বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪০ ভাষার সন্ধান, অর্ধেকই বিপন্ন
বাংলাদেশে বাংলাসহ পাহাড় ও সমতল এলাকায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাসহ মোট ৪১টি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এসব ভাষার অর্ধেকই বিপন্নের পথে। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব ও জীবিকার প্রয়োজনে নিজের আদি নিবাস ত্যাগ করে শহরে বসবাসসহ নানা কারণে এসব ভাষা বিলুপ্ত হবার পথে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ‘বাংলাদেশের ন-ৃভাষা-বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ নামক জরিপে বাংলা ছাড়া ওই ৪০টি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কাজ চলমান রয়েছে। কাজ সম্পূর্ণ হলে সমীক্ষার প্রতিবেদন ১০খণ্ড বাংলায় এবং ১০ খণ্ড ইংরেজিতে বই আকারে প্রকাশিত হবে।
সাধারণত যেসব ভাষাভাষীর জনসংখ্যা তিন হাজারের কম সেসব ভাষাকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে বসবাস রত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪০টি ভাষার মধ্যে অর্ধেকই বিপন্ন বলে জানিয়েছেন মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনটির মুদ্রিত প্রথম খণ্ডের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বাংলাসহ যে ৪১টি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে তা হলো- বাংলা, বম, কন্দ, চাক, চাকমা, ঠার, মান্দি, হাজং, খাসি, খাড়িয়া, খিয়াং, খুমি, কোচ, কোল, উর্দু, লসাই, মারমা, ম্রো, অহমিয়া, মণিপুরি মৈতৈ, মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া, মুন্ডা, কানপুরি, মাহলে, কুড়ুখ, পাংখোয়া, মালতো, পাত্র/লালেং, রাখাইন, সৌরা, মাদ্রাজি, সাঁওতালি, তেলুগু, তঞ্চঙ্গ্যা, ককবরক, নেপালি/গুর্খা, রেংমিটচা, কোডা, লিঙ্গাম, উড়িয়া ও সাদরি।
জানা যায়, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটটের উদ্যোগে বাংলাদেশের ভেতরে চালু বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর অবস্থা জানার জন্য ২০১৩ সালে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় সমীক্ষার কাজ। ২০১৬ সালের জুন মাসে সমীক্ষার মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হলেও এখনও চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মূল লক্ষ্য সারা বিশ্বের সব মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা করা। এটি গঠনের আইনে ২৩টি দায়িত্বের কথা বলা আছে। সেগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষা প্রচার-প্রসার, দেশ-বিদেশের ক্ষুদ্রজাতিসম‚হের ভাষা নিয়ে গবেষণা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস সংরক্ষণ, অক্ষর বিন্যাস ও মুদ্রণের ব্যবস্থা করা ম‚ল দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই ইনস্টিটিউটের কাছে।
বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় ভাষা কতটি, ইতোমধ্যে কী কী ভাষাবিলুপ্ত হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে কতটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, তারা কী কী ভাষায় কথা বলে, পাহাড়ে বিলুপ্তপ্রায় ভাষা কতটি, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীগুলোর কতটি ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে- সংশ্লিষ্ট ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাইলে তা জানাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের নৃভাষা-বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসব তথ্য জানা যাবে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও লিপি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কী কী কাজ করছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাংলাদেশের নৃ-ভাষা-বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা কর্মস‚চি পরিচালিত হয়েছে। সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ও ভাষাভাষীর সংখ্যা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি আরও জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে ইনস্টিটিউটের নিয়মিত প্রকাশনা-মাতৃভাষা পত্রিকা এবং মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ জার্নালে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়া ইনস্টিটিউট কর্তৃক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করা হয় বলে জানান তিনি।