parbattanews

হিংস্র হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

মা ও দুই শিশু কন্যাকে অপহরণের অভিযোগ তুলে উখিয়ায় রোহিঙ্গারা বৃহস্পতিবার দুপুরে জার্মান সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় তিন জার্মান সাংবাদিকসহ চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

হামলায় তাদের ব্যবহৃত গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লুটপাট করা হয় তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ক্যামেরাসহ সবকিছু। সেনা সদস্যরা দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে ক্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহলৎস রোহিঙ্গা শিবিরে জার্মান সাংবাদিকদের উপর হামলার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জার্মান সাংবাদিকরা এখন নিরাপদে আছেন।” আহতরা হলেন জার্মান সংবাদিক ইয়োচো লিওলি (৪৪), এস্ট্যাটিউ এপল (৪৯) ও গ্রান্ডস স্ট্যাফু (৬১)। তাদের বাংলাদেশি দোভাষী মো. সিহাবউদ্দিন (৪১) ও গাড়ির চালক নবীউল আলম (৩০)। পুলিশ সদস্য জাকির হোসেন (৩৩)।

এদিকে, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানিয়েছেন, ‘‘জার্মানির সাংবাদিক দলটি বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের প্রয়োজনীয় শুটিং শেষ করে ফেরার সময় ৮ ও ৯ বছরের দুটি শিশু ও তাদের মাকে সঙ্গে নিয়ে পাশের বাজারে যান। সেখানে তাঁরা শিশুদের জামা-কাপড়, খাবার ও খেলনা কিনে দেন। এরপর মাসহ শিশু দু’টিকে ক্যাম্পে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই শিশু দু’টির মায়ের সন্দেহ হয় তাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এরপর তিনি চিৎকার দেন। তখন আশপাশ থেকে শত শত রোহিঙ্গা সেখানে হাজির হয়ে জার্মান দলটির উপর হামলা চালায়। পুলিশ ছাড়াও সেনা সদস্যরা দ্রুত সেখানে হাজির হয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পাশের হাসপাতালে ভর্তি করেন।”

জার্মান সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়ীর চালক কক্সবাজার টেকপাড়া গ্রামের নবী আলম (৩০) স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে কুতুপালং ৪ এক্সটেনশন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ছবি ধারণ করেন সাংবাদিকরা। এরপর সকাল পৌনে ১১টার দিকে লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে দুটি শিশু ও মার সাক্ষাৎকার নেন। সবশেষে শিশু বুশেরা বেগম (৯), কাচুনামা আকতার (৮) ও তাদের মা হাসিনা আকতারকে (৩৫) সঙ্গে নিয়ে তাঁরা লম্বাশিয়া বাজারে যান। এসময় জার্মানির সাংবাদিকরা তাদেরকে চাহিদামত ভালো কাপড় ও খাবার কিনে দেওয়ার পর ক্যাম্পে পৌছে দেয়ার জন্য গাড়িতে তোলেন। সেখান থেকে রওনা দিলে হঠাৎ করেই হাসিনা আকতার তাদের অপহরণ করা হচ্ছে বলে চিৎকার শুরু করেন।

নবী আলম আরও বলেন, হাসিনার চিৎকারে রোহিঙ্গারা দা, কিরিচ, লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই সময় রোহিঙ্গাদের এলোপাতাড়ি মারধরে তিন জার্মান সাংবাদিক আহত হন। তাঁরা জার্মানির সরকারি প্রচারমাধ্যম এআরডির সাংবাদিক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে৷

তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য জাকির হোসাইন আহত হয়েছেন। রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের ক্যামেরা, সাউন্ড রেকর্ডার, লাইসেন্স, মানিব্যাগ, তিনটি লাগেজ, পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি লুটপাট করে তাঁদের জিম্মি করে রেখেছিন।

পরে খবর পেয়ে সেনা সদস্য ও পুলিশ লম্বাশিয়া বাজারে রোহিঙ্গাদের ধাওয়া করে জার্মান সাংবাদিকদের উদ্ধার করে। এঘটনায় সাংবাদিকদের বাংলাদেশি দোভাষী সিহাব উদ্দিন (৩৫) বাদি হয়ে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার সূত্র ধরে এ ঘটনায়

১১ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। হামলার শিকার জার্মানের ঐ চ্যানেলটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন বাদী হয়ে প্রায় চার শতাধিক রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হামলার শিকার শিহাব উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় কোনো রোহিঙ্গার নাম উল্লেখ করা যায়নি। তবে চার শতাধিক অজ্ঞাত রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ান ফিল্ড হসপিটালে চিকিৎসা শেষে তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন। পুলিশ মামলাটি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছে।

আটকদের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক জিয়াবুল হক, জামাল হোসেন, নুরুল হাকিম, সিরাজ মিয়া, খায়রুল আমিন, মো. ইদ্রিস, ছৈয়দ আলম, রফিক, শাহজান ও ফরিদ আলম।

এ দিকে উখিয়া থানা চত্বরেই স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুই রোহিঙ্গা শিশুর মা হাসিনা আকতার। ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে ওই রোহিঙ্গা নারী বলেন, তাদেরকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে জার্মান সাংবাদিকরা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তারা চিৎকার দিলে রোহিঙ্গারা তাদের উদ্ধার করে। তবে বাংলাদেশি দোভাষী সিহাব উদ্দিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, জার্মান সাংবাদিকদের লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পুলিশের একটি টিম ক্যাম্পে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, জার্মানির দেয়া অর্থ সহায়তায় তারা খেতে পারছেন। যারা খাবারের যোগান দিচ্ছে তাদের উপর হামলা করে ঠিক কাজটি করেননি তারা। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে যা লুট করা হয়েছে তা ফিরিয়ে না দিলে জার্মানি অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। তাহলে তাদেরই সমস্যা হবে। ওসি বলেন, এভাবে বুঝিয়ে মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

Exit mobile version