কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এইডস রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে রোহিঙ্গা এইডস রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৭জন। এর মধ্যে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯৭জন আর পুরাতন রোহিঙ্গা এইডস রোগী আছে ১০জন। সংশ্লিষ্টদের মতে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। একই সাথে মহামারি এ এইডস রোগ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফসহ পুরো অঞ্চল ভয়াবহ ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।
গতকাল নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উখিয়ার কুতুপালংয়ে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়। রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথ ভাবে এ দিবসটি পালন করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা রোহিঙ্গাদের মাঝে এইডস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উখিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অনেকটা এইডস ঝুঁকিমুক্ত হয়েছিল। কিন্তু এমন পরিস্থিতি ঢুকে পড়েছে রোহিঙ্গারা। আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে একের পর এক শনাক্ত হচ্ছে এইডস রোগী। এর সংখ্যা শত’র কাছাকাছি। আরো ৪০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ভাইরাস রয়েছে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এর ফলে বাংলাদেশ ফের অত্যন্ত এইডস ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তা নিয়ে সরকারও অনেকটা চিন্তিত।
কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নতুন আর পুরানো মিলে উখিয়া ও টেকনাফে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। অনুপ্রবেশকারীদের একটি বিশাল সংখ্যক নানা রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য সংখ্যক এইডস রোগী। এই পর্যন্ত ১০৭জন রোহিঙ্গার মধ্যে এইডস ধরা পড়েছে। এরা সবাই অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এলে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে এইডস শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ বছরের শিশুও পাওয়া গেছে। আরো অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে এই মরণঘাতি ভাইরাস থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সর্বশেষ ১০৭জনের মধ্যে মরণ ব্যাধি রোগের এইডস ভাইরাস পাওয়া গেছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের রোহিঙ্গা ইউনিটে এইচআইভি পজেটিভসহ অন্য রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গারা চিকিৎসা নিচ্ছে। নানাভাবে ধর্ষণ এবং সচেতনতার অভাবে এ রোগটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে বলে মনে করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মায়ানমারের মধ্যে এইডস এর প্রকোপ বেশি। মায়ানামারে এইডস এর প্রকোপ .১০%। বাংলাদেশে .০১%। তাই মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগী। প্রতিদিন ৩-৪জন করে নতুনভাবে এইডস পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। ওদের এইডস রোগের বেশির ভাগ কারণ হিসেবে আমার মনে হয়, মেয়েরা আর্মিসহ বিভিন্নভাবে ধর্ষিত হয়। ফলে এইডস আক্রান্ত মায়েদের জন্ম দেয়া বাচ্চারাও এইডস আক্রান্ত হয়।
এদিকে আরো যে ৪০ হাজার এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গা থাকার বিষয়টি আতঙ্কের কথা বলছেন সচেতন লোকজন। এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে ভোগাবে বলে মনে করছেন তারা। তাই এটা আতঙ্কের কারণ। বাংলাদেশের অর্জিত সুফল ধরে রাখতে এখন সচেতনতা খুবই জরুরী বলে জানিয়েছেন তারা। রোহিঙ্গাদের কারণে এইডস নিয়ে বাংলাদেশের অর্জন বা সুফল যেন হারিয়ে না যায় তার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এই প্রসঙ্গে নোঙর’র নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ বলেন, ‘এইডস রোগ নিয়ে সচেতন বা আতঙ্কিত নন রোহিঙ্গারা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই রোগীর সংখ্যা বাড়লে তা আমাদের উপর প্রবল প্রভাব ফেলবে। তাই সরকার এবং রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এই নিয়ে ভাবতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।’
সীমান্ত বিহীন চিকিৎসক দল (এমএসএফ) এর মাঠ সমন্বয়কারী মোহাম্মদ মাহাদী বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে এইডস ঝুঁকি অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হারে এইডস রোগী থাকার কারণে এই দেশে ঝুঁকি ফের অনেক বেড়েছে। শুধু এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। তাদের কাছ থেকে এই মরণঘাতি ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’র চিকিৎসক দল প্রধান সুশান্ত মওলা চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগীদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না। সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বাইরে ছড়িয়ে দেয়া যেতে দেয়া যাবে না। কোনো ভাবেই তাদের সাথে আমাদের দেশের লোকজনকে মিশতে দেয়া যাবে না। এটা হচ্ছে মূল কার্য। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।’