parbattanews

রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছাড়

monk-NO-Rohingya-Muslims

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মিয়ানমার সরকার দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার সামনে এক হতাশাব্যঞ্জক পথ খোলা রেখেছে : তাদেরকে তাদের পরিবার ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে বাস করে এসেছে বলে প্রমাণ করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, নয়ত তাদের শিবিরে স্থানান্তর করে পরে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ নীতি দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। দু’বছর আগে ব্যাপক সংখ্যায় দেশত্যাগের পর রোহিঙ্গারা এবার আরও বেশি সংখ্যায় শরণার্থী হয়ে দেশান্তরিত হচ্ছে।

এ নীতির পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য পরপর সরকারী আইন ও নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কেবল গত তিন সপ্তাহেই ১৪ হাজার ৫শ’ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যের উপকূল থেকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে নৌযানে করে যাত্রা করে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মালয়েশিয়া পৌঁছা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর দৃষ্টি রাখছে এমন এক গ্রুপ আরাকান প্রজেক্ট একথা জানায়। এ সঙ্কট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আগামী সপ্তাহের নির্ধারিত মিয়ানমার সফরের প্রাক্কালে হোয়াইট হাউসের জন বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন মিয়ানমার নিয়ে এর নীতিকে সফল বলে মনে করে থাকে, কিন্তু বৌদ্ধ চরমপন্থী এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সামরিক শাসনের গণতান্ত্রিক সংস্কারে উত্তীর্ণ হওয়ার কঠিন পথ লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে পারে। সরকার এসব চরমপন্থীকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে।

ওবামা গত সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনকে ফোন করে রাখাইন রাজ্যের উত্তেজনা ও মানবিক পরিস্থিতির সুরাহা করার আহ্বান জানান। হোয়াইট হাউস একথা জানায়। ওবামা রোহিঙ্গাবিরোধী নীতি, বিশেষত পুনর্বাসন নীতি সংশোধন করতে মিয়ানমার নেতাকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সমর্থন করতে হবে। রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে বৈষম্যের শিকার। তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করা হয়েছে, তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তারা সেনাবাহিনীর হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে।

১৯৭৮ সালে এরূপ এক হামলার পর প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে সর্বশেষ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ দাঙ্গায় উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হাতে শত শত রোহিঙ্গা নিহত এবং তাদের বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়। তখন থেকে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে এবং ১ লাখেরও বেশি লোককে নোংরা শিবিরগুলোতে আটক করে রাখা হয়েছে এবং তাদের জন্য শিবির ত্যাগ করা নিষিদ্ধ।
শিবিরগুলোর পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকায় এক মানবিক সমাধান খুঁজে পেতে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে।

কিন্তু এর পরিবর্তে সরকার এমন এক কৌশল অবলম্বন ত্বরান্বিত করছে বলে মনে হয়, যাকে মানবাধিকার গ্রুপগুলো জাতিগত নির্মূলকরণ (এথনিক ক্লিনজিং) বলে অভিহিত করছে। অনেক রোহিঙ্গাই ঊনবিংশ শতাব্দীতে মিয়ানমারে এসেছিল। তখন ব্রিটিশরা বর্তমানের ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের (সাবেক নাম বর্মা) সমগ্র ভূখ- শাসন করত। কিন্তু ১৯৪৮ সাল থেকে বসবাস করার প্রমাণ দেখাতে সরকার যে দাবি করছে তা পূরণ করা অনেকের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। তাদের হয় এ বিষয়ে কাগজপত্র নেই নয়ত তারা ছয় দশকের চেয়ে কম সময় ধরে বাস করছে বলে দেখা যায়। মানবাধিকার কর্মীরা একথা বলেন।

যারা ১৯৪৮ সাল থেকে মিয়ানমারে বাস করছে বলে প্রমাণ করতে পারবে, তারা কেবল অনুমোদনক্রমে নাগরিকত্ব পাওয়ারই যোগ্য হবে। এরূপ নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে পূর্ণ নাগরিকত্বের তুলনায় অনেক কম অধিকারই দেয়া হয় এবং এরূপ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারও করা যেতে পারে। অধিকন্তু, তাদের রোহিঙ্গা নামে নয়, ‘বাঙালী’ নামে শ্রেণী বিভাগ করা হবে। এতে বোঝানো হবে যে, তারা বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসী এবং তাদের বহিষ্কার করার সুযোগ খোলা রাখা হবে। সরকারের নয়া নীতি রাখাইন এ্যাকশন প্ল্যান নামে অভিহিত। এর অধীনে যেসব রোহিঙ্গা অনুমোদনসূত্রে নাগরিকত্ব লাভের শর্ত পূরণক করতে পারবে না বা ‘বাঙালী’ পরিচয় গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে, তাদের বহিষ্কার করার আগে শিবিরগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ঐ পরিকল্পনাকে ‘স্থায়ীভাবে পৃথক ও রাষ্ট্রবিহীন করার এক নীলনক্সা ছাড়া আর কিছুই নয়” বলে উল্লেখ করে। ওয়াচ জানান, পুনর্বাসনের এ কাজে যোগ দিতে মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে অনুরোধ করেছিল, কিন্তু সংস্থাটি এতে অস্বীকৃতি জানায়।

সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস ও দৈনিক যুগান্তর

Exit mobile version