ক্ষমা চাই আতিকুর রহমান
কি লিখবো জানিনা, কি লেখা উচিত তাও বুঝতে পারছি না। স্তম্ভিত হয়ে গেছি খবরটা শোনার পর। কেবলই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, আফসোস হচ্ছে। গতপরশু সন্ধ্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আতিকুর রহমানের ছোট ছেলে ফয়জুর রহমান ফোন করে অনুযোগ করলো, আঙ্কেল আপনি তো আসতে চেয়েছিলেন আব্বাকে দেখতে, আসলেন না তো?
আসল কথা হচ্ছে, মাস দুয়েক আগে আতিকুর রহমানের শারীরীক অবস্থার খোঁজ নিতে কল করেছিলাম। তিনি অসুস্থ জানতাম, কিন্তু কতোটা অসুস্থ তা জানতাম না। তার ছোট ছেলে পিতার পাশ থেকেই কলটি ধরলো। জানালো আতিকুর রহমান খুবই অসুস্থ। একেবারে শয্যাশায়ী। বিস্মৃত হয়েছেন সব কিছু। কাছের লোকদেরও চিনতে পারছেন না বেশিরভাগ সময়। নাকে নল দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে সেন্স আসলে দুয়েকটি কথা বলছেন, কিন্তু পরক্ষণেই আবার অচেতন হয়ে যাচ্ছেন।
তার কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। তাকে বললাম, আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি আতিক ভাইকে দেখতে।
প্লান করলাম, রবিবার আমার সাপ্তাহিক ডে অফ থাকে। তাই যে কোনো রবিবার সকালে প্লেনে সিলেট গিয়ে সন্ধ্যায় আবার ফিরবো। বাসায়ও বিষয়টা জানালাম। দুইবার করে যাওয়ার ডেটও ফিক্সড করলাম। কিন্তু একবার প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও একবার শারীরীক অসুস্থতার কারণে শেষ মুহুর্তে যাওয়া ক্যানসেল হয়েছিল।
তবু যাওয়ার ইচ্ছাটা ছিলো প্রবল। সিলেটের দুয়েকজন বন্ধুকে বিষয়টা জানিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
তাই যখন আতিকুর রহমান সাহেবের ছেলে অনুযোগ করলো, তখন তাকে বললাম, আমি খুবই চেষ্টা করছি। কিন্তু সময় করে উঠতে পারছি না। তবে খুব শীঘ্রই চলে আসবো। কথা শেষ না করতেই ফয়জুর রহমান বললো, আঙ্কেল আব্বার অবস্থা খুবই খারাপ। হয়তো শেষ অবস্থা। এতো দিন নাকে যে নল দিয়ে খাওয়াতাম, এখন তিনি নল দিয়েও খেতে পারছেন না। তাই নল খুলে দিয়েছি। তিনি আর খেতে পারছেন না। একেবারেই সেন্স নেই, কোনো সাড়া শব্দও নেই। হয়তো কালকেই তার শেষ দিন।
শেষ খবরটা শুনে আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। নিজেকে খুব অপরাধী ও আফসোসের ভাগীদার বলে মনে হলো। বেদনার্ত কণ্ঠে জানতে চাইলাম, কোন হসপিটালে আছেন তিনি। ছেলেটি জানালো, কোনো হাসপাতালে না, বাসাতেই আছেন। ছেলেটি আরো বললো, আঙ্কেল আপনি আব্বার জন্য দোয়া করবেন, আর আব্বার পরিচিত যারা আমিতো সবাইকে চিনি না, আপনি জানেন, তাদের সবাইকে দোয়া করতে বলবেন। ফোনটা রেখে নিজের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, তাই আকাশের দিকে তাকালাম। অনেক আফসোস দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এলো। মনে মনে দোয়া করলাম। এ মূহুর্তে এ ছাড়া আর কিছু করার নেই।
গতকাল যখন তার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম, দুইবার ফোন করতে গিয়েও ফোন করা হয়নি। কী বলবো তার ছেলেকে? কী বলে শান্তনা দেবো? এর কি কোনো শান্তনা হয়? আজ সকালে ফোন দিলাম। গতকাল রাতেই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার দাফন হয়েছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) আলাইহির মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে। বললাম, এর চেয়ে ভাল কবরস্থান হয় না। হয়তো এটা তার ভাগ্য ছিলো। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই আওলিয়ার মাজার জেয়ারত করতে যায়, তারা কবরবাসীদের জন্যও দোয়া করে থাকে। কিয়ামত পর্যন্ত এই দোয়া আল্লাহ তার নসীবে লিখে রেখেছেন।
