অগ্রগতি না থাকায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প বাতিল করল সরকার

fec-image

দীর্ঘদিন ধরে কোনো অগ্রগতি না হওয়া এবং ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়ায় চট্টগ্রামের মিরসরাই ও বাগেরহাটের মোংলায় প্রস্তাবিত ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রকল্পটি এখন জিটুজি কাঠামো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে আলোচনা মূলত ধারণাগত পর্যায়ে ছিল—জমি নির্ধারণ ও সম্ভাব্য ঠিকাদার নিয়ে প্রাথমিক আলাপ হয়েছিল, কিন্তু কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। মিরসরাই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) তহবিলও বাতিল হয়েছে। এখন সেই জমি অন্য কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে বেজা, যদিও কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় মিরসরাইয়ে ৯০০ একর ও মোংলায় ১১০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। ২০১৯ সালে একনেকে অনুমোদিত এই প্রকল্পে ৯৬৫ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়, যার মধ্যে ৯১৫ কোটি টাকা ভারতের এলওসি থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের এলওসি পর্যালোচনা বৈঠকে অগ্রগতি না হওয়া প্রকল্পগুলো তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়—ফলে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প কার্যত বাতিল হয়ে যায়।

প্রকল্পের ধীরগতির মূল কারণ ছিল ভারতের শর্ত—ভূমি উন্নয়ন কাজ অবশ্যই ভারতীয় ঠিকাদারকে করতে হবে এবং ৬৫ শতাংশ সরঞ্জাম ভারত থেকে আনতে হবে। এসব সীমাবদ্ধতার কারণে কোনো ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়নি। বাংলাদেশি ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিলেও ভারত তাতে রাজি হয়নি।

নীতিবিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্পটি বন্ধ হওয়া দুঃখজনক হলেও অগ্রগতি ছাড়া এত বড় জমি অব্যবহৃত রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ভারতের এলওসি শর্তে বাংলাদেশি ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় প্রকল্প এগোয়নি। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক দিক।”

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন