এক মাসে শতাধিক পশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু

ঈদগাঁও অবৈধ কারখানা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা রহস্যজক

fec-image

ঈদগাঁওয়ে রমিজ আহমদের পুরাতন বাগান এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি একটি অবৈধ ব্যাটারি কারখানা গড়ে তুলেছেন। এই অবৈধ কারখানা থেকে ঢালুতে নেমে আসা বিষাক্ত তরল পদার্থে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। গলিত তরল পদার্থ বন এলাকায় পশু চারণে যাওয়া আসার রাস্তায় জমে থাকছে। সেখান থেকে ওই বিষাক্ত তরল পদার্থযুক্ত পানি খেয়ে একের পর এক গরু ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এমনকি ছটফট করতে করতে আক্রান্ত গরু ছাগল মারা যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত গরু ছাগলের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা পার্বত্যনিউজের এ প্রতিবেদককে এই অভিযোগ তুলে ধরছে।

প্রতিবাদ বা ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে ব্যাটারী কারখানার মালিকরা এলাকাবাসীকে উল্টো হুমকি দিচ্ছে। তারা পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নাকি এসব কারখানা খুলেছে বলে দম্ভ করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জমির উদ্দিনের ভূমিকায় এলাকাবাসীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের সাথেও রহস্যজনক আচরণ করছেন। তিনি পার্বত্যনিউজের এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করলেও ব্যস্ততার অহেতুক অজুহাত দেখান এবং কোনোরকম সৌজন্য বা ভদ্রতা বজায় না রেখেই বারবার কেটে দেন। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানা থেকে নিয়মিত টাকা পান বলেও অভিযোগ আছে।

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায়, কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে বিগত এক মাসে শতাধিক পশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়ন ঈদগাঁও’র ৫ নং ওয়ার্ড কালির ছড়া শিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের শতাধিক গরু, মহিষ ও ছাগলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বিগত এক মাসে। এ মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কিত পশু মালিকদের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্যও। পশুর আকস্মিক এ মৃত্যুর খুঁজে বের করার ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা কারখানার বিষাক্ত তরল পদার্থে তাদের পশুগুলো মারা যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত গরু মালিক লেড়ু জানান, তাদের তিন ভাইয়ের দুটি গরু মারা গেছে এবং আরো ছয়টি গরু অসুস্থ ও সুস্থ অবস্থায় নামে মাত্র দামে বিক্রিতে বাধ্য হয়েছেন। তারা আরো জানান, ইতিমধ্যে উক্ত এলাকার শতাধিক পশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এবং এখনো অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে অনেক।

গতকাল মঙ্গলবার মারা যাওয়া গরু মালিক আলী হোসেনও একই ঘটনা জানান। অপর গরু মালিক মজুম তাহের জানান, তার গরুরও একই ভাবে মৃত্যু হয়েছে। পুরো এলাকা জুড়ে এ আতষ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান মিনার একই অভিযোগ করে বলেন, তিনি ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানালেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং জনৈক রেজাউল করিম সিকদার বহিরাগতদের নিয়ে এ অবৈধ কারখানাটি করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর কামরুজ্জামান কবির এবং অভিযুক্ত রেজাউল করিম সিকদার কেউই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাইছেন না। চেষ্টা করেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে একজন চিকিৎসক প্রতিনিধি এলাকায় পাঠানোর কথা জানিয়েছেন প্রাণিসম্পাদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান। তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন বিধায় জরুরি ভিত্তিতে এলাকায় পরিদর্শনে আসতে পারছেন না।

কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ, এম, খালেকুজ্জামান পার্বত্যনিউজকে বলেন, এখনো ওই উপজেলায় প্রাণী সম্পদ বিষয়ক পৃথক কার্যক্রম শুরু হয়নি। জেলা অফিসের আওতায় আছে। তাই পশু মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে একজন প্রতিনিধি পাঠাবেন।

অভিযোগ উঠা কারখানার বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জমির উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করে ব্যস্ত বলে বারবার কেটে দিয়ে কথা শুনারই প্রয়োজন মনে করেননি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে এ অবৈধ কারখানা বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্ত পশু মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ চাইছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঈদগাঁও
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন