খাদ্য ও পানিবাহী রোগ থেকে সতর্কতা

fec-image

করোনাভাইরাসের পুরো পৃথিবী জর্জরিত। আর এই সময়ে দেশের ঋতু পরিক্রমায় এসেছে বর্ষাকাল। গরম থেকে স্বস্তি আর প্রকৃতিকে স্নিগ্ধ রূপ দেওয়া পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগের পসরাও এনেছে এই ঋতু।

ফলে কোভিড-১৯’য়ের আতঙ্কের সঙ্গে আরও যোগ হতে যাচ্ছে পানিবাহী রোগ জন্ডিস, টাইফয়েড, মশাবাহী রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদির আতঙ্ক।

খাদ্যবাহী রোগগুলো সাধারণত প্রাণঘাতী না হলেও ভোগান্তি কম নয়। আর বর্তমান সময়ে যে কোনো সাধারণ রোগ শারীরিক জটিলতায় তো ফেলবেই সঙ্গে আর্থিক দুরাবস্থাকে আরও ভয়াবহ করবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করবে, চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হলে বাড়বে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, ভারতের ফোর্টিস হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. উপাসনা শার্মা বলেন, “বর্ষাকালে খাদ্যবাহী রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায় প্রায় ১০ গুন।

সাধারণত দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তা ভালো হয়ে গেলেও রোগের তীব্রতা ভেদে হাসপাতালেও ভর্তি হওয়াও আবশ্যক হতে পারে। বৃদ্ধ, গর্ভবতী ও স্তনদানকারী মা, শিশু এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা সবচাইতে বেশি।”

এই রোগগুলো শনাক্ত করা শক্ত কোনো কাজ নয়। সংক্রমণের উৎস ভেদে এদের উপসর্গ হয় ভিন্ন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, খাদ্যবাহী রোগের সাধারণ উপসর্গ হল পেট ব্যথা, বমিভাব ও বমি, ডায়রিয়া, শারীরিক দুর্বলতা, মৃদু জ্বর ইত্যাদি।

এসব উপসর্গ দেখা দিলে নিজেই ডাক্তারি না করে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত ফোনে কথা বলা উচিত।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার শিকার হলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল প্রচুর পানি পান করা। এছাড়াও আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শার্মা।

– পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি তাজা ফলের রস পান করতে হবে।

– ‘ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস)’ শরীরের ‘ইলেক্ট্রোলাইট’য়ের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।

– চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

– প্রস্রাবের দিকে নজর দিতে হবে। প্রস্রাব হওয়া উচিত হালকা, সচ্ছ এবং নিয়মিত বিরতিতে।

– মৃদু স্বাদ, হালকা চর্বির খাবার বেছে নিতে হবে। যেমন- কলা, ভাত, সিদ্ধ করা সবজি, সুপ ইত্যাদি।

– প্রচণ্ড মসলাদার, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

– দুদিনের বেশি সময় ধরে বমি ও ডায়রিয়া, মলের সঙ্গে রক্ত আসা, মলের রং গাঢ় হওয়া, ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি তাপমাত্রার জ্বর, মাথা ঘোরানো, পেট ব্যথা, পানিশূন্যতা ইত্যাদি চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।

প্রতিরোধ

রোগের জীবাণু প্রায় সকল খাদ্য উৎসেই বিদ্যমান। বিশেষ করে যে খাবারগুলো কাঁচা খাওয়া হয় সেগুলোতে স্বভাবতই ঝুঁকি বেশি। তাই রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কেও জানিয়েছে ডা. শার্মা।

– সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। হাতের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা তাই শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, সকল রোগের জীবাণু থেকে বাঁচতেই জরুরি।

– বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।

– মাংস ও ডিম ভালোভাবে রান্না করতে হবে। কাঁচা বা আধা সিদ্ধ খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল।

– সকল খাবার রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

– ফল বেশিরভাগ সময়ই কাঁচা খাওয়া হয়। তাই তা ভালোভাবে ধুতে হবে। প্রয়োজনে খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া ভালো।

– খাবার প্রস্তুত করার আগে পরনের পোশাকের হাত গুটিয়ে নিতে হবে। যে কোনো অলঙ্কার খুলে নিতে হবে। লম্বা চুল বেঁধে নিতে হবে।

– ব্যবহারের পর সকল বাসনপত্র ভালোভাবে ধুয়ে রাখতে হবে।

– খাবার নিরাপদ করা ক্ষেত্রে তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফ্রিজে রাখা খাবার অবশ্যই গরম করে খেতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, টাইফয়েড, পানিবাহী রোগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন