কাপ্তাই লেক খনন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

kaptai watere

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক : কাপ্তাই লেক খনন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ‘সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২০১৫ সালের সেপ্টম্বরে সর্বোচ্চ ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদপাদন করা হয়েছিল এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।এবার এর ক্ষমতা আরো বাড়াতে লেক পুন:খননের সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের ‘সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির’র ৪৪তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এতে কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সভাপতিত্ব করেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের ২০০৮-০৯ এবং ২০০৬-০৭ অর্থ বছরের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট, ২০০৯-১০ এর অডিট আপত্তি/মন্তব্যের ওপর পর্যালোচনা করা হয়।

এছাড়া পূর্ববর্তী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। কমিটি আলোচিত অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারিশ করে। এছাড়া সৌরবিদ্যুৎ এর মাধ্যমে সড়ক বাতি প্রকল্প গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।

সংসদ সচিবালয় জানায়, বৈঠকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লেক পুন:খননের জন্য সুপারিশ করে।পার্বত্য চট্টগ্রামের লামা থানায় উম্মুক্ত স্থানে কয়লা সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করারও সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আফছারুল আমীন, বেগম রেবেকা মমিন, মো. শামসুল হক টুকু, মঈন উদ্দীন খান বাদল, মো. রুস্তম আলী ফরাজী এবং বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে চালু হয়েছিল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ওই সময় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। স্বাধীনতা পরবর্তীতে সময়ে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়। বর্তমানে কাপ্তাই লেকে ১০৮.৩ ফুট এমএসএল (মীন সী লেভেল) পানি রয়েছে। লেকে ১০৯ ফুট এমএসএল এর বেশি পানি ধারণ সম্ভব নয়। তবে বৃষ্টিতে লেকে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। গত ১১ সেপ্টেম্বর লেকে পানি ছিল ১০৭.৯ ফুট। কিন্তু ঐ দিন রাতে ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণে লেকে গত ১২ সেপ্টেম্বর পানির পরিমাণ ১০৮.৩ ফুট এমএসএল পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

এছাড়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির ৫টি ইউনিট বর্তমানে পুরোদমে সচল রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন্দ্রটি অতীতের সকল রেকর্ডও ভঙ্গ করেছে। কাপ্তাই লেকে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি মজুদ থাকায় ৫টি ইউনিট থেকে সর্বোচ্চ ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৬২ সালের শুরুতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্বোধন হলে পরিকল্পিত ৩টি জেনারেটরের মধ্যে ২টিতে উৎপাদিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়। ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট তৃতীয় জেনারেটরটি স্থাপনার কাজ শেষ হলে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। তবে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপে দেখা যায়, প্রাক্কলিত হিসাবের চাইতে জলাধারটির ধারণ ক্ষমতা ২৫ শতাংশ বেশি রয়েছে। ব্যবহারিক উপাত্তে মূল হিসাবের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহের তথ্য বিদ্যমান থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। তাই এ অতিরিক্ত ক্ষমতা আহরণের উদ্দেশ্যে প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি অতিরিক্ত জেনারেটর ১৯৮৭ সালে স্থাপন করা হয়।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র জলীয় শক্তি দ্বারা পরিচালিত বিদ্যুৎ স্থাপনা। বাংলাদেশের বৃহত্তম জলসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প ‘কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প-এর অংশ হিসেবে এ জলবিদ্যুৎ স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে চালু করার পর জলবিদ্যুৎ স্থাপনা জাতীয় গ্রিডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম ছিল। পরবর্তী সময়ে দু’টি পর্বে স্থাপনাটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মোট ২৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন