parbattanews

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ সহোদর পরিবারে চলছে শোকের মাতম

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া হতে মালুমঘাট এসে বসতি গড়ার পর সুরেশ চন্দ্র শীল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে সেবা দিতেন। তার ছেলেরা কুতুবদিয়ায় থেকে বাবা-মায়ের কাছে আসা যাওয়া করতো। গত দশদিন আগে ডা. সুরেশ চন্দ্র শীল পরলোক গমন করেন।

গত মঙ্গলবার বাবা’র শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মমতে সুরেশ চন্দ্র শীলের সাত ছেলে ও এক মেয়ে ভোরবেলা ক্ষৌর কর্ম (মাথার চুল ফেলে দেওয়া) সম্পন্ন করতে হাসিনাপাড়ার তিন রাস্তার মন্দিরে যান। মন্দির থেকে ক্ষৌরকর্ম শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওইদিন ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজার সংলগ্ন নার্সারি এলাকায় দ্রুতগামী একটি পিকআপ গাড়ির চাপায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ সহোদর নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডস্থ হাসিনা পাড়া এলাকার মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের ছেলে ডা. অনুপম শীল (৪৬), তার ভাই নিরুপম শীল (৪০), দীপক শীল (৩৫), চম্পক শীল (৩০)।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তাদের ভাই রক্তিম শীল (৩৬)। এসময় দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন নিহতদের আরো তিন ভাই-বোন। তৎমধ্যে একজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও দুইজন মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রীষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ সহোদরের পরিবারে তিনদিন ধরে চলছে শোকের মাতম।

সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকার বহু মানুষ ভিড় করেছেন শোকাস্ত শীল পরিবারের বাড়িতে। নিহতদের গর্ভধারিণী মা মানু বালা শীল নাড়ি ছেড়া বুকের ধন হারিয়ে শোকে পাথর। তাদের স্ত্রী-সন্তানেরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তিনদিন ধরে তাদের কান্না থামছেই না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে সকালে হাসিনা পাড়া গ্রামে প্রবেশ করতে নিহত ৫ সহোদর তার স্বজনদের আহাজারি চোখে পড়ে। যেন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের ঘটনা। নিহতদের স্ত্রী ও সন্তান, কেউ বা তাদের আত্মীয় এখনো বিলাপ করছেন। স্বামী-সন্তান হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় সুরেশ চন্দ্র শীলের স্ত্রী মানু বালা শীল। এছাড়াও নিহত ৫ সহোদরের ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা’র ছবি দেখে দেখে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছে। স্থানীয় প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লোকজনের পাশাপাশি মুসলিমরাও এসেছেন নিহত ৫ সহোদর মা ও তাদের পরিবারের স্ত্রী-সন্তানদের শান্তনা দিতে। নিহতদের ‘মা’ মানু বালা কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলছেন না। তার চোখে পানি নেই। তিনি এতটাই শোকাহত যে কান্না করতেও যেন পারছেন না। পুরো পরিবার যেন শোকের মাতম। কর্মক্ষম সদস্যদের হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে পরিবারগুলো। কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মহাসংকটে পড়েছে শীল পরিবারটি।

নিহত অনুপম শীলের স্ত্রী পপি শীল কান্নায় বিলাপ করতে করতে বলেন, শ্বশুরের শ্রাদ্ধের আগে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেলো। ছেলে-মেয়েরা এখন পথে বসবে। কীভাবে চলব! কীভাবে তাদের পড়াশোনা করাব। কোথায় যাব, কার কাছে যাব বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় এলাকার অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

ইতিমধ্যে নিহত ৫ সহোদরের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে মানবিক সহায়তা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসক।

ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য সরকারি সহায়তার দাবি জানাচ্ছি। নিহতদের পুরো পরিবারটি এখন নিঃস্ব। সড়কে যে ৫ সহোদর মারা গেল তাদের পরিবারগুলো বেঁচে থাকার ও সচ্ছলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই।

Exit mobile version