ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভারে ভারাক্রান্ত পেকুয়া উপজেলা পরিষদ: ২৫টি পদের মধ্যে ১৭ টি পদ শূন্য

পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পূর্ণ হলে পরিপূর্ণ হতে পারেনি অনেক দপ্তরের কার্যক্রম। পেকুয়া উপজেলাবাসীর জন্য ঐতিহাসিক একটি দিন ২৭ এপ্রিল। ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন একটি উপজেলা সংযোগ হয়। আর সেটির নাম দেয়া হয় পেকুয়া।

সংসদীয় আসনের ক্ষেত্রে ২৯৪.কক্সবাজার-১ আসনের চকরিয়া উপজেলার সাথে এ উপজেলাটি যোগ হয়ে চকরিয়া পেকুয়া হিসেবে অবহিত হয়। এইদিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপক’লীয় কলেজ মাঠে আয়োজিত স্মরণাতীতকালের বৃহত্তর জনসভায় লাখ লাখ নারী পুরুষের সম্মুখে পেকুয়া উপজেলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সালাহ উদ্দিন আহমদের পক্ষ থেকে শতাধিক গুরু মহিষ জবাই করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তর মেজবানে লক্ষ লক্ষ লোককে আপ্যায়ন করা হয়েছিল বলে তথ্যসূত্রে জানায়।

সূত্র জানায় ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও বি এন পির বর্তমান নিবার্হী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব সালাহ উদ্দিন আহমদের নিরন্তন প্রচেষ্ঠায় সরকারের পূণবিন্যাস সংক্রান্ত নিকার সভায় পেকুয়া উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্তটি চুড়ান্ত অনুমোদন হয়। যার স্মারক নং উজে-২/১ সি ৩/২০০১/১৬৭-২০০২। ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল পেকুয়া উপজেলার ঘোষাণা মুদ্রিত হয় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে। আর ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সালাহউদ্দিন আহমদকে সাথে নিয়ে এ উপজেলা শুভ উদ্বোধন করেন।

পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলাটি প্রথম শ্রেণীর জেলার মর্যাদা লাভ করে। হাটি হাটি পা পা করে জমি অধিকরণ থেকে শুরু করে ভবন নিমার্ণ করে আজ এই পর্যন্ত অবস্থানে নিয়েছে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ। সব কিছু পরিপূণ করতে না করতে চার দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে পেকুয়া উপজেলায় বিন্দু মাত্র উন্নয়নের ছোয়া লাগায় নি। সম্প্রতি সারাদেশে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন দেয়।

এই পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে বি এন পির মনোনীত প্রার্থী ও তৎকালিন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শাফায়েত আজিজ রাজু প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রতিষ্টা পর থেকে জোড়া তালি দিয়ে পরিচালনা করা হয় উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম। উপজেলার বিভিন্ন জন গুরুত্বর পূর্ণ পদে রয়েছে বিভিন্ন উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ওই কর্মকর্তাদের কে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে তাদের কে ও বিপাকে ফেলছে এবং সাথে জনসাধারণ কে ক্ষতি সাধন হতে হচ্ছে।

এর সুফল পেতে হলে অব্যশই স্ব স্ব পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে পেকুয়া উপজেলা কে আলোকিত উপজেলা হিসাবে গড়ে তোলতে হবে। উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে কর্মকর্তা শূণ্য রয়েছে। যার ফলে দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পেকুয়া উপজেলাবাসীকে। উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, ডাক বাংলো, স্কুল কলেজ, ডাক ভবন, টি এন্ডটি লাইন স্থাপন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, ২ শতাধিক ব্রীজ কালভার্ট নিমার্ণ, নতুন নতুন সড়ক নিমার্ণ সহ বহু উন্নয়ন করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ।

এদিকে দীর্ঘ পথ চলার পরও একটি পূণাঙ্গ উপজেলার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি পেকুয়ায়। এখনো উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দাপ্তরিক পদশূণ্যতার গ্নানি মুছতে পারেনি। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় উপজেলার ১৫৬ টি পদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ পদই শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণীর ২৫টি পদের মধ্যে ১৬ টি পদ শূণ্য রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি, উপজেলা নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার, উপজেলা পশু বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা পশু বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, বি আর ডি বি কর্মকর্তা, রেড় ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা না থাকার ফলে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে বিভিন্ন উপজেলা থেকে এনে অতিরিক্ত দায়িত পালন করছে।

পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কে জনগুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করতে হয়। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, উপজেলা নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সহ এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ একজন কমকর্তার পক্ষে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য। কষ্ট হলে ও দায়িত্ব পালনে নানা দূণীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে হয়রানির শিকার হতে হয় হাজারো মানুষের। এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কামাল হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এদিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো:শওকত রামু উপজেলায় দায়িত্ব পালন করার সাথে সাথে তিনি পেকুয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এক মাসে এক বার ও পেকুয়া উপজেলায় আসেন নি। ফলে নারী নিযাতন আদালতের বিভিন্ন তদন্ত রির্পোট পেশ করতে হলে অফিস সহকারী মিজানের পক্ষে হিমশিম খেতে হয়। এই দপ্তরের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে রামু উপজেলায় গিয়ে স্বাক্ষর নিতে হয়। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকতার পদ টি দীর্ঘ দিন ধরে শূণ্য থাকলেও ওই পদে কুতুবদিয়ায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা জনসংখ্যান কর্মকর্তা পদটি দীর্ঘ দিন ধরে শুণ্য রয়েছে। এতে ওই অফিসের একজন সহকারী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছে। কিছু দিন আগে কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম নাজমুল হক ও মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল বদলী হওয়ায় এখনো নতুন কর্মকর্তা যোগদান করেনি। ফলে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান পলাশ ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এই উপজেলা প্রতিষ্ঠাতা পেকুয়া কে করেছে সারা বাংলাদেশ মধ্যে মড়েল উপজেলা।

এদিকে দীর্ঘ পথ চলার পরও একটি পূণাঙ্গ উপজেলার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি পেকুয়ায়। এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিনিধি কে জানান উপজেলা পরিষদের শূণ্য পদের বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ কে বেশ কয়েকবার অবগত করেছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন