৫ ‘মাতব্বরে’ আটকে রোহিঙ্গা সমস্যা: মোমেন

fec-image

রোহিঙ্গা সঙ্কট ঝুলে থাকার পেছনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের ভূমিকাকে দায়ী করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ৫ ‘মাতব্বরে’ আটকে অছে রোহিঙ্গা সমস্যা।

জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিশ্ব সংস্থাটিতে বাংলাদেশের সাবেক এই স্থায়ী প্রতিনিধি পরাশক্তি দেশগুলোকে নিয়ে মুখ খোলেন।

মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘ যা যা করার করছে। তবে, জাতিসংঘের শক্তিটা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচজন স্থায়ী সদস্য, তারা হলো ‘মাতব্বর’।

”এরা একজন যদি আপত্তি করে সেখানে জাতিসংঘ কিছুই করতে পারে না। তার ফলে আমাদের রোহিঙ্গা সমস্যা, ফিলিস্তিনের সমস্যা ঝুলেই আছে।”

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থী এখন ‘বোঝা’ হিসেবে দেখছে সরকার।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের অগাস্টে পালিয়ে আসা

রোহিঙ্গাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলেছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বাংলাদেশে সৃষ্ট শরণার্থী সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে, সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলার উদ্যোগ চার বছর আগে নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তবে চীন ও রাশিয়া ওই উদ্যোগ বর্জন করে।

চীন-রাশিয়া ‘সদয়’ হবে – এই প্রত্যাশা রেখে মোমেন বলেন, “কারণ সেখানে এই নিরাপত্তা পরিষদ, জাতিসংঘের নিজের কোনো শক্তি নাই, তার শক্তি হচ্ছে সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া শক্তি- সে কারণে আমরা ঝুলে আছি।

“আমরা আশা করি, আগামীতে যারা ঝুলিয়ে রেখেছে, তারা আরও সদয় হবে, বিশেষ করে রাশিয়া এবং চীন। তারা সদয় হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে। আমরা আশাবাদী যে, আমাদের এই সমস্যাও দূর হবে।”

১৯৩ সদস্য দেশের বৈশ্বিক সংস্থা জাতিসংঘে সবকিছুর কেন্দ্রে সবসময়ই থাকে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ; যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্স স্থায়ী সদস্য।

জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে, ‘পার্মানেন্ট ফাইভ’, ‘বিগ ফাইভ’ কিংবা ‘পি-ফাইভ’ হিসাবে পরিচিত এই সদস্য দেশগুলোর ’ভিটো’ ক্ষমতার কারণে অনেক সার্বজনীন সিদ্ধান্তও মাঝপথে আটকে যায়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতিসংঘকে সার্বজনীন সংস্থায় পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ এখনও সার্বজনীন নয়। যদিও প্রত্যেকটি দেশ একটি ভোট দিতে পারে সাধারণ পরিষদে, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি দেশই হলো মাতব্বর।

“এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। জাতিসংঘকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে এবং এই প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এটাকে বিশ্ব নেতৃত্বের মুখপাত্র হওয়া উচিৎ, গুটিকয়েক দেশের মুখপাত্র হওয়া উচিত না।”

২০২৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে জানিয়ে মোমেন বলেন, “১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সভাপতি হয়েছিল। আপনারা জেনে খুশি হবেন, ২০২৬ সালে জাতিসংঘের ৮১তম সাধারণ পরিষদে সভাপতি নির্বাচনে আমরা প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি।”

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ আর্থ-সামাজিক অনেক অগ্রগতির পেছনে জাতিসংঘের বিস্তর ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন মোমেন।

তিনি বলেন, “হয়ত জাতিসংঘ সারাবিশ্বের সব যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হওয়ার পেছনে এর ভূমিকা রেখেছে।”

ঢাকা জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের সহায়তা ‘ঢাকাবাসী সংগঠন’ আয়োজিত উদযাপন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন