বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় আখ চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে ইক্ষু চাষ শুরু হয়েছে। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প’ এর অধীনে, কৃষকদের তামাকের পরিবর্তে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং কৃষকরা এ চাষে ব্যাপক সাফল্য লাভ করছেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় আলীকদমে মোট ১২৪ জন কৃষকের মাধ্যমে ১২৪ বিঘা জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করে কৃষকদের উন্নতমানের বীজ, সার, কীটনাশক বিতরণসহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মাঠ দিবস ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের আখ চাষের আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করা হচ্ছে, যা তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলছে।
স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আখ চাষের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে লাভজনক। মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলাফল অনুসারে দেখা গেছে, প্রতি বিঘা আখ চাষ থেকে কৃষকরা ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাভ করতে পারছেন। তামাক চাষে যেখানে একই পরিমাণ জমিতে লাভ হয় ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা, সেখানে আখ চাষ থেকে প্রাপ্ত আয় অনেক বেশি, যা কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহিত করছে।
আলীকদম উপজেলায় প্রচলিত তামাক চাষের কারণে কৃষি জমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তামাক চাষ লাভজনক হলেও এটি কৃষকদের শারীরিকভাবে ক্ষতি করে এবং উচ্চ মূলধন ও পরিশ্রমের কারণে এটি ক্রমশ অলাভজনক হয়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বর্তমানে অনেক কৃষক তামাক চাষ পরিহার করে আখ চাষে মনোনিবেশ করেছেন। এতে তামাকের পরিবর্তে আখ চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আখ চাষে সাথী ফসল হিসেবে আলু, মুলা, গাজর, সিম, বাঁধাকপি, শাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষও করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের কৃষক আবুল হাসেম জানিয়েছেন, আখ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসলের মাধ্যমে তিনি অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা আয় করেছেন, যা তার পারিবারিক খরচ মেটাতে সহায়তা করছে।
এই উপজেলায় বিএসআরআই আখ ৪২ (রংবিলাস), বিএসআরআই আখ ৪১ (অমৃত), বিএসআরআই আখ ৪৭, চায়না, সেনেগাল, ব্ল্যাক রুবি জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। আখ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, পানি সেচের ব্যবস্থা ও নগদ অর্থের মাধ্যমে সরাসরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং তাদের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের এক ফসলী উঁচু জমি আখ চাষের জন্য উপযোগী। অল্প পরিশ্রম ও স্বল্প খরচে এই জমিতে আখের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছে, যা কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হচ্ছে।
কৃষকদের তামাক চাষ থেকে সরে এসে আখ চাষে উৎসাহিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আখ চাষীদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে চাষীদের সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আখ চাষী মো. আজিম উদ্দিন জানান, তিনি নিজস্ব ১ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন এবং ইতোমধ্যেই আখ বিক্রি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। এছাড়া সবজি চাষ থেকেও ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন।