গরুটির মায়ায় কোরবানির মাংস খেতে পারিনি : আরশ খান


আমি তখন অনেক ছোট খুব সম্ভবত ক্লাস ওয়ানে পড়ি। তখন কোরবানি দেওয়ার জন্য একটা কালো গরু কিনে আনা হয়েছিল। তাও ঈদের প্রায় ২০ থেকে ২৫দিন আগে। এই ২০ দিনের মধ্যে গরুটির সঙ্গে আমাদের আত্মীক একটি সম্পর্ গড়ে উঠেছিল।
ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া একজন স্টুডেণ্টের কাছে গরুটি প্রথমত ছিল বিষ্ময়। প্রথমে দূর থেকে দেখতাম। তারপর একটু এটু কাছে যাওয়া শুরু করলাম।
সাধারণত আমরা দেখি গরু একটু অ্যাগ্রেসিভ হয়, অচেনা মানুষ দেখলে তেড়ে আসে। কিন্তু ওই গরুটি ছিল একেবারেই আলাদা। শান্তু প্রকৃতির। আমি আর আমার ছোট বোন দিনের বেশির ভাগ সময় গরুটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। একদিন দুই ভাইবোন মিলে গরুটাকে কাঁঠালপাতা খাওয়াতে গেলাম, গরুটা খেলো।
আমরাতো ভীষণ খুশি। একজন আরেকজনকে বললাম, আরে একি ব্যাপার- গরুতো পাতা খাচ্ছে। দুই ভাইবোন পাতা এনে গরুকে দিতাম। গরু পাতাগুলো খাওয়া শেষ করলে আবার পাতা সংগ্রহ করতাম। এই কাজটি ছিল আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির ব্যাপার।
বিষয়টা এমন দাঁড়ালো যে স্কুলে থেকে ফেরার যেটুকু দেরি, এরপরে গরু নিয়ে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যেত। এরপর এমন একটা অবস্থা কোরবানির ঠিক দুই দিন আগে মাকে বললাম, গরুটা কোরবানি দিতে পারবা না। দুই ভাইবোন খুব কাঁদলাম।
মা ওই সময় প্রথমে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করলো তারপর ছোট্ট করে বললো, আচ্ছা দেখি।
তো, দেখি মানে কি?-মা বললো, ঠিক আছে গরুটা কোরবানি দেবো না। আমরা খুশি হলাম। দুই ভাইবোন ঠিক করলাম, গরুটা আমরা পালবো। কিন্তু ঈদের দিন সকালেই দেখলাম বাড়ির উঠানে আর গরুটা নাই।
তখনতো আর বুঝতাম না কোরবানির মানে কি? এটুকু বুঝতাম, মা বলছে মানে গরুটা আর কোরবানি দেওয়া হচেছ না। এটা আমাদের দুই ভাইবোনের কাছেই থেকে যাবে।
তখন আমরা বগুড়াতে থাকি। ঈদের দিন সকালে গরুটাকে না দেখে দৌড়ে মায়ের কাছে গেলাম। জানতে পারলাম যে, গরুটা কোরবানি দেওয়া হয়ে গেছে।
আমরা কাঁদছিলাম। মা কোরবানি শুরু গল্পটা আমাদের শোনালো। তারপর ভাবলাম গরুটা অটোমেটিক কোরবানি হয়ে গেছে।
অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম। আমরা দুই ভাইবোন ওই গরুর মাংস আর খাইনি।
সূত্র : রাইজিংবিডি