পার্বত্য চট্টগ্রামে মুরংদের ক্রামা ধর্ম ও ইহুদীবাদ


‛ক্রামা’― একটি নতুন ধর্মের উত্থান এবং এই অঞ্চলের ভূরাজনীতি
আশির দশকে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে একটি নতুন ধর্মের উদ্ভব হয়। এই ধর্মের নাম ক্রামা (Crama/krama) ক্রামা নামক ধর্মের ফাউন্ডিং ফাদার বলা হয় ক্রামাডি মেনলে ম্রো’কে। খুব অল্প বয়সে তিনি তার সম্প্রদায়ের জন্য ধর্ম, সংষ্কৃতি তৈরি করেন। Kramadi Menley Mro এর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা যায় তার ভাগ্নে Fungre Mro এর মাধ্যমে। তিনি জানান- মেনলে ম্রোর জন্ম ১৯৬৫ সালে বান্দরবানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তার বাবার নাম Mansing Mro. মায়ের নাম Tumtey Mro.
ম্রো সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মের ফাউন্ডিং ফাদার খ্যাত মেনলে ম্রো পনেরো বছর বয়স থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করেন। তখন ১৯৮০ সাল। সেসময়েও ম্রো সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা ধর্ম, সংষ্কৃতি তৈরি হয়নি। তারা সবাই মারমা ভাষায় কথা বলে; গ্রামের স্কুল গুলিতে মারমা ভাষাতেই পড়ালেখা করানো হয়।
কিন্তু এর মাত্র এক বছরের মধ্যে পনেরো বছরের মেনলি ম্রো নতুন বর্ণমালায় গান, কবিতা লেখেন এবং তা স্কুলের শিক্ষকের নিকট উপস্থাপন করেন। শিক্ষক চমকে ওঠেন, কারন মাত্র পনেরো বছর বয়স্ক একটি বাচ্চার হাত ধরে নতুন এলফ্যাবেট, রিলিজিয়নের উদ্ভব বেশ আশ্চর্যজনক।
অতঃপর সম্প্রদায়ের সবাই তাকে পাগল, উদ্ভ্রান্ত আখ্যা দেয়। কিন্তু মেনলে ম্রোর গ্রামের একজন বৃদ্ধ; যার নাম Langpung, তিনি মেনলে ম্রকে বিশ্বাস করেন এবং বলেন ‛আমি তোমার সাথে আছি’। পরবর্তী সময়ে তিনিই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে ক্রামা ধর্ম ও এই ধর্মের আচার, নিয়ম কানুন, সংস্কৃতি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন। যেহেতু তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি, তাই সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পান।
একদিন Langpung নামক ওই বৃদ্ধ ব্যক্তি জঙ্গলে বাঁশ কাটছিলেন, এসময় হটাৎ করেই একজন সাদা চামড়ার আগন্তুক আসেন এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন “ক্রামা নামক যে ধর্মের উদ্ভব আর হয়েছে, কারো সাধ্য নেই তা রুখে দেয়। তবে আপনি যদি ক্রামা ধর্মের উপর হতে বিশ্বাস হারান,
তবে তা কোনো একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে”
কথিত আছে বা মানুষ মনে করে, ক্রামা ধর্মের উদ্ভাবক মেনলি ম্রো অনেক সাধনা করে উক্ত ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন এমন একটি ধর্মের উদ্ভাবক তিনি হবেন― ইত্যাদি। কিন্তু এসব সম্পুর্ন মিথ্যা। সত্য জানলে আপনি চমকে উঠবেন।
ক্রামা নামক ধর্ম কিংবা ওই সম্প্রদায়ের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সর্বপ্রথম সামনে আসে ১৯৮৪ সালে। ঠিক তার দুই বছর আগে ১৯৮২ সালে ইসরাইলি প্রাইম মিনিস্টার Golda Meir এর সরাসরি নির্দেশে এই অঞ্চলে আসেন বিখ্যাত ইহুদি রাব্বি Eliyahu Avichail. তাকে এই সাবকন্টিনেন্টে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের হারিয়ে যাওয়া দশটি ট্রাইবের একটিকে খুঁজে বের করা।
ইহুদি রাব্বি আভিকেইল সর্বপ্রথম আসেন মনিপুর, মিজোরাম তারপর মিয়ানমার। এগুলোর স্বপক্ষে কংক্রিট প্রুফ রয়েছে কিন্তু মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে ম্রো সম্প্রদায়ের কাছে তিনি আসলেও তার কোনো শক্ত প্রমান আজ অব্দি পাওয়া যায়নি। তবে খুব বিশ্বস্ত এবং শক্তিশালি একটি সূত্র অনুযায়ী, আভিকেইল বাংলাদেশে আসেন
এবং তিনিই মূলত ক্রামা ধর্মের ফাউন্ডিং ফাদার মেনলে ম্রোকে তার সম্প্রদায়ের স্বকীয়তার জন্য নতুন বর্ণমালা তৈরি করে দেন এবং সেই বর্ণমালাই মেনলে ম্রো তার স্কুল শিক্ষককে দেখিয়েছিলেন; যা দেখে তিনি চমকে ওঠেন। কারন খুব গভীরভাবে খেয়াল করলে আপনি দেখবেন, ম্রো সম্প্রদায়ের ওই বর্ণমালার সাথে ইসরাইলি হিব্রু বর্ণমালার বেশ মিল রয়েছে।
তো যাইহোক, ইহুদি রাব্বি আভিকেইল এই অঞ্চলে ইহুদিদের হারিয়ে যাওয়া যে দশটি ট্রাইবের একটিকে খুঁজতে এসেছিলেন, তাদেরকে খুঁজে বের করে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে তার বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। জানা যায়, ওই দফায় আভিকেইল এই অঞ্চল থেকে প্রায় ষোলো হাজার ইহুদি ব্লাডলাইন কানেক্টেড নারী পুরুষকে ইসরাইলে এভাকুয়েট করেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের ম্রো সম্প্রদায়ের সেই ক্রামা নামক ধর্মের জন্মদাতা মেনলে ম্রোর বয়স যখন উনিশ বছর, তখন তিনি তার সম্প্রদায়ের মানুষকে জানান কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাকে দূর দেশে যেতে হবে এবং পনেরো বছর পর তিনি আবারও ফিরে আসবেন।
কিন্তু তিনি আর কোনোদিন বাংলাদেশে আসেননি। কারন তিনি ওই যাত্রায় ইহুদি রাব্বি আভিকেইলের সাথে ইসরাইল চলে গিয়েছিলেন।
আপনি এদেশের কোনো বুদ্ধিজীবীকে প্রশ্ন করতে দেখবেন না যে, মেনলি ম্রো দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ কোথায় আছেন? কোন দূরদেশে তিনি গিয়েছেন? কেনো একটি ধর্মের উত্থান ঘটানোর পর নিজের সম্প্রদায়ের কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেলেন?
উক্ত ঘটনাবলী থেকে একটি বিষয় ক্লিয়ার যে- বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ক্রামা নামক ধর্মের উত্থান ঘটানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং এই ধর্মের অনুসারী ম্রো সম্প্রদায়ের লোক ইহুদি ব্ল্যাডলাইনের; যা আজ অব্দি কেউ স্বীকার করেনি।
এখন প্রশ্ন- এই ম্রো সম্প্রদায় কিংবা ক্রামা ধর্মের কথা কেনো বললাম?
ইদানিং ভারতের মিজোরাম, মনিপুর, মিয়ানমারের চীন এবং কাঁচিন প্রদেশে হটাৎ করেই ক্রামা ধর্ম ম্যাসিভলি স্প্রেড হচ্ছে। স্বভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, উক্ত ধর্মের বিষয়ে যদি মেনলি ম্রো সত্যিই স্বপ্ন দেখে থাকেন এবং তা যদি একান্তই বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের একটি সম্প্রদায়ের ধর্ম হয়ে থাকে
তাহলে সেই ধর্মের আদর্শ এত দূরে কিভাবে আসলো? কেনোই বা সেই ধর্মের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য এত প্রতিযোগিতা? অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে উক্ত ধর্মের উত্থান ঘটানোর পেছনে কোনো পরাশক্তির ইন্ধন রয়েছে।
ক্রামা ধর্ম সম্পর্কে আপনি গুগল সার্চ ইঞ্জিনে তেমন কিছুই পাবেন না, এর জন্য আপনাকে যেতে হবে ডার্ক ওয়েবে। আপনাদের যাদের ডার্ক ওয়েবে এক্সেস রয়েছে, ঘাটাঘাটি করলেই দেখতে পাবেন- এটা একটা মিক্স রিলিজিয়ন।
তার মানে এই ধর্মে হিন্দুইজম, জুডাইজম এবং ক্রিশ্চিয়ানিজম― তিনটিই ইনক্লুডেড। একটি নতুন ধর্মে দুটি প্রতিষ্ঠিত আব্রাহামিক ধর্মের সংমিশ্রণই বলে দেয়; এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সহজ সরল কেউ নন একইসাথে উক্ত ধর্ম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও ভিন্ন। মূলত ক্রামা ধর্মের উৎপত্তির মূল লক্ষ্য, একটি জুডিও-ক্রিশ্চিয়ান স্টেট তৈরি।
