মানব পাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য আটক


সমুদ্রপথে মানব পাচারকালে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ঘটনায় মানব পাচারকারকাজে জড়িত চক্রের আরো ৪ সদস্যকে পলাতক আসামি করা হয়েছে।
আটককৃত আসামীরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড দক্ষিণ লম্বরি এলাকার এখলাছ মিয়ার ছেলে সৈয়দ আলম (২৯). একই এলাকার ইয়াহিয়ার ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ (২২), ইউনুস আলীর ছেলে মোঃ রিদুয়ান হোসেন (২০), কেফায়েত উল্লাহর ছেলে মোঃ নুরুল আফসার (২০) ও মৃত দিল মোহাম্মদের ছেলে আঃ হাকিম (৪০)।
পলাতক আসামীরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড দক্ষিণ লম্বরি এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে সাইফুল (৪০), তুলাতুলি এলাকার জহির আহম্মদের ছেলে মোস্তাফা প্রকাশ গোরাইয়া (২০), দক্ষিণ লম্বরী এলাকার মৃত ইউনুসের ছেলে নুর আলম (৩০) এবং দক্ষিণ লেঙ্গুরবিল এলাকার আইন্জা সদরের ছেলে সামসু (৪৫)। টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান(পিএসসি) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বেশ কিছুদিন যাবৎ গভীর সাগর দিয়ে মেরিন ড্রাইভ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েকটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র মাদক এবং মানব পাচারসহ চোরাচালান করতে তৎপর। এ সকল মানবপাচারে সক্রিয় চক্রের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয়। জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পরিচালিত চলমান বিশেষ অভিযানে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা নজরদারি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক পরিচালিত অভিযানগুলোর সর্বশেষটিতে একটি পাচারকারী চক্রের পাঁচ জন সদস্যকে সীমান্তে আটকসহ মায়ানমার হতে বিপুল সংখ্যক মানব পাচারের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) সীমান্ত এলাকায় মানব পাচার প্রতিরোধের লক্ষ্য নিয়ে একটি বিশেষ আভিযানিক দল গঠন করে গত কয়েক মাস ধরে নাফ নদী এবং তৎসংলগ্ন সীমান্তে কঠোর অবস্থান নেয়। এ পর্যায়ে, অপহরণ এবং মানব পাচার প্রতিরোধে ২ বিজিবি বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করলে,
আটক আসামিদের দেয়া তথ্য এবং ব্যাটেলিয়ানের নিজস্ব গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, বেশ কিছু দিন যাবত কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় মায়ানমার হতে বাংলাদেশে মানবও মাদক পাচার এবং বাংলাদেশ হতে মায়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পর্যন্ত মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত।
যার পরিপ্রেক্ষিতে, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন গত ১০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অধিনায়কের নেতৃত্বে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন একটি বিশেষ অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করেছে । গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই অভিযানে একটি সংগঠিত পাচারকারী দলের পাঁচ সদস্যকে হাতেনাতে আটক করা সম্ভব হয়।
আটককৃতরা হলেন: সৈয়দ আলম (২৯), মোঃ আব্দুল্লাহ (২২), মোঃ রিদুয়ান হোসেন (২০), মোঃ নুরুল আফসার (২০) এবং মোঃ আঃ হাকিম (৪০)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাচারের সাথে জড়িত কয়েকটি চক্রের কাঠামো, সদস্য এবং কার্যক্রমের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেলে ২বিজিবি টেকনাফের আশেপাশে বেশ কিছু এলাকায় দিনভর সাঁড়াশি অভিযান করলেও চক্রের অন্যকোন সদস্যকে এখন পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি।
চলতি বছরের অদ্যবধি পরিচালিত বিশেষ অভিযানগুলোতে সঙ্গবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রগুলোর সর্বমোট ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ২১ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। তবে, চক্রের মূল হোতা এবং বাকি সদস্যদের ধরতে আরও অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন।
পাচারকারী চক্রের পলাতক সদস্যদের সকলকে আটক করা হলেও অপরাধীদের দৌরাত্ব কমে যাবে বলে এলাকাবাসী জানায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পরিচালিত অভিযানে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়ন কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত ৫ জন আসামীকে প্রচলিত আইন অনুসারে স্থানীয় থানায় মামলা রুজুসহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান,মানবতা এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং মাদক ও মানব পাচার/চোরাচালানের বিরুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।