আতিকুর রহমান একজন প্রচার বিমুখ, নিভৃতচারী গবেষক। গবেষকের যে আভিধানিক সংজ্ঞা তিনি হয়তো তার মধ্যে পড়েন না। তিনি গবেষণা করেছেন সাংবাদিকের চোখে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকের মতো তার গবেষণা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে দেশের পক্ষে, দেশের অখণ্ডতার পক্ষে, বাঙালীর পক্ষে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরতে সর্বপ্রথম যারা কলম ধরেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম এবং শীর্ষতম।
চাকরীর সুবাদের তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। রাঙামাটির তথ্য অফিসে তার চাকরি হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভালবেসে সেখানেই স্থিত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। রাঙামাটিতে তার একটি বাড়ীও ছিলো। কিন্তু নানা কারণে সেই বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। পরে কিছুদিন ঢাকায় থাকার পর আমৃত্যু সিলেটে ভাড়া বাসায় থেকেছেন। রাঙামাটিতে একসময় জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বও দিয়েছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে। কিন্তু রাজনীতি ছেড়ে আবার কলম ধরেছেন।
চারণ সাংবাদিকের মতো তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নদী পাহাড়, বন জঙ্গল, জনপদ ঘুরে ঘুরে সত্য ও তথ্য বের করার চেষ্টা করেছেন দীর্ঘদিন ধরে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক গবেষক ও লেখক নীতি, আদর্শ, দেশপ্রেম বিসর্জন দিয়েছেন পার্থিব লাভের বিনিময়ে। কিন্তু আতিকুর রহমান সে পথে হাঁটেন নি। চাইলেই তিনি একটু আপোষ করে বৈষয়িক অনেক লাভ অর্জন করতে পারতেন, কিন্তু আতিকুর রহমান দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। গত তিন দশকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যারা দেশের পক্ষে লেখালেখি করেছেন তারা সকলেই কোনো না কোনোভাবে আতিকুর রহমানের কাজ দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। অনেকে সঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকারও করেননি। এ নিয়ে তার কষ্ট ছিলো।
আতিকুর রহমানের সাথে আমার পরিচয় ২০০৩/০৪ সালে। রাঙামাটির কেউ একজন আমার নাম বলে তাকে ইনকিলাবে পাঠিয়েছেন। সফেদ পাঞ্জাবী পরিহিত এক ভদ্র লোক আমার কাছে এসে পরিচয় দিলেন আতিকুর রহমান নামে। তার নাম ও কাজের সাথে আমি ইতোমধ্যে পরিচিত ছিলাম, কয়েকটি বইও পড়া হয়েছে। সব বইয়েই লেখকের ছবি থাকতো, তাই চিনতে কষ্ট হয়নি। সামনাসামনি তাকে দেখতে পেয়ে সেদিন খুবই খুশী হয়েছিলাম।
কিন্তু এতোবড় লেখক হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো অহঙ্কার ছিলো না। কাঁধের লম্বা ঝোলা থেকে দুইটি বই, কয়েকটি পুস্তিকা ও কয়েকটি লেখা বের করে আমাকে দিয়ে বললেন, দেখেন লেখাগুলো ছাপা যায় কিনা? আমি বইগুলোতে তার অটোগ্রাফ দিতে অনুরোধ করলাম, তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, আমি অতোবড় লেখক নই। সেটা ছিল তার বিনয়। আমি ধীরে ধীরে তার লেখা ছাপতে শুরু করলাম।
আতিকুর রহমান মূলত লিখতেন পাহাড়ের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে। লেখালেখিতে তার অভিভাবক ছিলেন রাঙামাটির প্রবীণ সাংবাদিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদ। সব সময় তিনি মকছুদ ভাইকে নিয়ে কথা বলতে গেলে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতেন। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি লেখা কোনো কোনো দৈনিকে ছাপা হয়েছে। ফলে তার কাজের সাথে জাতীয় গণমাধ্যমের পরিচয় ছিলো না সেভাবে। তাছাড়া তিনি যে লাইনে লিখতেন সেই লাইনের লেখা ছাপার মতো জাতীয় গণমাধ্যম খুব বেশি ছিলো না।
দৈনিক ইনকিলাবের আদিগন্ত বিভাগে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশ হওয়া শুরু করলে দেশের মানুষ তার কাজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ পায়। ঢাকায় থাকলে তিনি নিয়মিত ইনকিলাবে লেখা নিয়ে আসতেন। বাইরে থাকলে ডাকে লেখা পাঠাতেন। তবে সবসময় ফোন করতেন। এভাবেই একটা সময় আমরা ঘনিষ্ঠ হয়েছি। ফলে অনেক ব্যক্তিগত কথাও বলেছেন।
ফখরুদ্দীন সরকারের সময় তিনি আমাকে বলেন যে, তার সমস্ত লেখা তিনি বই আকারে প্রকাশ করতে চান। তাকে আমি কয়েকটি জায়গায় পরিচয় করিয়ে দিই। এসময় তার সকল লেখা একসাথে করে ৯ খন্ডে প্রকাশিত হয় পার্বত্য তথ্য কোষ নামে। আমি তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ভালো কোনো জাতীয় প্রকাশনী থেকে বইটি বের করতে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার ঠগবাজী ব্যবসার কারণে কোনো প্রকাশককে তার বই দিতে রাজী হননি তিনি। নিজেই পর্বত প্রকাশন নাম দিয়ে এই পার্বত্য তথ্য কোষ প্রকাশ করেন। সিরিজটি প্রকাশিত হলে তিনি আমাকে ১০ সেট বই দিয়েছিলেন খুশি হয়ে। আমি এসব বই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আগ্রহী কয়েকজনকে দিয়েছিলাম। আর একসেট আমার বাসায় ও আরেক সেট সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আর্কাইভে রাখা আছে।
পরে বাংলা একাডেমির বই মেলায় সিরিজটি প্রচার করার জন্য তিনি আমার কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু একাডেমির নীতিমালা অনুযায়ী তিনি কোনো স্টলের দাবিদার নন। পরে আমি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে তার জন্য এক ইউনিটের একটা স্টল বরাদ্দ করতে সমর্থ হই। পর্বত প্রকাশনী নামে এই স্টলে বসে তিনি মেলায় তার পার্বত্য কোষ বই বিক্রি করেছেন।
আমিও গিয়ে মাঝে মাঝে বসেছি সেই স্টলে। এর আরো কয়েক বছর পর তিনি তার আগে ও পরের সকল লেখা নতুন করে বিন্যাস করে আরো ৫টি বই প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে অবশ্য আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না বা তিনিও কিছু বলেননি। তবে বই প্রকাশের পর ৫ সেট বই নিয়ে ইনকিলাবে এসে আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আরো লাগলে জানাবেন, আমি দেবো। পরে আমার অনুরোধে আরো তিনসেট বই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
শেষ দিকে হাঁটাচলা করতে কষ্ট হতো, তারপরও সময় পেলেই ইনকিলাবে আসতেন। চলা ফেরায় সহযোগিতার সাথে তার এক ভাতিজাকে নিয়ে আসতেন।
২০১৪ সালের প্রথম দিকে তিনি ইনকিলাবে এলেন। খুব দুর্বল শরীর। কথাও বলছিলেন ধীরে ধীরে। আমাকে বললেন, আমি হয়তো আর কতোদিন চলাফেরা করতে পারবো জানি না। আমার অবর্তমানে আমার লেখা ও বই পুস্তকের কী হবে তাও জানি না। আমার সন্তানেরা এসব বিষয়ে খুব আগ্রহী না। তাই আমি চাই, আমার সব লেখা আপনাকে দিয়ে যেতে। আপনি ছাড়া আমার এই কাজ দেখে রাখার আর কোনো লোক আমি দেখি না। তার কথা শুনে আমার চোখে অশ্রু চলে এলো। শুধু এতোটুকু বললাম, আপনি যে আমাকে যোগ্য মনে করেছেন এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। আমি চেষ্টা করবো। এরপর একদিন তিনি নিজে এসে তার সকল বইয়ের মেকাপ করা সফট কপি একটা ডিভিডিতে করে আমাকে দিয়ে গেলেন, আর বললেন, দেখে রাখবেন।
এরপর পার্বত্যনিউজ.কম ওয়েব সাইটে তার নামে একটা ক্যাটাগরি তৈরি করে বেশ কয়েকটি লেখা সেখান থেকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করি।
আতিকুর রহমান সিটিসেল ফোন ব্যবহার করতেন। কিন্তু সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তিনি আমাকে একটি গ্রামীণ নম্বর ফোন করে দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা কোথায় লিখে রেখেছিলাম তা মনে করতে পারছিলাম না। ফলে সিটিসেল বন্ধ হওয়ায় তার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। তিনিও অসুস্থ হওয়ায় ফোন করতে পারেননি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নানা কাজে, লেখালেখিতে তার কথা ও অভাব প্রবলভাবে অনুভব করতাম।
মাঝখানে আমার একবার মনে হলো, যে লোকটি দেশের জন্য এতোকিছু করলেন, দেশ তাকে কী দিয়েছে, একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কি দেশ তাকে দিতে পারে না? কোনো একটা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে কি তাকে সম্মানিত করা যায় না? পাহাড়ী গবেষকরা পুরস্কার পাচ্ছেন, তিনি কেন পাবেন না? আমি কয়েক জায়গায় কথা বলে তাকে আসতে বললাম। তিনি এলে তাকে বললাম, আমি আপনার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের প্রস্তাব নিয়ে কয়েকটি জায়গায় কথা বলেছি। আপনার পূর্ণাঙ্গ বায়োডাটা দরকার।
তিনি একটি বায়োডাটা পাঠালেন। আমি টেলিফোনে কথা বলে আরো তথ্য নিয়ে পুর্ণাঙ্গরূপে একটি বায়োডাটা রেডি করলাম। এরপর তাকে অনুরোধ করলাম, আপনার সকল বই কয়েকটি সেট করে বয়োডাটাসহ একটি করে প্যাকেট করে কয়েক জায়গায় পৌঁছে দিবেন। তিনি হেসে বললেন, আমার শরীর ভালো না। তাছাড়া আমার কোনো তেমন লোকও নেই। কাজেই আমি পারবো না। তাছাড়া এসবে আমার কোনো লোভও নেই। আপনি যদি চান আপনাকেই করতে হবে। আমার ব্যর্থতা যে আমি কাজটা করতে পারিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তার মতো পরিশ্রমী, একনিষ্ঠ, সৎ, আপসহীন, আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক, লেখক, গবেষকের এই মুহুর্তে ভীষণ প্রয়োজন। পার্বত্যবাসী না হয়েও পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনি নিজ জন্মভূমির চেয়েও ভালোবেসেছেন। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকিয়ে তার কোনো উত্তরসূরী চোখে পড়ে না। ফলে আতিকুর রহমান চলে যাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে মৌলিক লেখালেখি, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, বিশ্লেষণ লেখার লোকের বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তার শূন্যস্থান কখনোই পূরণ হবার নয়।
আতিকুর রহমানের ৩ ছেলে ৩ মেয়ে। বড় ছেলে পারভেজ রহমান ছোটখাট ব্যবসা করেন। মেজো ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী। ছোট ছেলে ফয়জুর রহমান বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরী করেন। তিন মেয়ের সকলেই বিয়ে হয়ে গেছে। সকলেই গৃহিনী। আদর্শ আর দেশপ্রেমের সাথে আপোষ করলে ঢাকায় আজ তার বাড়ি, গাড়ী থাকার কথা। অন্ততঃ এভাবে যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করছেন তাদের দেখে আমার তাই মনে হয়। পাহাড়ী সংগঠনগুলোর সমর্থনে যারা কাজ করেন, যারা কলম ধরেন তাদের জন্য পাহাড়ী সংগঠনগুলো কী করে থাকে তার দৃষ্টান্ত চোখের সামনে।কিন্তু পার্বত্যবাসী না হয়েও পার্বত্য বাঙালীদের জন্য প্রথম যে লোকটি কলম ধরেছেন এবং সারা জীবন কলম যুদ্ধ চালিয়েছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই আতিকুর রহমানের মৃত্যুতে কোনো বাঙালী সংগঠনকে একটি শোকবাণীও দিতে দেখলাম না। এর চেয়ে বড় লজ্জার আর কী হতে পারে!!
আতিকুর রহমানের ছোট ছেলে ফয়জুর রহমান আমাকে টেলিফোনে কান্না জাড়িত কণ্ঠে নিবেদন করলো, আঙ্কেল পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার আব্বা কাদের সাথে কাজ করতো আমি তো জানিনা। আপনি জানেন, তাদের সবাইকে আমার তরফ থেকে বলবেন, আমার বাবা যদি তাদের মনে কোনো আঘাত দিয়ে থাকে তারা যেন ক্ষমা করে দেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, কাকে বলবো আতিকুর রহমানকে ক্ষমা করে দিয়েন। আমাদের সকলের তো তার কাছেই ক্ষমা চাইবার মুখ নেই।
আতিকুর রহমান আজ নেই। জাতির পক্ষ থেকে আমি তার কাছে ক্ষমা চাই, কেননা তার এই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম, সততা, সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মূল্যায়ন জাতি হিসাবে আমরা করতে পারিনি। তবু আতিকুর রহমান অনন্তকাল তার কর্মের মাঝে বেঁচে থাকবেন এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু রাষ্ট্র হিসাবে আমরা এমন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকের জন্য কিছুই কি করতে পারি না? আমাদের দেশে তো মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ আছে। রাষ্ট্র কি পারে না আতিকুর রহমানকে কোনো মরণোত্তর পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করতে?
পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য যিনি সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো একটি কোণে কি তার নাম স্মরণীয় করে রাখা যায় না? কোনো প্রতিষ্ঠান, ভবন, কোনো রাস্তার নাম আতিকুর রহমানের নামে কি করা এতোই কষ্টকর? সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। কেননা, হাদিসে আছে, যে জাতি জ্ঞানীর মূল্যায়ন করে না, সে জাতিতে জ্ঞানী তৈরি হয় না। তাই আমাদের নিজেদের জন্য, নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণার জন্য আতিকুর রহমানকে মূল্যায়ন করা সময়ের দাবি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিষয়ে লেখকের অন্যান্য লেখা
- ♦ বিশ্ব আদিবাসী দিবস ও বাংলাদেশের আদিবাসিন্দা
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারী সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা কাম্য
- ♦ বিতর্কিত সিএইচটি কমিশনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে
- ♦ আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়?
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় দৃষ্টির মধ্যে রাখতে হবে
- ♦ একটি স্থায়ী পার্বত্যনীতি সময়ের দাবী
- ♦ বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক
- ♦ আদিবাসী বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ১
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ৩
- ♦ শান্তিচুক্তির এক যুগ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ গোষ্ঠির অতিআগ্রহ বন্ধ করতে হবে
- ♦ হঠাৎ উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম: খতিয়ে দেখতে হবে এখনই
- ♦ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান সময়ের দাবী
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কি কাজ
- ♦ রোহিঙ্গা ইস্যু : শেখ হাসিনা কি ইন্দিরা গান্ধী হতে পারেন না?
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক নীতি-কৌশলের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন
- ♦ পাহাড়ের উৎসব: ‘বৈসাবি’ থেকে হোক ‘বৈসাবিন’
- ♦ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন: সরকারের মর্যাদা কর্তৃত্ব ও এখতিয়ার ক্ষুণ্ন হতে পারে
- ♦ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন বৈষম্যমূলক ও বাঙালি বিদ্বেষী
- ♦ ভারত ভাগের ৬৯ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবস পালন করে পাহাড়ী একটি গ্রুপ
- ♦ বিজিবি ভারতের ভূমি ও সড়ক ব্যবহার করে বিওপি নির্মাণ করছে
- ♦ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য বিবরণী জারী করেছে সরকার
- ♦ বিজিবি’র মর্টার গোলার আঘাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ২ কর্মকর্তাসহ ৪ সেনাসদস্য নিহত: আহত ৩
- ♦ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলিতে আরো ৪ বিজিবি সদস্য নিখোঁজ (ভিডিওসহ)
- ♦ নাইক্ষ্যংছড়ির বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চরম উত্তেজনা : মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন, গুলিবর্ষণ
- ♦ জেএসএস’র খাগড়াছড়ির পুনরুদ্ধার মিশন: দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রাম
- ♦ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য বিবরণী জারী করেছে সরকার
- ♦ বাংলাদেশের উপজাতীয়রা আদিবাসী নয় কেন?
- ♦ শরণার্থি ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাকে পুনর্বাসিত করতে চাইছে টাস্কফোর্স
- ♦ ভারত প্রত্যাগত শরণার্থি ও অভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুর সংখ্যা কতো?
- ♦ জেএসএসের আপত্তির কারণে টাক্সফোর্স থেকে বাঙালী উদ্বাস্তুদের বাদ দেয়া হয়