কক্সবাজারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা

জমি ও ফ্ল্যাট মালিকদের শতকোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে

fec-image

কক্সবাজার শহরের হোটেল মোটেল জোনের ফ্ল্যাট মালিকদের সাথে প্রতারণা করছে অনেক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। বছরের পর বছর আটকে আছে বিনিয়োগ। সঠিক সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিচ্ছে না। উল্টো লাঞ্চিত ও হয়রানির শিকার ক্রেতারা। অনেকে সাফ কবলায় ফ্ল্যাট কিনেও পরিচালনা করতে পারছে না। ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। ফ্ল্যাট ক্রেতা ও জমির মালিকের স্বপ্নটুকু আটকে আছে ডেভেলপারদের হাতে। না পারছে সরতে; না পারছে কিছু করতে, এমন দশা!

গত ১৩ অক্টোবর পর্যটন শহরের ওয়ার্ল্ডবীচ রিসোর্টের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আর এফ বিল্ডার্সের সাথে ফ্ল্যাট মালিকদের মধ্যে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেছে। সম্পূর্ণ সাফ কবলায় ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটগুলোর মালিকরা সাজসজ্জা ও ডেকোরেশনের কাজ করতে গেলে বাধা দেয় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক ফ্ল্যাট মালিকদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এ সময় ফ্ল্যাট মালিক প্রফেসর ডাঃ আবুল কাসেম, সাংবাদিক রায়হান হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমান ও ফাতেমা আক্তার মারাত্মক আহত হন বলে অভিযোগ আসে। যদিওবা তা অস্বীকার করেছে ডেভেলপার পক্ষ।

ওয়ার্ল্ডবীচ রিসোর্ট ফ্ল্যাট ওনার্স এসোসিয়েশনের (রেজি:নং-২৩৫১) সভাপতি ক্যাপ্টেন শহীদ উদ্দিন মাহমুদ জানান, আর এফ বিল্ডার্সের এমডি হাজী দেলোয়ার, ছেলে ওমর ফারুক, ইমরান ফারুক ফয়সাল, আতিক, ব্যবস্থাপক শেখ আবদুল্লাহ, সৈয়দ বিনতে হাসান (হত্যা মামলার ১নং আসামি)সহ ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। প্রায় ৪০ জন ফ্ল্যাট মালিকদের উপস্থিতিতে ৪/৫টি ফ্ল্যাট মালিককে অপমানিত ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে।

ক্যাপ্টেন শহীদ উদ্দিন মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আর এফ বিল্ডার্স ২০১২ সালে সকল ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা। এখনো পর্যন্ত কাজ সমাপ্ত করে নি। উল্টো সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হোটেলটি দখলে রেখেছে। জিম্মি হয়ে আছে জমি ও ফ্ল্যাট মালিকগণ। অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাদের শতকোটি টাকার বিনিয়োগ।

ফ্ল্যাট মালিক প্রফেসর ডাঃ আবুল কাসেম জানান, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হয়রানি ও লাঞ্চিত করছে আর এফ বিল্ডার্স। জমির মালিকদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের শতকোটি টাকা আত্নসাত করেছে।

হয়রানির শিকার ফাতেমা আক্তার জানান, গ্রাহকরা তাদের ক্রয়কৃত ফ্ল্যাট বুঝে নেয়ার জন্য গেলে আর এফ বিল্ডার্সের নিয়োগকৃত সন্ত্রাসীরা হুমকি ধমকি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়। নানাভাবে লাঞ্চিত করে।

কক্সবাজার থেকে বিতাড়িত অনেক ফ্ল্যাট মালিক ইতোমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। নিজেদের কষ্টার্জিত সারা জীবনের সঞ্চয় রক্ষার জন্য প্রসাশনের সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

পর্যটনের উন্নয়নের জন্য সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করলে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প অনেক সমৃদ্ধ ও বেগবান হবে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আর এফ বিল্ডার্সের পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, হামলার মতো বড় কোন ঝামেলা হয় নাই। সামান্য মৌখিক বাড়াবাড়ি হয়েছে মাত্র। আমরা কেন মারধর করব?

তবু অভিযোগ কেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২/৩ টা ফ্ল্যাটের মালিক কাউন্টার বসাতে চাইলে সামান্য বিতর্ক হয়। আমরা তো বিক্রি করার সময় বলি নাই যে, যার যেমন ইচ্ছা কাউন্টার বসাবে। যারটা সে ভাড়া দিবে, অথবা নিজে থাকবে। দুইটার যে কোন একটা করতে পারবে। এভাবে তো নষ্ট করতে দেব না। কোন হোটেলে এমন নেই।

চুক্তি অনুযায়ী ২০১২ সালে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হলো না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওমর ফারুক বলেন, ২০০৮ সালের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের ২০১২ সালে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু জমির মালিকানা জটিলতায় আদালতের ‘স্টে আর্ডার’ ছিল। সে কারণে দুই/আড়াই বছর কাজ করতে পারি নি। ২০১৫ সালের শেষে দিকে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়। যারা পুরো টাকা দেয়নি তারা ফ্ল্যাট বুঝে পায়নি বলেও জানান আর এফ বিল্ডার্সের পরিচালক ওমর ফারুক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন