parbattanews

৩০ ঘণ্টায় ধরে উঠানে বাবার লাশ, অবসরের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে সন্তানেরা

বাবা মারা গেছেন শনিবার সন্ধ্যায়। কিন্তু দাফন করতে দিচ্ছেন না সন্তানরা। একদিন ধরে মরদেহ পড়ে আছে এম্বুলেন্সে। অবসরের পর পাওয়া ৫০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনের দ্বন্দ্বের কারণেই এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

স্থানীয়রা জানায়, মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মনির আহমদ (৬৫)। তিনি পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় তার মৃত্যু হয়। বাবার লাশ অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই অবসরকালীন ভাতা বাবদ প্রাপ্ত ৫০ লাখ টাকা নিয়ে সন্তানেরা বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন। এমন ঘটনায় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলেও সন্তানরা নির্বিকার।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাড়ির সামনেই অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে আছে বাবার লাশ। দাফন করা দূরের কথা, অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ নামানো পর্যন্ত হয়নি।

জানা যায়, অবসরের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বৃদ্ধ মনির আহমদের (৬৫) লাশ সড়কে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে ফেলে রেখে শনিবার রাত থেকে বিরোধে জড়ায় তার সন্তানরা। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) রাত একটায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ দাফন হয়নি।

মৃত মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসরে এসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। আমার মেজ বোন বেবি আকতার আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এবি ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তোলেন। আমার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী আলমগীর দেশে আসার জন্য রওনা হয়েছে। সে আসার পর টাকার সমঝোতার পর বাবার দাফন করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, মনির আহমদের অবসরের টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মেজ মেয়ে বেবি আকতারের সঙ্গে অন্য ভাইবোনদের বিরোধ চলছিল। শনিবার তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে রোববার সকালে ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক বৈঠকও হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার পর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে এনে লাশ রেখে দেন বাড়ির পাশের সড়কে। সকাল থেকে অবসরে টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলে।

ইউপি সদস্য মো. সাইফুদ্দিন বলেন, মনির আহমদের অবসরের টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে ফেলার অভিযোগ এনে ভাইবোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। লাশ এখন পর্যন্ত সড়কে রয়েছে।

তবে বেবি আকতার অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, আমার বাবার অবসরের কোনো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করিনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

মনির আহমদের ছোট মেয়ে লিপি আকতার জানান, আমার বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমরা তিন বোন মিলে বাবার চিকিৎসা খরচ বহন করছি। এক ভাইও কোনো সহযোগিতা করেনি। অবসরের টাকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে অবসরের টাকার বিষয় তুলে বাবার লাশ দাফন করতে দিচ্ছে না।

এমন অমানবিক ঘটনায় এলাকার লোকজনও ক্ষুদ্ধ। নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। একপর্যায়ে খবর দেন পুলিশকে। ছোট ছেলে সৌদি আরব থেকে ফিরলে এবং সোমবার ব্যাংক খুললে টাকার হিসাব শেষে বাবার লাশ দাফন করবেন বলে এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন মনির আহমদের ছেলেরা।

বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাহাব উদ্দিন জানান, মনির আহমদের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা। ছোট ছেলে বিদেশ থেকে ফিরলে ফয়সালা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ঘটনা দুঃখজনক।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, বৃদ্ধের রেখে যাওয়া অবসরের টাকার জন্য তার সন্তানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মাধ্যমে বৃদ্ধের সন্তানদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন করা হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) সকাল নয়টায় লাশ দাফনের কথা রয়েছে। লাশ দাফনের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান বৃদ্ধের সন্তানদের নিয়ে বসে একটি ব্যবস্থা করবেন।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করলেও মনির আহমদের সন্তানরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কয়েকদফা বসে মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। সোমবার সকালে মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়েছেন ভাইবোনরা।

Exit mobile version