parbattanews

হুমকির মুখে কক্সবাজারের প্রাণীবৈচিত্র

কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার :

নির্বিচারে পোনা নিধন, নিষিদ্ধ মৌসুমে মৎস্য আহরণ, মা মাছ নিধন ও বিদেশি ট্রলিংগুলো সমুদ্রের এক হাজার কিলোমিটারের মধ্যে মৎস্য আহরণের ফলে ধ্বংসের পথে সামুদ্রিক প্রাণী বৈচিত্র। এছাড়া সমুদ্র দূষণ, নদী দখল, জলাশয় ভরাট ও উপকূলীয় প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের আর লবণ মাঠ তৈরির ফলেও উপকূলীয় প্রাণী বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের এক সময়ের প্রাণপ্রবাহ খ্যাত বাঁকখালী নদীর চারপাশ অবৈধ দখলে চলে গেছে। নদীর উত্তর নুনিয়াছড়াস্থ বিশাল প্যারাবন কেটে গড়ে তোলা হয়েছে শুটকী ফ্যাক্টরী।

স্থানীয় চা দোকান ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন (৩২) জানান, “আঁরা পোয়াহালে পেরাত ঢুকি মাছ ধইত্থাম। ইছা মাছ, কিঁয়াড়া, বাডা মাছ অদ্দ বউত মাছ পাইতাম। এহন পেরা হাডি দইজ্জা অদ্দ দহল গরি পেলাইয়্যে (আমরা ছোট বেলা প্যারাবনে ঢুকে মাছ ধরতাম। চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, বাটা মাছ সহ বহু মাছ পেতাম। এখন প্যারাবন কেটে সাগরসহ দখল করে ফেলেছে)।”

পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মগনামা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলো একসময় প্রাণী বৈচিত্রে ভরপুর ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ওই স্থান এখন সমুদ্রে গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর যা রয়েছে সেগুলো ক্ষমতাসীনদের দখলে চলে গেছে।”

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল মামুন জানান, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের নাজিরারটেক হতে টেকনাফের বদর মোকাম পর্যন্ত দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র তীর প্রাণী বৈচিত্রের অভিয়ারণ্য। অথচ ডেভলপমেন্টের নামে যেভাবে বালিয়াড়ি ও উপকূল দখল চলছে-এতে এখন লাল কাঁকড়ার দল দেখা যায়না। সরকারকে অবশ্যই প্রাণী বৈচিত্র রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে বেশি দিন লাগবে না।”

কুতুবদিয়া দ্বীপের ১নং উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, “দ্বীপের পশ্চিমে ঝাউগাছ আর প্যারাবন কেটে প্রভাবশালীরা তৈরি করেছে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ। এছাড়া দ্বীপের পূর্ব পার্শ্বস্থ প্যারাবন তো অনেক আগেই কেটে সাবাড় করা হয়েছে। ফলে দ্বীপের প্রাণী বৈচিত্র বলতে বর্তমান প্রজন্ম কল্পকাহিনী বলেই মনে করেন।”

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোসেন ইব্রাহিম জানান, দ্বীপের পশ্চিম-উত্তরাংশে মাতারবাড়ি এলাকায় বিশাল প্যারাবন কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীনরা প্যারাবন কেটে গড়ে তুলেছে শতাধিক চিংড়ি ঘের।”

তিনি আরো বলেন, “প্রাণী বৈচিত্রের অভয়ারণ্য এসব প্যারাবন গুলো কেটে ফেলায় দ্বীপের পরিবেশগত ভারসাম্য এখন হুমকির মুখে। এছাড়া সোনাদিয়া দ্বীপেও বিশাল বিশাল প্যারান কেটে গড়ে তোলা হয়েছে লবণ মাঠ। প্রাণী বৈচিত্র বলতে কিছু রাখতে ইচ্ছে নেই এখানকার অসাধু মহলের।”

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, “কক্সবাজারকে বাঁচাতে অর্থাৎ কক্সবাজারের প্রাণী বৈচিত্র রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।”

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানিয়েছেন, “দেশের জনপ্রতিনিধি, সমাজ সেবক, পরিবেশবাদীরা বড় গলায় কথা বলতে পারে। প্রাণী বৈচিত্র রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তার হাত কাঁপে। দেশের প্রশাসন থাকতে কিভাবে সমুদ্র দূষিত হয়, কিভাবে জলাশয় ভরাট, নদী দখল ও প্যারাবন কাটতে পারে অসাধু লোকেরা।” আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আগে ‘প্রাণী বৈচিত্র’ রক্ষা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Exit mobile version