৩৫জন বাঙালি কাঠুরিয়া হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

fec-image

পাকুয়াখালীা ট্র্যাজেডির ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক ”গণহত্যার বিচার ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে” জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শোকসভা করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। সভায়  পাকুয়াখালীা ট্রাজেডির ৩৫জন বাঙালি কাঠুরিয়া হত্যার বিচার ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবিসহ বেশকিছু দাবি পেশ করা হয়।

পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিঃ আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি শেখ আহাম্মদ (রাজু), পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মোঃ আব্দুল হামিদ রানা প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য এলাকার বাঙালিদের কাছে ৯ সেপ্টেম্বর একটি ট্রাজেডি একটি ভয়ঙ্কর বা ভয়াল চিত্র তথা ৩৫ কাঠুরিয়া গণহত্যা দিবস।  এতগুলো নিরস্ত্র মানুষকে ডেকে নিয়ে সেদিন অত্যন্ত নৃশংসভাবে তৎকালীন তথাকথিত শান্তি বাহিনীরা নির্মম ভাবে ৩৫ জনকে হত্যা করে। ওদের হত্যাকাণ্ড হিংস্র হায়নাকেও হার মানায়। সেখানে কাঠুরিয়াদের তিনদিন আটকে রেখে হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্যাতন চালিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করে।

তারা বলেন, প্রায় দুইযুগ হয়ে গেলেও এখনও এই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। ২৪ বছর পরেও বিচার না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত নিহতদের পরিবার।  ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির মাধ্যমে শান্তি নয় অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে মন্তব্য করে তারা বলেন, সাম্য নয় বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে , এক দেশে দুই নীতি তৈরি করা হয়েছে।

তারা আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী পার্বত্য জেলা গুলোতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসার সবার অধিকার রয়েছে, কিন্তু শান্তিচুক্তির মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদটি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত করে বাঙালিদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। চুক্তির আগে শান্তিবাহিনী নির্যাতন করতো এখনও তিন গ্রুপে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। কমপক্ষে শুধু খাগড়াছড়িতে বছরে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। পার্বত্য চট্রগ্রামকে ঘিরে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।

এ সময় সংগঠনটি বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-

১) পাকুয়াখালীার ট্র্যাজেডি ৩৫ জন বাঙালী কাঠোরিয়া”হত্যার বিচার ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরনের দাবি এবং অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী বাহিনী ইউ পি ডি এফ ও জেএসএসকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

২) অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ইউ পি ডি এফ ও জেএসএস এর নেতা প্রসিত খীষা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণকারী জে এস এস নেতা সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে বহিষ্কার করে গ্রেফতার পূর্বক নিরস্ত্র, নীরিহ ঘুমন্ত মানুষ খুনের দায়ে চূড়ান্ত শাস্তি নিশ্চিত করা।

৩) সন্তু লারমার সশস্ত্র সংগঠন যেহেতু এখনো অস্ত্র ব্যবহার করে, ১৯৯৭ সালে অস্ত্র সমর্পনের নামে সরকারের সাথে প্রতারণা করেছে, সেহেতু তাদের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে তাদের সাথে সংগঠিত চুক্তি বাতিল করা।

৪) .উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বাঙ্গালী জনবসতি গুলির নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য সকল প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প
পুনঃস্থাপন করা এবং প্রয়োজনে ভিডিপি সদস্যদের অস্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে পূর্বের ন্যায় তাদেরকে নিয়োজিত করা।

৫).সংবিধান প্রদত্ত সুযোগের সমতা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রধানত বাঙ্গালী সম্প্রদায় সহ অন্যান্য ১৩টি উপজাতীয় সম্প্রদায়কে সম্প্রদায়ভিত্তিক জনসংখ্যার অনুপাতে সকল ক্ষেত্রে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

৬) পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী বাহিনী সমুহের সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে র‌্যাবের মাধ্যমে চিরুনী অভিযান পরিচালনা করা।

৭) নিরাপত্তার অজুহাতে তিন পার্বত্য জেলায় আশ্রয় শিবির সমুহে স্থানান্তরিত মানুষ-গবাদিপশু একসঙ্গে মানবেতর জীবন যাপনকারী বাঙ্গালী পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিয়ে
টাস্কফোর্সের আওতায় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত হিসেবে স্ব স্ব মালিকানার কাগজপত্রের ভিত্তিতে নিজস্ব বসতভিটা ও ভূমিতে ফিরে যাওয়ার সুবন্দোবস্থ করা ।

৮) গত ১৪ জুলাই দিবাগত রাতে সোনা মিয়ার টিলায় আবদুল মালেকের স্ত্রী মোরশেদা বেগমের হত্যাকারীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার ও তাকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দান এবং সোনামিয়ার টিলার ৮১২ পরিবারের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা।

৯) পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সকল হত্যা ও চাদাঁবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সকল সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে বিচার করা।

১০। পার্বত্য ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের কার্যক্রম স্থগিত করে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে ভূমি জরিপ করে যে যেখানে বসবাস করে অর্থাৎ দখলীয় জায়গার দখল বুঝিয়ে দিয়ে ডিসর্পোট জায়গা
চিহ্নিত করার পর ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি করা ।

১১। চাকুরীসহ সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকৃত বাঙ্গালী পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে চাকুরি দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে উপজাতি কোটা থাকায় শুধু মাত্র একটি শ্রেনী সুবিধা পেয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ক্ষেত্রে পার্বত্য কোটা চালু করা।

১২। দীঘিনালার বাবু ছড়ার ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনে উচ্চ পদস্থ যুগ্ম সচিব পদমর্যদা সম্পন্ন একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করে সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ সমূহ, ইউএনডিপিসহ স্থানীয় সকল নিয়োগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী ও ১৩টি উপজাতীয় সম্প্রদায় ভিত্তিক
জনসংখ্যা নিয়োগের ব্যবস্থা করা।

১৪। পার্বত্য তিন জেলার পর্যটন এলাকা পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ বিনোদন স্পটগুলি আরো আকর্ষণীয় করে এই সব পর্যটন এলাকাকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা।

১৫। শিক্ষা ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষে পার্বত্য তিন জেলার কমপক্ষে আরো ৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। নামকরা তিনটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেয়া।

১৬।যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে পাহাড়ের সকল রাস্তাঘাট মেরামত, ব্রিজ কালবার্টসহ সকল কাজ সেনাবাহিনীর তত্ববধানে ন্যাস্থ করা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন