রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে

কাল মংডু যাচ্ছেন ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল

fec-image

প্রত্যাবাসন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রোহিঙ্গা পরিবারের ২০ সদস্য রাখাইন রাজ্যের মংডু সফর করছেন শুক্রবার । স্বদেশে ফিরে গেলে কি অবস্থায়, কেমন থাকবেন এসব পরিস্থিতি বিবেচনার জন্য তাদের এ সফর।

শুক্রবার (৫ মে) সকালে টেকনাফ থেকে নৌ-পথে এরা মংডু যাওয়ার কথা রয়েছে। কক্সবাজারস্থ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নির্ভরশীল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করা প্রায় ২২০ পরিবারের মধ্য থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত ২০টি পরিবারের ৩ জন নারী সদস্যসহ ২০ জন রোহিঙ্গাকে মনোনীত করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত পারিবারিক ব্যক্তি হচ্ছেন করিম উল্লাহ, মো. সেলিম, রশিদ উল্লাহ ছৈয়দ আলম, অলি হোসেন, মো. ফারুক, মোহাম্মদ ইলিয়াস, সাঈদ আলম,আবুল হোসেন, আবু সুফিয়ান, আবু তৈয়ুব, মো. ইলিয়াস, নোমান, মো. তাহের, মো. আলম, আবু সামা, আবদুস সালাম, জমিলা, রহিমা খাতুন ও সুবিয়া খাতুন। এদের মধ্যে টেকনাফ ২৬ নং ক্যাম্পের ১৪ পরিবার, ২৭ নং ক্যাম্পের ৪ পরিবার ও ২৪ নং ক্যাম্পের ২ পরিবারে সদস্য।

যারা নিজ দেশের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসবেন। রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে অবস্থিত ১৫টি গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য নদী পথে গমন করবেন বলে জানা যায় ইতঃপূর্বে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন তাদের মধ্য থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪, ২৬ ও ২৭ থেকে এই ২০ জনকে বাছাই করে রাখাইন রাজ্যের ১৫টি গ্রামের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পাঠানো হচ্ছে।

এই প্রতিনিধি দলের সাথে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (RRRC) মিজানুর রহমান ও তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।

জানা যায়, চীনের মধ্যস্থতায় চলতি মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রচেষ্টা চলছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের আগেই রাখাইনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রস্তাব নাকচ করে দিলেও এবার রাজি হয়েছে মিয়ানমার। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মে প্রতিনিধি দলটিকে রাখাইনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে ।

রাখাইনে কি পরিমাণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা, তা রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করবে।

ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের ২০ জনকে মিয়ানমারে রওয়ানা দেওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকালে টেকনাফ শহরে নিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে তারা রাত্রিযাপন শেষে ৫ মে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে নদী পথে রাখাইন রাজ্যের মংডুর উদ্দেশ্যে টেকনাফ ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

এর আগে গত ১৫ মার্চ (বুধবার) সকালে মিয়ানমারের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সমাজ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অং মিয়ো’র নেতৃত্বে টেকনাফ স্থলবন্দর রেস্ট হাউজে অবস্থান করে তালিকা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন । মন্ত্রী ছাড়াও মিয়ানমার অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই টিমের সদস্য ছিলেন ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনীত রোহিঙ্গা পরিবার গুলোর ২০টি পরিবারের সদস্যরা মিয়ানমার সরকারের গৃহীত প্রদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবেন। তারপর শুরু হবে পাইলট প্রকল্পের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মূলত ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেয়া হয়। এরপর মিয়ানমারের ৬৮ হাজার রোহিঙ্গা ফিরতি তালিকা পাঠায়। সেখানে অনেকের পরিবারের মধ্য সদস্য বাদ পরেছে। যার মধ্যে ২২০ পরিবারের সদস্য সংখ্যা যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন