কক্সবাজার সৈকতের বর্জ্য এখন সম্পদ, ফিরবে সৌন্দর্য
প্রতিদিন কক্সবাজারে ভ্রমণে আসেন হাজারও পর্যটক। সাথে আনা পলিথিন ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলসহ অসংখ্য বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা সৈকত জুড়ে।
তবে কক্সবাজার পৌর এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও নিয়ন্ত্রণ সনাতন পদ্ধতিতেই হচ্ছে। শহর এবং সৈকত থেকে বর্জ্য আনা হয় কস্তুটি ঘাট ভাগাড়ে। পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয় বিশাল এই বর্জ্যের স্তুপ। ময়লা পোড়ায় দূষিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন নগরীর বাতাস।
কিন্তু এর ঠিক বিপরীত চিত্র চোখে পড়বে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যস্থাপনা এই দুই এলাকায় নেওয়া হয়েছে একটি প্রকল্প। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে সৈকতরে সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে তার একটি উদাহরণ টেকনাফ এবং উখিয়ার এই প্রকল্পটি।
সনাতন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যা মানবজীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রাণ ও প্রকৃতির এই অপূরণীয় ক্ষতির কথা মাথায় রেখে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে উখিয়া এবং টেকনাফের ১৪টি বাজারে ৫ হাজার দোকান এবং ৫ হাজার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে একটি সবুজ এবং একটি নীল বালতি। সবুজ বালতিতে পঁচনশীল বর্জ্য আর নীল বালতিতে অপঁচনশীল বর্জ্য রাখছেন এলাকার বাসিন্দরা।
বর্জ্য সংগ্রহকারীরা বাসাবাড়ি এবং দোকান থেকে পঁচনশীল এবং অপঁচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করছেন ময়লা সংগ্রহ ভ্যানের আলাদা আলাদা বাক্সে।
সংগ্রহ করা পঁচনশীল বর্জ্য থেকে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার। যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর অপঁচনশীল বর্জ্য বস্তার রাখা হচ্ছে প্লাস্টিক রিসাইকেলিং কারখানায় বিক্রির জন্য।
এ বিষয়ে ইউএনডিপির সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট ম্যানেজার বলেন, এই প্রজেক্টের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্জ্য সংগ্রহের মৌলিক সেবাগুলো প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে উখিয়া থেকে টেকনাফের সড়কের আশপাশের বাজার অঞ্চলগুলোতে যেখানে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই অঞ্চলগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। তাই বর্জ্য এখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। নালা-নর্দমায় বা খেলা অঞ্চলে ফেলে রাখা হয়। আমরা বর্তমানে ৫ হাজার ঘর এবং ৫ হাজার দোকান নিয়ে কাজ করছি। এতে করে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা সম্ভাবনা কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য যেমন জৈব এবং অজৈব পৃথক পৃথক সংগ্রহ করা হয়। এতে করে আমরা ভালো মানের কপোস্ট বা জৈব সার তৈরি করতে পারি। এছাড়া যেগুলো রিসাইকেল করা সম্ভব সেগুলো আলাদা করে সংগ্রহ করা হয়। রিসাইকেল করা এসব জিনিসের কিছু মূল্য থাকে যা বিভিন্ন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। অবশেষে যেসব বর্জ্য বাকি থাকে যা জৈব-সার হয় না বা বিক্রি করা যায় না সেগুলো নিরাপদে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, বর্জ্য এমন একটি সম্পদ যা থেকে আয় এবং কাজের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। মূলত এ ধারণাটিকে সামনে রেখে ব্র্যাকের পাশাপাশি উখিয়া এবং টেকনাফে বর্জ্য ব্যবস্থপনা বাস্তবায়ন করছে ইউএনডিপি। ২০১৮ সালে সুইডিস সরকারের অর্থায়নে শুরু হয়েছিলো প্রকল্পটি।