সংঘর্ষে দুই নাগা বিদ্রোহী নিহত

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে দফায় দফায় গোলাগুলি

fec-image

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবারও অশান্তির ছায়া। অরুণাচল প্রদেশের মিয়ানমার সীমান্তে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, চলমান সংঘর্ষে দুই জন নাগা বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষের মাঝে ফের ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (৬ জুন)। ভারতের অরুণাচল প্রদেশের লংডিং জেলার দুর্গম সীমান্ত অঞ্চলে সেনা ও আসাম রাইফেলসের যৌথ বাহিনী টহলরত অবস্থায় হঠাৎ করে হামলার মুখে পড়ে।

এই সংঘর্ষের মূল পটভূমিতে রয়েছে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং এর ফলে সীমান্তে সক্রিয় হয়ে ওঠা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বিশেষ করে নাগা বিদ্রোহী সংগঠন এনএসসিএন (খাপলাং-ইউংআং) গোষ্ঠীর তৎপরতা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে বলেই দাবি করা হচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী ও আসাম রাইফেলসের যৌথ বাহিনী শুক্রবার সকালে সীমান্তের দিকে টহল দিচ্ছিল। এ সময় হঠাৎই এনএসসিএন (খাপলাং-ইউংআং) বিদ্রোহীরা হামলা চালায়।

এর পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় বাহিনী। কয়েক ঘণ্টার দফায় দফায় লড়াইয়ের পর দুই জন বিদ্রোহী নিহত হয়। সেনাদের দাবি, নিহতরা এনএসসিএন (খাইএ-ইউংআং) গোষ্ঠীর সদস্য।

এছাড়া সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল, এম-৪ রাইফেল এবং একটি গ্রেনেড লঞ্চার। সেনাবাহিনীর দাবি, এনএসসিএন সদস্যরা তাদের নিহত সঙ্গীদের দেহ ফেলে পালিয়ে যায়। নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়েছে ওই এলাকায়।

ভারতের তিনটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য – অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর – মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় ১,৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। শুধু অরুণাচলেরই রয়েছে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এনএসসিএন (আইএম) গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি বহাল থাকলেও এনএসসিএন (খাপলাং) গোষ্ঠীর সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি নেই। ২০১৭ সালে গোষ্ঠীটির প্রধান এসএস খাপলাংয়ের মৃত্যুর পর সংগঠনটি ভেঙে যায় ও কয়েকটি উপ-গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে ইউংআং নেতৃত্বাধীন শাখাটি অরুণাচল ও আসামে সক্রিয়।

অরুণাচল-মিয়ানমার সীমান্তে এই ধরনের সংঘর্ষ নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক গোলাগুলির ঘটনা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উপস্থিতি নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা মহলে চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের সেনাবাহিনী নজরদারি ও অভিযান আরও জোরদার করতে বাধ্য হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ভারত, মিয়ানমার সীমান্তে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন