পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভবিষ্যতে কখনই যেন পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী বা অন্যায় কাজে ব্যবহার না করা যায় সেজন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের আগের এই সময়টা অনেক কঠিন। আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।
তিনি বলেন, অবৈধ ও অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বারবার জনরোষের মুখোমুখি হয়েছে এবং অনেক সৎ সদস্যকে এর মূল্য দিতে হয়েছে।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ১৫ বছরে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে রূপান্তর করা হয়েছিল। আজ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সেই আস্থার জায়গায় ফিরে যাওয়া, যেখানে পুলিশ মানুষের নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ছিল ভঙ্গুর, জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব ছিল ব্যাপক। সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ ও সংস্কারমূলক পদক্ষেপের ফলে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাঙালি পুলিশ সদস্যদের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এটি এক গৌরবময় অধ্যায়। শহিদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি আজকের দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুনর্গঠনের প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা হ্রাস, অপরাধ দমনে বিশেষ অভিযান, জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিতে নানা প্রণোদনা চালু করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ শুধু অপরাধ দমন নয়, এটি ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও মানবিক রাষ্ট্রের ভিত্তি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বাহিনীকে আরো মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
দুর্গাপূজা, বিশ্ব ইজতেমা, ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষসহ সাম্প্রতিক সব বড় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় পুলিশ বাহিনীর নিরলস পরিশ্রমের প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি অপরাধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে এখন পুলিশ আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।’
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ বাহিনী একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নেতৃত্ব দেবে। ‘এই দেশ ও জনগণের জন্য আমাদের যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে পুলিশের ভূমিকাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘গণতন্ত্র, শান্তি ও ন্যায়বিচারের পথে আমাদের এই অভিযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই হবে প্রথম সারির যোদ্ধা।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে দেশে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা অনেক। নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ ও ভোটাররা যেন নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুতরাং কারও দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্রত হিসেবে নির্বাচনে নিজেদের নিয়োজিত করবেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। অশুভ চক্র আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের ঐক্যকে ভেঙে দিতে সব শক্তি নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। একে প্রতিহত করার জন্য আপনাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা অনেক ন্যায্য, অন্যায্য আন্দোলনে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখেছি। এসব পরিস্থিতিতে আপনারা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি একই রকম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আগামী দিনগুলোতেও আপনারা কাজ করে যাবেন।