১২ মামলার আসামী হয়েও মানিকছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম স্ব-পদে বহাল তবিয়তে

Khagrachari Picture(01) 05-09-2014

নিজস্ব প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি॥
জেলার মানিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১২টি মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি ফৌজদারী ও অপর ৯টি বন আইনে। সেনাবাহিনীর উপর হামলা ও অবৈধভাবে কাঠ পাচারের ঘটনায় এ সব মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল।

তিন ফৌজদারীসহ ১২ মামলার আসামী হয়েও মানিকছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম স্ব-পদে বহাল তবিয়তে থাকায় জনমনে তার ক্ষমতার জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম বলেছেন, ঘটনাটি অবগত থাকলেও এ সংক্রান্ত কাগজপত্র না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

গত ১০ জুলাই রাতে ও পরের দিন ভোর রাতে সিন্দুকছড়ি জোনের আওতাধীন মানিকছড়ি সাব জোনের সেনাবাহিনীর সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ৯শ ঘনফুট কাঠ উদ্বার করে। এ সময় পাচারকারীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর সূত্র জানায়, ঐদিন রাত ৮টায় মানিকছড়ি সাব জোনের ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা ক্যাম্পের সামনে রাস্তায় কাঠ বোঝাই ট্রাক নং(চট্টমেট্রো-ট-১১-৪১৩১) থামনোর চেষ্টা করলে চালক দ্রুতগতিতে গাড়ী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে সেনা সদস্যরা ঐ ট্রাক থেকে ৪শ ৭৫ ঘনফুট সেগুন কাঠ উদ্বার করে গাড়ীটানা বনবিভাগে হস্তান্তর করে।

পরের দিন ১১ জুলাই ভোর ৪টায় কাঠ পাচারের গোপন সংবাদে সেনাবাহিনী চেক পোষ্ট বসিয়ে কাঠ বোঝাই ট্রাকটির গতিরোধের চেষ্টা করলে চালক গাড়ী না থামিয়ে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সেনা সদস্য দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা ধাওয়া করে ফটিকছড়ির ভূজপুর এলাকা পৌছলে একদল লোক রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে সেনাবাহিনীর গাড়ীর গতিরোধের চেষ্টা করে এবং হামলা চালালে বেশ কয়েক জন সেনা সদস্য আহত হয়।

তবে এক পর্যায়ে কাঠ ভর্তি ট্রাকটি রাস্তার পাশে গর্তে পড়ে গেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রায় সাড়ে ৪শ ঘনফুট সেগুন কাঠসহ ট্রাকটি আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় প্রভাবশালী নেতা আবুল কালামসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যার চেষ্টাসহ বন আইনে ফটিকছড়ির ভূজপুর থানায় পৃথক তিনটি ফৌজদারী মামলা হয়।

গাড়িটানা বন বিভাগের রেঞ্জার ননী গোপাল দাস জানান, ইতিমধ্যে মামলাগুলো আদালতে চার্জশীট দাখিল হয়েছে। মামলাগুলো এখন স্বাক্ষী চলছে।

এদিকে গত ১২ জুলাই ভোর ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিন্দুকছড়ি জোনের আওতাধীন মানিকছড়ি সাব জোনের ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির চার হাজার দুইশত ঊনচল্লিশ ঘনফুট আটক করে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

গত ৬ আগষ্ট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ও তার ছেলে শফিকুল ইসলামকে আসামী করে ১৯২৭ সালের বন আইনের ৪১ ও ৪২ ধারায় বিভাগ ৯টি মামলা দায়ের করেন।

খাগড়াছড়ি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার অনুতোষ চাকমা জানান, আসামীদের আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য গত বুধবার(৪সেপ্টেম্বর) সমন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে হাজির না হলে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হবে।

এদিকে ৩টি ফৌজদারী ও ৯টি বন আইনে মামলার আসামী হওয়া সত্বেও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম স্ব-পদে বহাল থাকায় তার খুঁটির জোর নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম জানান, ঘটনা শুনেছি। তবে এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র পায়নি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন