উজাড় হচ্ছে বন

রাজস্থলীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চলছে অবাধে কাঠ পাচার

fec-image

রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সারা বছর অবাধে কাঠ পাচারের মহৎসব চলছে। কতিপয় কাঠ চোরের যোগসাজসে প্রতিদিন উপজেলার নাইক্যছড়া,বাঙালহালিয়া,ইসলামপুর, জামতলা, বড়ইতলি, আমতলি উদালবুনিয়া হয়ে খুরুশিয়া রাজারহাট, রেন্জ কারিগর পাড়া হয়ে চন্দ্রঘোনার ফেরীর উপর দিয়ে শত শত ঘন ফুট কাঠ পাচার হচ্ছে।

এতে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রকৃতি। হাত করাত স্থাপন করে রাত দিন বৃক্ষ চিরাই করা হচ্ছে। কাঠ ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুড়ে গাছ কিনে তা কেটে মিনি ট্রাক ও চাঁদের গাড়ী বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছেন। ব্যবসায়ীরা গাছ কিনে চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, শিলক, সরভভাটা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। এসব কাঠ ইটভাটার জ্বালানি এবং পারটেক্স ও দেশলাই কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে বন ও প্রকৃতি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখা, দুর্যোগ মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বনের ভূমিকা অপরিসীম।

বনভূমি বেদখল চলতে থাকলে আগামি ৭/৮ বৎসরের মধ্যে সরকারের বেশির ভাগ বনভূমি বেদখল হয়ে যাবে। ফলে চরম বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বন বিশেষজ্ঞরা। গাছ উজাড় হলে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। অসময়ে বৃষ্টি-বাদল ও বন্যা দেখা দেবে। রাঙামাটির রাজস্থলী থেকে প্রতিদিন বনের কাঠ বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যাচ্ছে। গাছের দাম ভালো পাচ্ছেন বলে গ্রামাঞ্চলের অনেক গরিব মানুষ তাঁদের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন। বনজ দ্রব্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানার বাগান থেকে গাছ কাটতেও বন বিভাগের অনুমতি লাগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার বিপর্যয়ে পড়া বনাঞ্চল প্রকৃতির হাত থেকে রেহাই পেলেও কিছু অসাধু বনরক্ষক আর স্বার্থলোভী কাঠ চোরের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না পার্বত্য রাজস্থলীর জীববৈচিত্র।

পার্বত্য অঞ্চল লোপাট করে সুন্দরী, আকাশমনি, গামার, সেগুন সহ অবৈধ কাঠ পাচার চলছে।

প্রতিদিন গাছ সংগ্রহের জন্য গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তিমালিকানার গাছ কিনে তা কেটে প্রথমে বিভিন্ন সড়কের পাশে জড়ো করেন। বিশেষ করে রাঙ্গুনিয়ার কোদালা শিলকের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এসব কাঠ কিনে মিনি ট্রাক কিংবা চাঁদের গাড়ী ( জীপ গাড়ী) করে নিয়ে যাচ্ছেন।

বনের কাঠ চুরির মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ কাটা হচ্ছে। যে পরিমান কাঠ পাচার ও ইটভাটায় কাঠ পুড়ছে তাতে দেশের আইন আছে বলে মনে হয় না। জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করছে বন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অঞ্চলভিত্তিক বন বিভাগ ছিল বনরক্ষক-এর অধীনে, এবং পরবর্তিতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধান বনরক্ষকের অধীনে ছিল।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে সংরক্ষিত ও প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনগুলো বাংলাদেশ বন বিভাগের আওতাধীন হয়ে যায়। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ বন বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল। কতিপয় কাঠভক্ষক বন বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন কাঠ নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামজেলার রাঙ্গুনিয়ার কোদালা, শিলক সরভভাটা এলাকায়।কাঠ পাচারকারীদের সঙ্গে বনকর্মীদের নিবিড় সখ্যতায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পাচার হচ্ছে প্রকাশ্যে। বন বিভাগ দেখেও না দেখার ভান করছে। এতে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।

চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট অবৈধভাবে সরকারি বনাঞ্চলের বন বাগান উজাড় করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রাতেই পাচারকারীদের কাঠ পাচারের প্রধান মূর্হুত হিসেবে ঠিক করে নিয়েছে। বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে বোঝাইকৃত অবৈধ কাঠের গাড়ীর উপরি ভাগে কলাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বোঝায় করে প্রশাসনের চোখে ধূলা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।

দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় বন উজাড় করা হচ্ছে। রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী, কাপ্তাই রাইখালীর পরীক্ষন ফাড়ী গুলো দিয়ে অবাধে কাঠ পাচার হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় সময় সভা সমাবেশে বক্তব্য কালে বলেন, “ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, শিল্পায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ ও নগরায়নের ফলে বিশ্বব্যাপী বন ও বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। আমি দেশের বন রক্ষার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।”

কাঠ পাচার রোধে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বন ভূমি উজাড় হয়ে পড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পার্বত্য অঞ্চলের চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই আমাদের। তাই পার্বত্য বন সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বনাঞ্চলকে শুধু মরুভূমিতেই পরিণত করবে না পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিত্ব বিলীনও হবে।

এ বিষয়ে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত কাঠ জব্দ করি। পাচারকারীরা বিভিন্ন চক্র তৈরী করে কাঠ পাচার করে। কাঠ পাচার রোধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন