parbattanews

বাঙালহালিয়া বাজারে বাসি খাবার বিক্রি, তৈরি হচ্ছে নোংরা পরিবেশে

রাঙামাটি জেলা রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া বাজারে বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিকবার অভিযান চালানোর পরও এসব চায়ের হোটেলে সরবরাহ করা হচ্ছে বাসি ও নিম্নমানের খাবার। এর প্রতিকার হিসেবে আবারও অভিযানের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

বাজারে আসা এক ক্রেতা জানান, এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই হোটেলগুলোতে বাসি ও নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করছে। এসব খাবার খেয়ে প্রতারিত ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়া বেশির ভাগ হোটেল মালিকেরা খোলামেলা পরিবেশে হোটেল খোলা রেখে খাবার বিক্রয় করছে।

উপজেলার ৩নং বাঙালহালিয়া বাজারটি এক নামে পরিচিত। এটি উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী। এটি বান্দরবান, চট্রগ্রাম রাঙামাটির জেলার সংযোগস্থল হওয়ায় অন্যান্য বাজারের চেয়ে এ বাজারের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া রাজস্থলী উপজেলার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এ বাজারের ওপর দিয়ে। তারা এসব হোটেলে খায়। হোটেল মালিকেরা নিম্নমানের খাবার দিয়ে অধিক মুনাফা করছেন।

মিষ্টির দোকানগুলোতে কয়েক দিনের বাসি মিষ্টি রেখে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া খোলা বাজারে রং মিশ্রিত ভেজাল ও নিম্নমানের পেঁয়াজি, সিঙ্গারা, ছমুচা, বিভিন্ন ধরনের চপ, ছোলাসহ হরেক রকমের অনুপযোগী খাদ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। আজ রবিবার বাঙালহালিয়া বাজারের আর্মি ক্যাম্পের পাশে ব্রিজ সংলগ্ন একটি দোকানে গতকালের বিক্রি না হওয়া বাসি ছমুচা দিয়ে আজকে সিঙ্গারা তৈরি করে বিক্রি করার সময় এক ক্রেতা হাতেনাতে ধরে ফেলে। তার দোকানে নাকি প্রতিদিন বাসি নাস্তা বিক্রি করা হয়। অপরদিকে ভাতের হোটেলগুলোতে ভেজাল মরিচ ও মসলার গুঁড়ো দিয়ে মাছ, মাংস ও তরিতরকারি রান্না করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রায় প্রতিদিনই রান্না করা বাসি মাছ ও মাংসের ঝোল পরের দিন নতুনভাবে রান্না করা মাছ ও মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। এসব খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে পেটের পীড়া, আমাশয়, জন্ডিস ও গ্যাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে। অনেকে সেনেটারির কোনো লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ভেজাল কারবার।

এ ব্যাপারে মহিসিন নামে একজন ক্রেতা বলেন, বাইরে থেকে দেখতে ভালো ও উন্নতমানের আসবাবপত্রসমৃদ্ধ হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর পেছনের দিকে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ একেবারে খোলামেলা হয়ে গেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে ৩নং বাঙালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা বলেন, আমাদের এ বাজারটি একটি জনবহুল বাজার। এ বাজারে রাঙ্গুনিয়া, রাজার হাট, কোদালা শিলক, রাইখালী কারিগর পাড়া, ইসলামপুর সফিপুর এলাকা হতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন আসে, তারা প্রতিনিয়িত ভেজাল খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমি ও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে কয়েকবার সেমিনার করেছি। কিন্তু অসাধু চা ও ভাতের হোটেলের মালিকগণ মনগড়া ভেজাল নাস্তা বিক্রি করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শান্তনু কুমার দাশ বলেন, আমরা জানি প্রতিটি হোটেল-রেস্তোরাঁয় পঁচা, বাসি ও নিম্নমানের খাবার বিক্রয় করা হচ্ছে। এজন্য রাজস্থলী বাজার, ইসলামপুর, বাঙালহালিয়াসহ কয়েকটি বাজারে বেশ কয়েকবার স্বল্প পরিসরে অভিযান চালিয়েছি। এরপরও কেউ অনিয়মের আশ্রয় নিলে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করব। এসব অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

Exit mobile version