১০০ বছরের ইতিহাসে সেরা কাতার বিশ্বকাপ : বিবিসি জরিপ

fec-image

সমকামিতার অধিকার, বিদেশি শ্রমিকদের মৃত্যু, স্টেডিয়ামের ভেতর মদ্যপান নিষিদ্ধসহ নানা বিষয়ে সমালোচনা আর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিল কাতার বিশ্বকাপ। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আয়োজক দেশটি। এবার মরুর বুকে বিশ্ব আসরকে শতাব্দীর সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে উপাধি দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এবার বিবিসির জরিপে গত ১০০ বছরের বিশ্বকাপ আয়োজনের ইতিহাসে সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। এর আগেও, ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো কাতার বিশ্বকাপকে সর্বকালের সেরা বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন।

বিবিসির ওই জরিপে ৭৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। এ জরিপে ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে শতাব্দীর সেরা বিশ্বকাপগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছে ২০০২ সালের জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপ। আর ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপের আয়োজনে জড়িত প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দোহা থেকে শ্রমিকদের উচ্ছেদ, অ্যালকোহল নিষিদ্ধকরণ, সমকামী ফুটবলারদের শঙ্কা, অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন নিঃসরণসহ বেশ কিছু ইস্যুতে চলেছিলো বিতর্ক। তবে ফিফা প্রেসিডেন্ট পশ্চিমাদের সমালোচনা করতে এক বিন্দু পিছপা হননি।

এর আগে, বিভিন্ন জরিপে মোটাদাগে ৮টি কারণে কাতার বিশ্বকাপকে সেরা বলে বেছে নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

শীতকালে প্রথম বিশ্বকাপ: ফিফা বিশ্বকাপের আগের সবকটি আসরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুন-জুলাইয়ে। তবে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। মূলত কাতারের আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই শীত মৌসুমকে বেছে নিয়েছে ফিফা কর্তৃপক্ষ।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ: মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে কাতার এবারের বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। শুধু তাই নয়; আরব বিশ্বেও প্রথম এবং এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এর আগে, ২০০২ সালে যৌথভাবে আয়োজন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান।

প্রথম টেকনো বল: এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে টেকনো বল। বিখ্যাত অ্যাডিডাস কোম্পানির তৈরি এই বলের নাম রাখা হয়েছে ‘আল রিহলা’। যার বাংলায় অর্থ ‘ভ্রমণ’। চামড়ায় তৈরি বলটির নিখুঁত গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এর ভেতরে ৫০০ হার্জ আইএমইউ সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রথম সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি: কাতারে অফসাইডের সিদ্ধান্ত আরও নিখুঁত করতে চালু হচ্ছে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি। প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচের অংশে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড় অফসাইড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যাবে।

ফুটবলারদের জন্য ডেটা অ্যাপ: এই অ্যাপের মাধ্যমে ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের বিশ্লেষণ ও নিখুঁত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি ফুটবলার ম্যাচের পর নিজের খেলার তথ্য দেখতে পেরেছেন। ডেটার মধ্যে ছিল ম্যাচে বল পায়ে কেমন ছিলেন, কতটুকু কী প্রচেষ্টা ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ কোন মুহূর্তে তিনি কেমন খেলেছেন।

প্রথম সবুজ যানবাহন ব্যবস্থা: কাতার বিশ্বকাপে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি আগেই জানিয়েছিল কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজনের। এজন্য ইলেকট্রিক বাসগুলো ৪৪টি মেট্রোলিংক এবং ৪৮টি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে চালানো হয়।

প্রথম ‘আঁটসাঁট’ বিশ্বকাপ: বিশ্বকাপ ইতিহাসে কখনো অল্প জায়গায় সবকটি ভেন্যু দেখা যায়নি। কাতারে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে আটটি স্টেডিয়ামের অবস্থান। ভৌগোলিকভাবে এটিই সবচেয়ে ‘আঁটসাঁট’ জায়গার বিশ্বকাপ।

প্রথম নারী রেফারি: এবারই প্রথম ছেলেদের বিশ্বকাপে জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা, ফ্রান্সের স্টিফানি ফ্রাপার্ট ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা নারী রেফারি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। ৬৪টি ম্যাচের জন্য মোট ৩৬ জন প্রধান রেফারির মধ্যে ছিলেন এই ৩ নারী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন