আজ জেনেভায় মধপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক


আজ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাত সাত দিন গড়িয়ে আজ অষ্টম দিনে পড়ল। শেষ পর্যন্ত এই সঙ্ঘাত কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই ইস্যুতেই আজ শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জেনেভা সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে বৈঠকে বসবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাসেরও এই বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে গত এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাতের পর এটিই হবে ইরান ও পাশ্চাত্যের নেতাদের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া এক বিবৃতিতে ল্যামি বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি থামানোর সময় এখনই এবং কারো জন্যই সুফল বয়ে না আনা ওই অঞ্চলজুড়ে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রতিরোধ করারও উপযুক্ত সময় এটি।’
ইরানের ‘পারমাণবিক কর্মসূচি’-বিষয়ক সিদ্ধান্তে একমত যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে ডেভিড ল্যামির এক বৈঠকে দুইজনই একমত হন যে ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারবে না।’
ওই বৈঠক ল্যামি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুর সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তার মতে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এর একটি কূটনৈতিক সমাধান হতে পারে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছে, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সঙ্ঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। হোয়াইট হাউজের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই বার্তা জানান তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সাথে আলোচনা হতে পারে বা নাও হতে পারে তার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব যে আমি যাব কিনা।’
এর আগে, গণমাধ্যমে খবর এসেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এই খবর অস্বীকার করেন।
ট্রাম্প কী করবেন, তা জনসমক্ষে স্পষ্ট করে বলেননি। তবে বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি এটা করতে পারি, আবার নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই। তবে এতটুকু বলতে পারি, ইরান বড় সমস্যায় আছে এবং আলোচনায় ফিরতে চায়।’
ইরান-ইসরাইল থেকে সরে যাচ্ছেন বিদেশীরা
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সঙ্ঘাত শুরুর পর থেকে চেক রিপাবলিক, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ তেহরানে তাদের দূতাবাস কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
তবে যেহেতু ইরানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ইসরাইলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও যাত্রী পরিবহন করছে না, তাই বিশ্বের অনেক দেশ ওই দু’দেশ থেকে তাদের নাগরিকদেরকে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে জটিলতার মধ্য দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া
দেশটি ইরান থেকে প্রায় দেড় হাজার ও ইসরাইল থেকে এক হাজার ২০০ জনকে সরিয়ে নিচ্ছে। কিছু অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ইতোমধ্যে জাহাজে করে সাইপ্রাসে পৌঁছেছেন। অন্যদের স্থলপথে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
চীন
দেশটি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি এবং ইসরায়েল থেকে আরো কয়েক শ’ নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া চীন তার নাগরিকদের আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক, আর্মেনিয়া অথবা ইরাক হয়ে স্থলপথে দেশ ত্যাগ করতে বলেছে।
ভারত
ইরান থেকে স্থলপথে আসা প্রায় ১১০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী আর্মেনিয়া হয়ে দিল্লি পৌঁছেছেন। এছাড়া ইসরাইলে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকরা যদি চান, তাহলে তাদেরকেও সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। বর্তমানে ইসরাইলে প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় নাগরিক রয়েছে।
জাপান
ইরান ও ইসরাইল থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জিবুতিতে দু’টি সামরিক বিমান পাঠাচ্ছে দেশটি। ইসরাইলে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং ইরানে ২৮০ জন।
পাকিস্তান
সংঘর্ষ শুরুর পর ইরান থেকে প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি নাগরিক চলে গেছেন। পাকিস্তানের সাথে ইরানের যে ৯০০ কিলোমিটার বা ৫৬০ মাইলেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রেখা আছে, তার সব ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। তবে শুধু পাকিস্তানি নাগরিকরা এই পয়েন্টগুলো দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবে।
সূত্র : বিবিসি