জুডিও ক্রিশ্চিয়ান বলতে ইহুদি ক্রিশ্চিয়ান মিক্স বোঝায়। যেহেতু এই ধর্মের উত্থান হয়েছে একজন ইহুদি রাব্বির হাত ধরে তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানে ইহুদিদের কন্ট্রিবিউশন থাকবে। আর এই অঞ্চলে তাদের কন্ট্রিবিউটররা হলো কুকি, ম্রো এর ইহুদি ট্রাইব।
রাব্বি আভিকেইল মনিপুর মিজোরামের কুকি এবং বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের ম্রো সম্প্রদায়কে ‛Bnei Maneshe’ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ এরা হলো মনিশার সন্তান; যারা ইহুদিদের হারিয়ে যাওয়া দশটি সম্প্রদায়ের একটি। অন্যদিকে ক্রিশ্চিয়ানদের মাঝে পেন্টা কোস্টালিজমে বিশ্বাসী পেন্টাকোস্টালরা জুডিও ক্রিশ্চিয়ান স্টেট তৈরিতে সাহায্য করছে।
পেন্টাকোস্টালরা হলো ধর্মীয় রীতিনীতি এবং বিশ্বাসের দিক থেকে ইহুদিদের সবচেয়ে কাছের। তাদের সাথে ইভ্যাঞ্জেলিকদেরও বেশ ভাল সম্পর্ক; কারন ইভ্যাঞ্জেলিকরাও ইহুদিদের খুব কাছের। যার সবচেয়ে এক্সপ্লিসিট এক্সাম্পল বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও একজন ইভ্যাঞ্জেলিক প্রটেস্ট্যান্ট ক্রিশ্চিয়ান; যার দরুন আপনি দেখতে পান ট্রাম্পের সবচেয়ে কাছের এডভাইজার ‘জ্যাসন গ্রিনব্ল্যাট এবং ডেভিড এম. ফ্রিডম্যান ইসরাইলি নাগরিক। এমনকি তাদের একজন পশ্চিম তীরের অবৈধ অধিবাসীতবে পেন্টাকোস্টাল কিংবা ইভ্যাঞ্জেলিক― তাদের দুই গ্রূপের সাথেই অর্থডক্স, ক্যাথলিক এবং প্রটেস্ট্যান্টদের বেশ বিরোধ রয়েছে।
তো যা বলছিলাম― তাদের জুডিও-ক্রিশ্চিয়ান স্টেট তৈরির প্লান বহুদিনের। প্ল্যান অনুযায়ী ভারতের মিজোরাম মনিপুর থেকে বাংলাদেশের হিল ট্রাকসের কিছু অংশ হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন সহ কয়েকটি প্রদেশ নিয়ে তৈরি হবে উক্ত জুডিও ক্রিশ্চিয়ান স্টেট। এটাই আল্টিমেট গ্রেট প্ল্যান। আর এই প্ল্যান এক্সিকিউট করতে পরাশক্তিরা বিভিন্ন ধরনের ফন্দি আটছে।
তাদের হাতে রয়েছে গ্লোবাল ম্যাপ ট্রান্সফর্মেশন প্রজেক্ট; যার মাধ্যমে এই অঞ্চলে র্যাডক্লিফের মানচিত্রে পরিবর্তন আনা হবে। এছাড়াও এদেশে তাদের ডিপ স্টেটের ফার্স্ট লেয়ার খ্যাত ব্ল্যাকরক ফাংশন করে; যারা মুলত সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট
এবং চেন্জ ইনিশিয়েটিভ এর আড়ালে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আবার চেন্জ ইনসিয়েটিভের ব্যানারে Rand Military বাংলাদেশে তাদের স্পেশাল মিশন অপারেট করে।
কিছুদিন আগে জানতে পারলাম, Kellogg Brown & Root নামক ইউএস মিলিটারি কন্ট্রাক্টর বাংলাদেশের গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর সাথে কনসালটেন্ট হিসেবে ব্যবসা করছে।
তারা মাতারবাড়ি থেকে কক্সবাজারের মহেশখালী হয়ে ঢাকায় থার্ড প্যারালাল গ্যাস পাইপলাইনের জন্য কাজ করছে। মনে প্রশ্ন জাগে, একটা মিলিটারি কন্ট্রাক্টর কোম্পানি বাংলাদেশের গ্যাস কোম্পানির সাথে কিসের ব্যবসা করে?
আপাতত আমরা করিডোর এক্সেস দেওয়ার মাধ্যমে গ্রেটার প্ল্যানে অফিসিয়ালি ইনভলব হলাম। দিন এখনও অনেক বাকি। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা কি পারবে, তার সভরেন্টির প্রশ্নে কোনোপ্রকার আপোষ না করে মেরুদন্ড টানটান করে পরাশক্তির চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে? ওরা না পারলেও আমাদের পারতে হবে। আমরা জানি বাস্তবতা খুব কঠিন; তবে সেই বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করার সময় এসেছে।
সূত্র: লেখকের ফেসবুক পোস্ট
বি. দ্র: লেখায় প্রকাশিত তথ্য, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব