parbattanews

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিলো বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ঘটনা

সৈয়দ আলম:
কক্সবাজার জেলায় আলোচিত-সমালোচিত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০১৭ সাল। এরই মধ্যে পৃথিবীর সবেচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি হলো: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মুসলমান। মিয়ানমার থেকে কোনরকম প্রাণ বাঁচাতে আসার পথে অনেকের সলিল সমাধি ও বাংলাদেশের দালাল ও বিভিন্নজনের হাতে মারা গিয়েছে অনেকেই। এভাবেই আলোচিত-সমালোচিত হয়ে বছরটা পার হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর হাতে আটক পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ৭ সদস্যকে বাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, এসআই আবুল কালাম আজাদ, এসআই মো মনিরুজ্জমান, এএসআই মোঃ ফিরোজ, এএসআই মোস্তফা কামাল, এএসএই মোঃ আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তফা আজম ও মো আল আমিন।

উল্লেখ্য, টেকনাফে এক ব্যক্তিকে জিম্মি করে ১৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে ফেরার সময় সেনাবাহিনীর হাতে গোয়েন্দা পুলিশের সাতজন সদস্য আটক হন। টেকনাফের মেরিনড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর তল্লাশীর সময় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে পালিয়ে যায়। সেনা সদস্যরা গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ তাদেরকে আটক করেন।

টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় স্থাপিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের প্রধান মেজর নাজিম আহমদ বলেন, ‘টেকনাফের মধ্যজালিয়া পাড়ার মৃত হোসেন আহমদের ছেলে আবদুল গফুরের স্বজনরা অভিযোগ করেন যে, মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার শহর থেকে কিছু লোক গফুরকে ধরে নিয়ে টাকা দাবি করেছে। বুধবার ভোরে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে গফুরকে একটি মাইক্রবাসে করে টেকনাফে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।’

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগর তীর ধরে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পযটক আকর্ষণের জন্য নির্মিত এ সড়কের একপাশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি।

এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে তিন ধাপে এই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক বিভাগের তত্তাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে।

১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী এই সড়ক নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু নানা জটিলতা, বিশেষ করে উত্তাল সমুদ্রের ভাঙনের কারণে বারবার ব্যাঘাত ঘটে প্রকল্পের। ১৯৯৫ সালে একবার সড়কের একটি অংশ পুরোপুরি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সমুদ্র শাসন করতে হয়েছে। সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে পাহাড় ধসে সেনাবাহিনীর ছয় জন কর্মী নিহতও হয়েছেন সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উৎসাহ এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ শেষ করতে পেরেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। সড়কের পাশে সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ গাছও রোপন করা হয়েছে।

এই সড়কটি চালু হওয়ায় একদিকে যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ কমবে ঠিক তেমনি একদিকে সাগর আর অন্যদিকে পাহাড়ের মাঝখানের এই সড়ক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই সড়ক নিয়ে আসবে অন্য এক সম্ভাবনা।

কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নারকীয় তান্ডব, নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের বর্ণনা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অশ্রুজল দেখা যায় চোখের কোণে। রোহিঙ্গা এক শিশু প্রধানমন্ত্রীকে তার পরিবারের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা জানান।

শিশুটি জানায়, তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আগুন দেয়া হয়। তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে রেহায় পায়নি শিশুটিও। তার নাকে আঘাত করে থেঁতলে দেয়া হয়। শিশুটির কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে ওই শিশুকে বুকে জড়িয়ে নেন। তাকে সান্তনা দেন। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী তাদের সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন।

এসময় রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি। ঘরবাড়ি হারিয়ে যেসব রোহিঙ্গা এখানে (বাংলাদেশে) এসেছেন, তাঁরা সাময়িক আশ্রয় পাবেন। তাঁদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।’

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করার সময় মোবারক নামের এক রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৩০ অক্টোবর সোমবার দুপুরে বালুখালী-২ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে ওই রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার কোলের শিশুটির নাম মোবারক। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে তার বাবা মারা গেছেন। পিতৃহীন মোবারককে কোলে নিয়ে তার মা ত্রাণ নিতে আসলে বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে কোলে নিয়ে আদর করেন।

খালেদা জিয়াকে কাছে পেয়ে মোবারকের মা বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী মোবারকের বাবাকে হত্যা করেছে। ছেলেকে নিয়ে কোনোমতে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি।’

এ সময় খালেদা জিয়া মোবারকের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘একটু সময় লাগবে, অপেক্ষা করো। রাখাইনে শান্তি আসবে। আমরা রাখাইনে শান্তি আনব। তোমরা সেখানে ফিরে যাবে।’

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দিতে খালেদা জিয়া ৪৫ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে উখিয়া পৌঁছান। সেখান থেকে ৩৬ ট্রাক ত্রাণ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর বাকি নয় ট্রাক ত্রাণের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন পালংখালী ইউনিয়নের ময়নারসেনা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু বিতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি হাকিমপাড়া ও বালুখালীতে গিয়ে বাকি ত্রাণ বিতরণ করেন।

নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সার্কিট হাউজে যান। এছাড়া মহাসড়কের রাস্তার দুপাশে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লে-কার্ড নিয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে দাঁড়িয়ে থাকেন নেতা-কর্মীরা। এর আগে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তাদের ত্রাণ দিতে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা দেন তিনি।

Exit mobile version