হাইব্রিড মাছের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছ

deshi fish

আরিফুল হাসনাত:

আমাদের মাছে ভাতে বাঙালি বলা হলেও বর্তমানে মূলত এর কোন অস্তিত্বই খোজে পাওয়া যাবে না। এক সময়ে আমাদের গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ থাকত প্রায় প্রত্যেকটি ঘরে। কারও কারও নিজস্ব পুকুর না থাকলেও তারা মাছের যোগান পেত খাল, বিল, ডোবা, জলাশয় প্রভৃতি স্থান হতে। আর সে কারনেই আমাদের জাতীয় খাবার হিসেবে মাছ ও ভাত স্বীকৃতি লাভ করেছে। কালের পরিক্রমায় আজ ধান ও মাছে এসেছে আমূল পরিবর্তন। জনসংখ্যা বৃদ্বির সাথে সাথে অন্যান্য উপাদানের মত মাছের চাহিদাও ব্যাপক বৃদ্বি পেয়েছে। আর এই ব্যাপক চাহিদা পূরণ করতে পুকুর, দিঘি, জলাশয় প্রভৃতি স্থানে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত দেশীয় মাছের জায়গায় কৃত্রিমভাবে হাইব্রিড পোনার মাধ্যমে মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়াও মাছের ভাল উৎপাদন, বৃদ্ধি ও রোগ নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক পদার্থ, বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত খাদ্য,  চুন ইত্যাদি। আর এসব উপাদানে চাষকৃত মাছ দ্রুত বেড়ে উঠলেও এসব পদার্থের কারনে মাটি ও পানি উভয়ই স্বাভাবিকভাবে উৎপাদনক্ষমতা ও গুণাগুণ ক্রমে হারিয়ে ফেলছে। মন্ত্রনালয়ের এক তথ্যমতে, প্রতি বছর আমাদের দেশে মাছের চাহিদা ৩২ দশমিক ৭২১ লাখ মেট্রিকটন প্রায়।
মাত্র কয়েকবছর আগেও আমাদের নদী, দিঘি, পুকুর, ডোবা, জলাশয়, খাল-বিল প্রভৃতি স্থানে প্রায় শতোর্ধ প্রজাতির মাছ ছিল বলে ধারনা পাওয়া যায়। যার মধ্যে কৈ, মাগুর, বোয়াল, শিং, টাকি, পুটি, চামিলা সহ আরও নানা জাতের ছোট বড় অসংখ্য মাছ। এছাড়াও দেশীয় মাছ রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, শোল, কার্পো, তালাপিয়া মাছ। এর মধ্যে কিছু কিছু মাছ এখনও প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া গেলেও অধিকাংশ মাছই বিলুপ্ত প্রায়। রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, শোল, কার্পো, তালাপিয়া, কৈ, মাগুর হাইব্রিড পোনার মাধ্যমে চাষ করলেও স্বাধ ও পুষ্টি আগের সেই মাছের তুলনায় অতি নগন্য। দেশি মাছ কমে যাওয়ার কারন হিসেবে সবার মতামত, দেশি মাছের উৎপাদন স্থলে বেশি উৎপাদনের আশায় এখন সবাই হাইব্রিড পোনার মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। এছাড়াও এসব উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক ঔষধ, চুন,কৃত্রিম খাবার ইত্যাদি। আর এর ফলে মাটি ও পানি নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে উন্মোক্ত নদী, নালা, খাল, বিল, জলাশয় সহ প্রভৃতি স্থান হতে অনিয়ন্ত্রিত ও ক্ষতিকর উপায়ে মাছ আহরণ  করা হচ্ছে।
ব্যাবহার করা হচ্ছে কারেন্টজাল, সাধারণ জাল এবং আধুনিক ঔষধ। যার মাধ্যমে ক্রমে মাছ উৎপাদন ক্ষমতা ও মাছশূন্য হয়ে পড়ছে এসব স্থানগুলো। চট্টগ্রামের দেশী মাছ উৎপাদন ও আহরনের প্রধান নদী কর্ণফুলী ও হালদা মাছ উৎপাদন ও আহরনে প্রধান দুটি উৎস ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ তা মাছশূণ্য হয়ে পড়েছে। এর বড় কারন হিসেবে উঠে এসেছে নদীর পাশে মিল-কারখানা গুলোর অপরিশোধিত ও বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশন, কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ নিধন ও মশারী জাতীয় জাল ব্যবহার করে পোনা নিধন ইত্যাদি। এরপর আশে ডোবা, জলাশয়, বিল প্রভৃতি ছোটখাট মাছ উৎপাদনের উৎসগুলোর কথা। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হারানোর পেছনেও যথেষ্ট কারণ পরিলক্ষিত হয়। এসব ডোবা ও জলাশয় সাধারণত বিল বা জমিকে ঘিরেই গড়ে ওঠে। আথচ আবার সেই বিলের কারনেই এগুলো মাছ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। জমীতে বিষক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগের ফলে পানি বিষাক্ত হচ্ছে আর ব্যহত হচ্ছে মাছের উৎপাদন ও বসবাস। অতএব দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি বা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সকলকে এখনই এগিয়ে আসা উচিৎ। অন্যথায় আগামী কয়েকবছরে দেশীয় মাছের কোনরূপ চিহ্ন খোজে পাবেনা আগামী প্রজন্ম।

  ♦ রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম থেকে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন