তিস্তা পানি বণ্টন ছাড়া স্বাক্ষরিত হলো সমঝোতা চুক্তি

fec-image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশের সবার প্রত্যাশা তিস্তা ও সুরমা-কুশিয়ারা পানি বণ্টন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে। এর মধ্যে সুরমা-কুশিয়ারা নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও, তিস্তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এগুলো হলো, অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্যান্য আইটি অ্যাপ্লিকেশনের মতো আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

অন্য সমঝোতা স্মারকগুলো হলো, ভারতে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল অ্যাকাডেমি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর)-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাদের আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক ও মানবপাচার মোকাবিলার মতো পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো প্রাধান্য পায়।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী দেশ দুটি এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করেছে।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে, শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউজে পৌঁছালে নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়।

এ উপলক্ষে ভিডিও ক্লিপে মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপসা সেতু, সড়ক নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি সরবরাহ, খুলনা-দর্শনা রেলওয়ে লাইন এবং পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলওয়ে লাইন প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর একটি বই নরেন্দ্র মোদির কাছে হস্তান্তর করেন। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন বইটি প্রকাশ করেছে।

শেখ হাসিনা তার সম্মানে হায়দরাবাদ হাউজে নরেন্দ্র মোদি আয়োজিত একটি মধ্যাহ্নভোজনেও অংশ নেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মাধ্যমে ভারতে তার চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন শুরু করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে যান। সেখানে তিনি এই মহান ভারতীয় নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে শেখ হাসিনা পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারত সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শংকর আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর স্যুইটের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত এবং নফল নামাজ আদায়, ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তার দেশে ফেরত আসার কথা রয়েছে। সূত্র: বাসস।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: তিস্তা পানি বণ্টন, ভারত, সমঝোতা চুক্তি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন