parbattanews

বাঁশকোড়ল : পাহাড়ে জনপ্রিয় খাবার: ধংসের মুখে বাঁশসম্পদ

%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%b6%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%a1%e0%a6%b2

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতি জনগোষ্ঠীর কাছে প্রিয় সবজি বাঁশ কোড়ল (কচি বাঁশ)। পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে বাঁশ বাগানে জন্ম নেয়া নতুন নতুন বাঁশের অঙ্কুরকে স্থানীয় ভাষায় এর নাম বাঁশ কোড়ল। সবজি হিসেবে খুবই সুস্বাদু তাই বাঙালিদের খাদ্যর তালিকায়ও যুক্ত হয়েছে এটি।

অঙ্কুর থেকে বাঁশে পরিণত হওয়ার আগেই পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে প্রতিদিন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে বাঁশকোড়ল। অবাদে বাঁশ কোড়ল নিধন রোধে স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় দিন দিন এটি নিধন বেড়েই চলছে।

দেশে জনসংখ্য বৃদ্ধির সাথে বাঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং সবজির তালিকায় কচি বাঁশ সংযুক্ত হওয়ায় দিন দিন বাঁশ হ্রাস পাচ্ছে। পার্বত্যঅঞ্চলে বাঁশের উপর নির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছিল দেশের বিখ্যাত চন্দ্রঘোনা পেপার মিল। বাঁশ ও কাঁচা মালের অভাবে প্রতিনিয়ত বন্ধ থাকতে হয় দেশের বৃহৎ পেপার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে। একদিকে উজার হচ্ছে বাশঁ অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

স্থানানী সূত্র মতে, জেলার সাত উপজেলার হাট-বাজার এবং প্রত্যান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীদের বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি বাঁশকোড়ল সুস্বাধু খাবারে পরিণত হওযায় অবাধে আহরণের ফলে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের ফলে বাঁশের বংশ বিস্তারে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।

সূত্র মতে, গত ৫ বছরে জেলার ছয় কোটিরও বেশি বাঁশ অঙ্কুরেই স্থানীয়রা সাবাড় করেছে। এভাবে খাবারের নামে বাঁশকোড়ল নিধন অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাঁশসম্পদ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া প্রতি ৪০-৫০ বছর পরপর বাঁশে ফুল এসে বাঁশ ঝাড়ে মরে যাওয়ায় বাঁশের বংশ বৃদ্ধিতে আরেক বড় বাঁধা।

বন বিভাগ জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে মিতিংঙ্গা, মুলি, টেংরা, দুলু, কালী ও ছোটিয়াসহ আরো কয়েক প্রজাতির বাঁশ জন্মায়। বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাঁশের বংশ বৃদ্ধি হয়। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের খাদ্য তালিকায় বাঁশকোড়ল দিয়ে সবজি ছাড়াও বিশেষ ধরনের স্যুপ তৈয়ার করে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাঁশ কোড়ল।

বান্দরবান পাল্পউড প্লান্টেশন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাশ জানান, বাঁশকোড়ল পাহাড়িদের প্রিয় খাবার। এনিয়ে মন্ত্রনালয় থেকে কোন নির্দেশনা না থাকায় আমরা কিছু করতে পারিনা। তবে বাঁশ কোড়ল কাটা বন্ধ করতে পারলে যেমন দেশে বাশেঁর চাহিদা মেঠানো সম্ভব হবে তেমনি সরকারের রাজস্বের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

জেলা সদরের বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রেতা জানান সুইম্যাচিং ও মেম্রাউ জানান, সপ্তাহের দু বাজার বারে আটি বেঁধে ২০০ থেকে ২৫০টি বাঁশর কোড়ল বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। প্রতি আটিতে ১০-১২টির মূল্য ৩০-৬০ টাকা। এদের মতো স্থানীয় আরও অনেক পাহাড়ি নারী সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন প্রতিদিন।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত জুম চাষ, ঝিরি-ঝরনাসহ পানির উৎসস্থলগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং পাহাড় থেকে নতুন বাঁশের কোড়ল সংগ্রহ করে সবজি হিসেবে ব্যবহার করায় বাঁশের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পাহাড়ে বাঁশ সংরক্ষণে সরকারের এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এছাড়া খাবারের তালিকায় বাঁশকোড়লের রোধ করা না গেলে কাঁচামাল সংকটে পড়তে পারে দেশের বিখ্যাত চন্দ্রঘোনা পেপার মিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, আদিকাল থেকে বাঁশকোড়ল পাহাড়িদের জনপ্রিয় খাদ্য। ইদানিং বাঙালিদের খাবার তালিকায় বাঁশের কোড়ল স্থান করে নেয়ায় বাঁশ সম্পদ ঝুকির মধ্য পড়েছে। এ ছাড়া ৪০-৫০ বছর পরপর বাঁশে ফুল আসে এবং বাঁশ মরে যায়। এ ছাড়া বাঁশের কোড়লের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

Exit mobile version