ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ


জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় বিষয়ে সর্বৈব মিথ্যাচার করা হচ্ছে মন্তব্য করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
উপদেষ্টা তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘অতিসম্প্রতি মহল বিশেষের পক্ষ থেকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারে বলা হচ্ছে যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ (তিরাশি) কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এটি সর্বৈব মিথ্যাচার।’
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই যেহেতু এটি একটি পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা স্বাভাবিকভাবেই অপপ্রচারকারীরা এই বিষয়ে কমিশনের কোনো ভাষ্য সংগ্রহ করেনি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ করেনি।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাচারের ফলে জনমনে যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে পরিষ্কারভাবে জানানো যাচ্ছে যে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে গত ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত কমিশনের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১ হাজার ১২৬ টাকা, যা বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
কমিশনের মোট বরাদ্দের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘কমিশনের এই আপ্যায়ন ব্যয়ের সিংহভাগ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার সময় এবং কমিশনের অন্যান্য বৈঠকের সময়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তিন ধাপের আলোচনাকালে প্রতিদিন কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, তাদের সহযোগীগণ, সাংবাদিক তথা গণমাধ্যমকর্মী, কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রথম পর্যায়ে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলের ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে এই খাতে মোট ব্যয় হয় ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে ২৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় ব্যয় হয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। এই পর্বের বৈঠকগুলোতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাপোর্ট স্টাফদের আপ্যায়ন বাবদ গড়ে প্রতিদিনের ব্যয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম ছিল এবং এই সময় একাধিক দিনের বৈঠকগুলো সকাল থেকে রাত অবধি চলেছে এবং সে কারণে সকলের জন্য নাশতার পাশাপাশি দুপুরে এবং রাতে খাবারের আয়োজন করতে হয়েছিল। তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে সাতটি, এতে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং এই পর্বের মোট ব্যয় ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।’
আইন উপদেষ্টা বলেন যে এর বাইরে কমিশনের সভা হয়েছে ৫০টি, যার অনেকগুলো ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এবং দিনব্যাপী। এই বাবদ মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সাথে বৈঠক, তিনটি সাংবাদিক সম্মেলন সবগুলো মিলে ১৩টি বৈঠকে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৪০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের সাথে বৈঠক হয়েছে ১৩টি, তাতে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। উল্লেখ্য যে, বিশেষজ্ঞরা কোনো রকম ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করেন নাই।
আইন উপদেষ্টা আরো জানান যে এর বাইরে নয় মাসে অতিথি আপ্যায়নের জন্যে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা। এসব অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বিদেশী কূটনীতিবিদ, দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সম্পাদক, সাংবাদিক এবং অন্যরা।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্ণিত বিস্তারিত হিসাব থেকে এটি স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এই দাবি কেবল মিথ্যাচারই নয়, ঐকমত্য কমিশন এবং তার কাজকে হেয় করার লক্ষ্যে একটি সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত অপচেষ্টা মাত্র। কমিশনের মেয়াদকালে কমিশন অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে যার প্রমাণ হচ্ছে প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর।
তিনি অরো বলেন, সাংবাদিকরা সহজেই কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পেরেছেন, কমিশনের সহ-সভাপতি ও সদস্যরা সবসময়ই গণমাধ্যমে তথ্য প্রদানে অকুণ্ঠিত থেকেছেন, নিয়মিতভাবে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। তদুপরি বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে দিনব্যাপী প্রচারিত হয়েছে।
কমিশন আশা করে, যে অসাধু মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এই প্রোপাগান্ডা পরিচালনা করছেন তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। কমিশন তার মেয়াদকালে দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়ে এসেছে এবং আশা করে সেই ধারা অব্যাহত রেখে গণমাধ্যমগুলো এই বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।
সূত্র : বাসস

















