১৭ বছর ধরে আঞ্চলিক পরিষদ জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে- দীপঙ্কর তালুকদার

DSCI0026

রাঙামাটি প্রতিনিধি:

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের নামে কোন প্রকার সহিংসতা করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক পার্বত্যমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার। রবিবার সকালে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে পার্বত্য চুক্তির ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা স্ববিরোধীতায় আক্রান্ত। তিনি একদিকে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেন অপরদিকে চুক্তিতে স্বীকৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাতিল ও আদিবাসীর স্বীকৃতির দাবি করে চুক্তি বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১মে থেকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রসঙ্গে দীপংকর তালূকদার বলেন, জেএসএস পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে আবারো আগের সশস্ত্র অবস্থানে ফিরে যাবার হুমকি দিয়ে আসছে। ১৭ বছর পর সন্তু লারমা বুঝতে পেরেছে অস্ত্রের আন্দোলন দিয়ে কিছুই হবে না। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলন করার ঘোষণা দেয়ায় তিনি সন্তু লারমাকে সাধূবাদ জানিয়ে বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের নামে কোন প্রকার সহিংসতা করার চেষ্টা করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আরো কঠোর হবে এবং আওয়ামীলীগ জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে তা প্রতিহত করবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, নির্বাচন না হওয়ায় ১৭বছর ধরে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ জনসংহতি সমিতির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

গত ১৭ বছরে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে জেএসএস কোন সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিন্তু সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তিতে পাহাড়িদের উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হলে সন্তু লারমা কোন আপত্তি করেনি কিন্তু চুক্তি পরবর্তি কেন আদিবাসী খোঁজা হচ্ছে সন্তু লারমার কাছে এমন প্রশ্ন রেখেছেন দীপংকর তালুকদার। সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, চুক্তির ৭২টির মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৮ ধারার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং বাকিগুলোর আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।

এ ব্যাপারে নানা কারণে চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ার ফলে কারও মনে কিছুটা ব্যথা থাকলেও হতাশার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।

তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার পর্যায়ক্রমে চুক্তি বাস্তবায়ন করে চলেছে। জনসংহতি সমিতি সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না বলে যেসব কথাবার্তা বলছে সেগুলো অসত্য। এ নিয়ে অসত্য কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে তারা। উল্টো চুক্তি নিয়ে স্ববিরোধিতা করছে জনসংহতি সমিতি।

তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন বা পাহাড়িদের অধিকারের জন্য নয় নিজেদের রুজি রোজগার ও পকেট ভারী করার জন্য জেএসএস, ইউপিডিএফ পাহাড়ের চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজি করছে। অবৈধ অস্ত্রের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙ্গালীরা দুই প্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হলে পাহাড়ের মানুষ শাস্তি ফিরে পাবে না। পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান দীপংকর তালূকদার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, মাহবুবুর রহমান, রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক হাজি মোঃ মুছা মাতাব্বরসহ জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শান্তিচুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি পালিত হবে মঙ্গলবার। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু, রাজনৈতিক ও শাস্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন