parbattanews

২৪ মে রাঙামাটি আ.লীগের সম্মেলন: নেতৃত্বে চমক নাকি পুরনোয় আস্থা

পার্বত্যাঞ্চলের রাজধানী খ্যাত রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন চলতি বছরের ২৪ মে অনুষ্ঠিত হবে। দলটি একদিকে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এবং অন্যদিকে সরকার ক্ষমতায়। তাই কাউন্সিলটা নিয়ে বেশ সরগরম চারদিক। রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়াচ্ছে উত্তাপ; নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা পর্যন্ত।

সবার মুখে মুখে কে হচ্ছেন রাঙামাটি জেলা আ.লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক? নাকি পুরনো কমিটিতে আস্থা রাখবেন দলের কাউন্সিলরা। এ নিয়ে নানান ছক কষছেন দলের নীতি নির্ধারকরা।

কেননা যারাই নেতৃত্বে আসুক তাদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্রিমুখী পুরনো লড়াইয়ে মেতে উঠতে হবে। সামনে নির্বাচনে মহা চ্যালেঞ্জ পার করতে হবে। পাহাড়ের রাজনীতিতে বিএনপি আ.লীগের জন্য কোনকালে মাথা ব্যাথার কারণ ছিলো না। দলটির প্রধান প্রতিপক্ষ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস।

পাশাপাশি পাহাড়ের আরও কয়েকটি স্বশস্ত্র অস্ত্রধারী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাই রাজনৈতিক মারপ্যাচের খেলায় আ.লীগকে টিকে থাকতে হলে যোগ্য, বিজ্ঞ এবং সাহসী নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে।

এরই মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিরা বিভিন্ন উপজেলা সফর করে কাউন্সিলরদের মন জয় করতে মাঠে নেমেছেন। জেলা শহরেও তাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এ নিয়ে রাঙামাটির রাজনীতি তুঙ্গে।

এইবারের কাউন্সিলে আওয়ামীলীগের ২৪৬ জন কাউন্সিলর সরাসরি ভোট প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবেন। এই ভোটের মাধ্যমে দীর্ঘ এক দশক পর কাউন্সিলররা তাদের প্রিয় নেতৃত্ব বেছে নিবেন। ভোটারদের মন মর্জির উপর নির্ভর করছে কে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হবেন।

সেই ১৯৯৬ সাল থেকে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে একটানা পাহাড়ের অবিসংবাদিত নেতা বা পাহাড়ের দাদা খ্যাত দীপংকর তালুকদার আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার এসময়কাল অনেক সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হলেওে তার জন্য সভাপতির পদটি অটুট থেকে গেছে।

এইবারের কাউন্সিলে তিনি আবারো সভাপতির পদে লড়াই করছেন। পূর্বে তিনি লড়াই ছাড়া জয়ী হলেও এইবার যুদ্ধের ময়দানে তাকে সরাসরি অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। একটি ভুলে তার পদটি হারিয়ে যেতে পারে।

কারণ নিখিল কুমার চাকমা তার এক সময়কার শিষ্য হলেও এই শিষ্য এখন অনেক বড় হয়েছে। দাদার আর্শিবাদপুষ্ট নিখিল এক সময় পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকে নিখিল, দাদা দীপংকরের তুলনায় রাজনৈতিকভাবে অনুজ হলেও এইবারের কাউন্সিলে তাকে ভোটযুদ্ধে শক্ত প্রতিপক্ষ ভাবতে হচ্ছে।

কেননা দীপংকর তালুকদারের রুক্ষ মেজাজ, জেএসএস’র সাথে শত্রুতা এবং নিজের পছন্দের গুটিকয়েক ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার উপর চটেছেন নেতা-কর্মী এবং কাউন্সিলররা। মূলত এইসব দীপংকর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালে নিখিলের জন্য আর্শিবাদ হতে পারে বলে নেতাকর্মীদের মত।

কারণ নিখিল দাদার এইসব সমস্যাকে সামনে এনে দলীয় কাউন্সিলরদের নিজের কাছে টেনে নিচ্ছেন। নিখিল দক্ষ কোন নেতা না হলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় থেকে তার অমায়িক ব্যবহার এবং হাসিমুখ নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে সক্ষম হয়েছেন।

পাশাপাশি তিনি সখ্যতা গড়েছেন পাশ্ববর্তী জেলার এক মন্ত্রীর সাথে; নিয়েছেন আর্শিবাদও। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের ছায়া নিখিলের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। এ কারণে দীপংকর তালুকদারের এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সভাপতির পদ বাগিয়ে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

সভাপতি প্রার্থী দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, কাউন্সিলররা আগে সিন্ধান্ত নিয়েছেন, কাকে সভাপতি বানাবেন, কাকে তারা বিজয়ী করবেন, কাউন্সিল হচ্ছে, যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। এতে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। এটা তার অধিকার।

বর্তমান এমপি বলেন, আওয়ামীলীগ দেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল। দেশের উন্নয়নে, জনগণের উন্নয়নে আমরা কাজ করি। এটা অন্য কোন রাজনৈতিক দল না। আমি আশা রাখছি রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থানে অনুষ্ঠিত হবে।

সভাপতি পদপ্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন, দীপংকর তালুকদার আমারও দাদা। তিনি আমারও রাজনৈতিক গুরু। তাঁর সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। দলের প্রয়োজনে, কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় সভাপতির পদে লড়াই করছি। হেরে গেলে কোন দু:খ থাকবে না। জিতে গেলে তাদের উন্নয়নে কাজ করবো।

এদিকে জেলা আওয়ামীলীগে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। এত বছর সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনা থাকলেও সভাপতির পদটি নিয়ে লড়াই সামনে আসায় এ পদের লড়াইটা কিছুটা চাপা পড়েছে।

এ পদে লড়াই করছেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী কামাল উদ্দিন ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। রাজনৈতিক অঙ্গনে গতবার কাউন্সিলে হাজী কামালকে হারিয়ে মুছা সাধারণ সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নেন।

গত কাউন্সিলে হাজী কামালের হারার মূল কারণ ছিলো দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে তার দুর্ব্যবহার। যে কারণে তাকে হারতে হয়েছে। এইবার মুছার হারার মূল কারণ হবে তিনি একটি সমষ্টিগত নিজের বলয় তৈরি করে তার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক জৈষ্ঠ্য নেতা থেকে শুরু সাধারণ নেতা-কর্মী সকলের একটা অভিযোগ মুছা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। জেলা পরিষদ নিয়োগ তিনি একাই কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তার আমলে জেলা সদরের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীর চাকরী হয়নি। তবে যে যাই বলুক নির্বাচনে শেষ বলতে কোন কথা নেই। মুছা কিংবা কামাল যে কেউ সাধারণ সম্পাদক হয়ে যেতে পারেন। তা এখন নির্ভর করছে সাধারণ কাউন্সিলরদের মন মর্জির উপর।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হাজী কামাল বলেন, জয়-পরাজয় রাজনীতির খেলার অংশ। দলের নেতা-কর্মীরা (কাউন্সিলর) আমাকে ভোট দিয়ে যদি সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন করতে সহায়তা করে তাহলে আমি আমার সকল অতীত ভুলে দলের উন্নয়নে, নেতা-কর্মীদের স্বার্থে কাজ করবো। তবে আমি বিশ্বাস করি এইবারে দলীয় নেতা-কর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবে।

আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, নেতা-কর্মীরা আমাকে ভোট দিলে আমি বিজয়ী হবো; না দিলে হেরে যাবো। এতে দু:খ নেই। দলের উন্নয়নে, কর্মীদের উন্নয়নে কাজ করেছি। আজকে দলীয় অফিসটির উন্নয়নে আমি কাজ করেছি। দলের নেতা-কর্মীদের দু:সময়ে পাশে থেকেছি। এখন তাদের মূল্যায়নের দিকে থাকিয়ে আছি।

কাউন্সিল নিয়ে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আ.লীগের কাউন্সিলের ভোটার সাইফুল আলম সাইদুল বলেন, আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাঙামাটি আসন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে শক্তিশালী একটি কমিটি গঠন হোক এটাই প্রত্যাশা।

জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সদস্য সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেন, আমরা চাই পরিছন্ন ও কর্মী বান্ধব এবং সুশৃঙ্খল একটি কমিটি গঠন হোক। যাদের হাতে দল এবং দলের নেতা-কর্মীরা নিরাপদ থাকবে। দলের দু:সময়ের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।

Exit mobile version