ঘুমধুমে পিতা-সৎমাতার অত্যাচারের রক্তাক্ত মাতাহীন সন্তান!

fec-image

দরিদ্র পিতার পক্ষে সংসারের খরচ মেঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছিল। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাতা প্রবাসে পাড়ি জমান। মাতার পাঠানো টাকা পেয়ে বাবা’র বেপরোয়া জীবনযাপন। দ্বিতীয় বিয়ের কারণে নতুন করে কলহ সৃষ্টি। সন্তানদের ভরণপোষণ দিচ্ছেন না বাবা। উল্টো সন্তানদের প্রতিনিয়ত মারধর আর প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সৎ মাতার কু-প্ররোচনায় পিতা মারধরে রক্তাক্ত মাতাহীন সন্তান শাকিব। গুরুতর জখমাবস্থায় শাকিব প্রাণভয়ে ছোট দুই বোনদের দেখার জন্য ঘরেও ফিরতে পারছেন না।

কথাগুলো বলেছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের তুমব্রু পশ্চিমকুলের সদ্য বিবাহিত যুবক মো.শাকিব হোসেন (২১)।

তার বর্ণনা মতে জানা যায়, পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে বাবা আবদুল মাবুদের ইচ্ছায় গত ৭ বছর পূর্বে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পাড়ি দেন শাকিবের মাতা। সেখান থেকে শাকিবের বাবা’র জন্য পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ব্যবসার করতে দফায়-দফায় ৬ লাখ টাকা পাঠান শাকিবের মাতা। পরিবারের ভরণপোষণের জন্যও আলাদা টাকা পাঠাতেন। সৌদি আরব থেকে মাতার পাঠানো ৬ লাখ টাকা ব্যবসা করার জন্য নিলেও বাবা আবদুল মাবুদ ওই টাকা পেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ব্যবসার নামে বেপরোয়া জীবনযাপনে মেঠে উঠেন। ঘরে থাকা মাতাহীন বড় সন্তান শাকিব হোসেন (২১), কন্যা তানিয়া আক্তার (১৬) ও ফাতেমা আক্তার (১২) কে পূর্বের মত দেখাশুনা করেন না।ঠিকমত ভরণপোষণ দিচ্ছেনা। নিয়মিত বাড়ীতে ফিরেনা। যেন এক অনিশ্চিত জীবনযাপনের কবলে পড়েছেন সন্তানরা।এরিই মধ্যে গত ৬-৭ মাস পূর্বে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সাফিয়া নামের এক সন্তানের জননী এক রোহিঙ্গা নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলেন বাবা আবদুল মাবুদ। ওই নারীকে ঘরে তুলে বার-বার ঘর ছেড়ে দিতে বলতেন সন্তানদের। বলতেন তোমরা ঘর ছেড়ে দাও।

গত ২১ এপ্রিল বাবা’র এমন কথার প্রতিবাদ করাই বাবা আবদুল মাবুদ বড় সন্তান শাকিবকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়ে এক কাপড়ে ঘর ছাড়া করেছেন। ঘরে ফিরলে নাকি জানে মেরে ফেলবে এমন হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন শাকিবকে।

এ বিষয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলে শাকিব বলেন, বাবা আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে। ঘর থেকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। এখন আমরা তিন ভাই-বোন কোথায় যাবো? ঘরে ফিরতে পারছিনা। মাতাহীন ছোট দুইবোনকে দেখতে যেতে পারছিনা। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর নালিশ করেছি। আগামীকাল ২৪ এপ্রিল সালিশি বৈঠকের কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাবা আবদুল মাবুদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার প্রথম স্ত্রী সৌদি আরবে বিয়ে করে ফেলেছে। তাই আমিও বিয়ে করে ফেলেছি। তবে প্রথম স্ত্রীর বিয়ের আইনগত কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেন নি আবদুল মাবুদ।

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউপি’র চেয়ারম্যান একে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শাকিবের নানা আবদুল মালেকসহ এসে ঘটনার মৌখিক জানিয়েছে। পরবর্তী পরিবারের সবাইকে ডেকে বৈঠক করা হবে। বৈঠকে বিস্তারিত জানা যাবে।

এ সংক্রান্তে ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুইঁয়া বলেন, কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন