ঈদগাঁও বাজারে কোটি টাকার অবৈধ বহুতল স্থাপনা নির্মাণ


কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও বাজার প্রাণ কেন্দ্রে কোটি টাকা মুল্যের সরকারি খাস জায়গায় অবৈধ বহুতল স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব চলছে। জায়গাটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও কর্তৃপক্ষ রহস্যময় কারণে দীর্ঘদিনেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার প্রধান কেন্দ্রস্থল ঈদগাঁও বাজার কবিরাজ সিটি সেন্টারের পশ্চিমে বাঁশু দে এর স্বত্বীয় জায়গায় চুক্তিভিত্তিক বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে এক ডেভেলপার কোম্পানি। এ সুযোগে ঐ জায়গা সংলগ্ন দক্ষিণে কোটি টাকা মূল্যের তিন শতক সরকারী খাস জায়গাও অবৈধ দখলে নিয়ে তার উপর অবৈধ বহুতল স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রচার আছে জিনিয়াস এফজি নামের এক ডেভেলপার কোম্পানি কতিপয় খুচরা রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি আমলাদের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এ অবৈধ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে।যদিওবা এসব ডেভেলপার কোম্পানি স্থাপনা নির্মাণ কাজের শুরুতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাইনবোর্ড স্থাপনের বিধি থাকলেও সচেতন জনগণ থেকে বিষয়টি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে দৃশ্যমান কোন সাইনবোর্ড স্থাপন চোখে পড়েনি। তবে চারপাশ ঘিরে রেখে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভূমি সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে যেনতেনভাবে কিছু ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে জায়গাটি তাদের দাবি করে আইনি মার প্যাচে ফেলে তড়িঘড়ি করে এ অবৈধ নির্মাণ কাজ শেষের মিশনে নেমেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা ।
অতি সম্প্রতি ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার খাস জায়গাটিতে সাইনবোর্ড স্থাপনে গেলে তাকে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয় বলে অভিযোগ উঠে।এ ঘটনায় উক্ত কর্মকর্তা জড়িতদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করলে ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজে মরিয়া হয়ে দৌড় ঝাঁপ শুরু করে স্থাপনা নির্মাণে জড়িতরা।
প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে বাঁশু দে ও ডেভেলপারের নির্মাণ কাজে জড়িত মোঃ: আব্দুল আজিজ ও অন্যরা জায়গাটির কাগজপত্র তাদের এবং উপজেলা ভূমি অফিসের সাথে তাদের বুঝাপড়া হয়েছে বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ও বাজার এলাকার বাসিন্দা আলমগীর তাজ জনির সাথে কথা হলে জানান, তিনিও জায়গাটি খাস জেনে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে উদ্ধারের জন্য বলেছেন,তবে পরে আর কিছু জানাননি।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন , সরকারি খাস জায়গায় সাইনবোর্ড স্থাপনে গেলে জায়গাটা তাদের দাবি করে বাঁধা দেয়। এতে তিনি তাদের নোটিশ জারি করেন।এ মাসের মধ্যে এসিল্যান্ড স্যারের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি(অতিরিক্ত দায়িত্ব) ঈদগাঁও উপজেলা শারমিন সোলতানার সাথে কথা হলে জানান, তিনিও বিষয়টি জেনেছেন এবং এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে কথা হলে জানান, ভূমি সংশ্লিষ্ট বিষয় যেহেতু এসিল্যান্ড জানবেন। সেহেতু তিনিই এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।
এদিকে বাজারের সচেতন ব্যবসায়ীদের দাবি , ছোট বড় ছয় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ ঈদগাঁও বাজার চলতি অর্থ বছরে প্রায় সাত কোটি টাকায় ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। এ বাজারটি পরিচালনায় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তিশালী কোন সংগঠন গড়ে না উঠায় প্রতিনিয়ত বাজারের হাজার কোটি টাকা মূল্যের খাস জায়গা , ফুটপাত দখল ও নিরব চাঁদাবাজি চলে আসলেও। এত মোটা অংকের সরকারী রাজস্বের বাজারে উপজেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত জনগণের প্রাণের দাবি গণসৌচাগার নির্মাণে জায়গা সংকটের অজুহাতে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এ বিশাল বাজারে দৈনিক অর্ধলক্ষ নারী পুরুষের আগমন ঘটে। তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় যুগযুগ ধরে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা অবর্ণনীয়।
উক্ত খাস জায়গাটি বাজারের কেন্দ্রস্থল ও প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় তা উদ্ধার করে একটি আধুনিক গৌণশৌচাগার স্থাপনা নির্মাণ করলে উপজেলার লাখো জনগণ তার সুফল ভোগ করবে। তাই তারা অবিলম্বে জায়গাটি উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ,ইতিপূর্বে অর্ধশত বছর রাজস্ব দিয়ে আসা ঈদগাঁও মাছ বাজাররে পূর্বাংশ ও গরু মাংসের দোকানের খাস জায়গাটি রাতারাতি অবৈধ দখলে নিয়ে স্থানীয় কতিপয় ভূমিখেকো লাখো টাকায় বিগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি শাখাকে ম্যানেজ করে যেনতেন কাগজ দেখিয়ে বহুতল স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলেছে। যা উচ্ছেদ করে তার উপর সরকারি স্থাপনা নির্মাণ করে রাজস্ব খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য তখনকার মাছ ব্যবসায়ীরা দাবি তুললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এতে কান দেয়নি।

















