনিয়ন্ত্রিত এনজিওর গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কের বেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে বাড়ছে জনদূর্ভোগ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত করা অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক, বাস, প্রাইভেট গাড়িসহ সকল ধরণের যানবাহন বেড়েছে অত্যাধিক হারে। যার কারণে দুই বছর ধরে সড়কে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রী ও পর্যটকরা।
সম্প্রতি মরিচ্যা, কোটবাজার, উখিয়া, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালী, বাহারছড়া শামলাপুর পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং, দোকানপাট ও গ্যারেজ। লোকাল বাসও দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তোলে। ফলে যানজটের দীর্ঘ লাইন হয়। উখিয়া, কোটবাজার, কুতুপালং শুধু নয়, বেশির ভাগ পয়েন্টের অবস্থাই ভালো নয়। এসব পয়েন্টে বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে।

উখিয়া কুতুপালংয়ের সমাজসেবক তরুন হেলাল উদ্দিন বলেন, ছুটির দিন ও কর্মদিবসকে সামনে রেখে অবস্থার আরো অবনতি হয়। বিশেষ করে মরিচ্যা থেকে পালংখালী পর্যন্ত সাতটি পয়েন্টে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে। এই সাতটি পয়েন্ট হলো মরিচ্যা, কোটবাজার, উখিয়া, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালী। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা যানজটের কারণে যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেননা।

এ ছাড়া দখলদারদের কারণে রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নানা ধরনের টং দোকান, ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ, রাস্তার ওপর কাঁচা বাজার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে গড়ে ওঠায় যানবাহনগুলো দ্রুত চলাচল করতে পারে না।

উখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মসজিদ মার্কেটের সড়কের ওপর সি লাইন, কক্স লাইন অবৈধ বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী তোলায় যানজট তৈরি করে। এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সড়কের প্রবেশমূখে বালুখালী এলাকায় বড় বড় গর্তের কারণে যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়রা খানা-খন্দকে বেহাল অবস্থায় থাকা উখিয়া টেকনাফের সড়কটি দ্রুত সংস্কার ও চার লেনে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ আরকান (শহীদ এটিএম জাফর) সড়কে যানবাহনের সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরার কারণে দুর্ঘটনাও নিত্যনৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভারী যান চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সুত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া ৭ লক্ষাধিকসহ ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত এনজিও গুলোর ব্যবহৃত গাড়ি সংখ্যা বেড়েছে আশংকাজনকভাবে। এছাড়ও যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টমটম, ভটভটি, ডাম্পার, চাঁদের গাড়ি, অটোরিক্সা, ব্যাটারীচালিত রিক্সাসহ ৫ হাজারের অধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এ সড়কে দিনরাত চলাচল করছে। যে কারণে দুর্ঘটনাবৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনকভাবে। এছাড়া প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বিভিন্ন ধরনের বাঁশবোঝাই ট্রাক উল্টে গিয়ে দীর্ঘ যানজটে পোহাতে হচ্ছে। যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে খাদে পড়ে উল্টে যায়।

স্থানীয়রা বলেছেন, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ আরকান সড়কের মাত্রাতিরিক্ত হারে যানবাহন সংখ্যা বেড়েছে। যানবাহনের তুলনায় সড়কের উন্নয়ন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এনজিও সংস্থার ব্যবহৃত গাড়ির পাশাপাশি ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে। তাই এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে ভারী যান চলাচলে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দিতে হবে। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা না হলে এ দুর্ঘটনা এবং যানজট রোধ করা সম্ভব হবে না।

এছাড়া সড়কের যে সমস্ত খানা-খন্দক সৃষ্টি হয়েছে তা মেরামত করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এভাবে তো চলতে পারেনা একটি জনবহুল বিশাল এলাকা। রোহিঙ্গাদের মানবতা দেখাতে যদি স্থানীয়দের রোহিঙ্গা হয়ে যেতে হয় তাহলে কি আর করার। একারণে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে ৪/৫ ঘন্টা লাগতেছে। যা আগে এক/দেড় ঘন্টায় টেকনাফ যাওয়া যেত। উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় সচেতন মানুষ দ্রুত এই সড়কের কাজ সংস্কারের দাবি জানান।

Exit mobile version