খাগড়াছড়ির সেরা জয়িতা পানছড়ির মনোয়ারা

পানছড়ি প্রতিনিধি:

তৃণমূলে সেবা দিয়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় জেলার সেরা জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন পানছড়ি উপজেলার মনোয়ারা বেগম।

মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বেগম রোকেয়া দিবসে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে তাঁর হাতে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।

পানছড়ি উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মৃত নবী হোসেনের মেয়ে মনোয়ারা। ছোট বেলা থেকেই কাজ করেছেন সমাজ উন্নয়নে। ১৯৯৩ সালের তিনি এইচএসসি পাশ করার পর ১৯৯৮ সালে নিজ এলাকায় বে-সরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাক পাড়া কেন্দ্রে শিক্ষকতা দিয়েই নামেন সমাজ উন্নয়নে। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তিনি ব্র্যাকের শিক্ষকতা ছাড়েন। পরবর্তীতে নিজেকে সমাজের আরও সামনের কাতারে আনার জন্য ২০০৩ সালে ইউপি নির্বাচনে ৩নং পানছড়ি ইউপির সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। মহিলা সদস্যা হিসেবে তিনি ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে নারীদের উন্নয়ন কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। সে সময়ে তিনি যৌতুক বিরোধী, যৌতুক বিহীন বিবাহ, বাল্য বিবাহ রোধ, গর্ভবতী মায়েদের নানান পরামর্শ, বিভিন্ন সাংসারিক সমস্যার সমাধানসহ নারীদের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন প্রচুর সফলতা। ২০১৩ সালে তিনি হাল ধরেন পানছড়ি বাজারের পুরনো গো-হাঁট এলাকায় গড়ে উঠা সানরাইজ কিন্ডার গার্ডেন এন্ড জুনিয়র হাই স্কুলের। ঝিমিয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব তাঁর হাতে আসার পর থেকেই জ্বলে উঠে আশার প্রদীপ। বিদ্যালয়ে সহজ নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পড়া আদায়, সহকর্মীদের সাথে সব সময় পরামর্শ, দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি দিয়ে প্রথম বছরেই পান সফলতা। ২০১৩ সালের পিইসি ফলাফলে শতভাগ পাশ করলেও জিপিএ ফাইভ আসে ২টি। ২০১৪ সালে জিপিএ ফাইভ আসে ৩টি। সর্বশেষ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ফলাফলে উপজেলার সেরা স্থান দখলে নেয় বিদ্যালয়টি। ২০১৬’তে জিপিএ ফাইভ ৭টি ও ২০১৭ সালে ১৪টি। ২০১৮সালেও তাদের স্থান অক্ষুন্ন থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

বর্তমানে উপজেলার সেরা এই বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিক্ষার্থী অভিভাবক খুরশিদা আক্তারসহ কয়েকজন জানান, আসলে এখানের পদ্ধতি খুব সুন্দর। বিশেষ করে ডায়েরিটা মূল্যায়ন করা হয় বেশী। তাই শিক্ষক ও অভিভাবক উভয়েই সচেতন। যার ফলে বাচ্চাদের থেকে দিনের পড়া দিনেই আদায় করে নেয়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মনোয়ারার ছোট ভাই পূজগাং মূখ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতান মাহামুদ ও মাস্টার্স করে ঢাকায় চাকরিরত ছোট বোন আমেনার লেখাপড়ার সব ধরনের খরচাদির অবদান এই জয়িতার।

তাঁর এই সফলতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে আমি কি করেছি বা করতেছি তা মূল্যায়ন করবে জনসাধারণ। তবে আমি সব সময় ভালো ব্যবহার দিয়ে নিজের সেরাটুকু বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছি বলেই আজ আমাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। উপজেলা ও জেলায় সেরা হয়ে এবার যেতে হবে বিভাগীয় পর্যায়ে। তাই সকলের দোয়া কামনা করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিকা বড়–য়া জানান, সমাজ উন্নয়নে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জয়িতাদের নাম পাঠানো হয়েছে। বিচারক মণ্ডলী যোগ্যতার ভিত্তিতেই পানছড়ির মনোয়ারাকে জেলার সেরা নির্বাচিত করেছেন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পানছড়ি শাখায় কর্মরত মো. মোখলেছুর রহমানের সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম দুই সন্তানের জননী। ছেলে মো. মাইনউদ্দিন ঢাকা তেঁওগাও কলেজে মাস্টার্স প্রথম বর্ষ ও মেয়ে তানিয়া রহমান ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন