আলীকদমে গরু চুরি করে জবাই, চোর সিন্ডিকেটের ৬ সদস্য আটক

গত ঈদুল আযহার আগের রাত (৯ জুলাই) এর ঘটনা। এটি চুরির আদলে একটি ডাকাতির ঘটনার প্রতিশোধও বটে। এরপর ঘটনার বিবরণ দিয়ে থানায় অভিযোগ দেন আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সিরাজ কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা দিনমজুর আহমদ উল্লাহ। ঘটনার রাত থেকে শুরু করে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৭ দিন পার হয়। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামেন। কিন্তু অভিযুক্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অবশেষে শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতে গরু চুরি ও জবাই করে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে আটক করতে সক্ষম হন আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম। আটক ৬ গরু চোরকে শুক্রবার রাত পৌনে বারোটার সময় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৭ জুলাই রাতে আলীকদমের হেলাল সওদাগরের ৪টি গরু উপজেলা সদর থেকে চিনারী বাজার এলাকায় নেওয়ার প্রাক্কালে অস্ত্রধারী ৬/৭ জন লোক গতিরোধ করে ২টি গরু ও ২ হাজার টাকা ছিনতাই করে। গরুর লেবার জনৈক আবু সৈয়দ ফজরের নামাজের পর আহমদ উল্লাহকে গরু ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানিয়ে উদ্ধারে সহযোগিতা চান। তারা কয়েকজনের প্রচেষ্টায় এদিন সকালে চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের বলির ঘোনার ছিপা থেকে গরু ২টি উদ্ধার হয়।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এ ঘটনার জের ধরে গরু চোর সিন্ডিকেটের সদস্য ইউনুস সময়-সুযোগে দেখিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন গরু উদ্ধারে সহায়তাকারী আহমদ উল্লাহকে।
থানায় ও আলীকদম প্রেসক্লাবে প্রদত্ত অভিযোগে আহমদ উল্লাহ বলেন, এ ঘটনার জের ধরে মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে একটি চোরের সিন্ডিকেট প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে তার বাড়ি থেকে একটি গাভী চুরি করে চোরের দল। ওইদিন রাতেই সংঘবদ্ধ চোরের দল গাভীটি অংহ্লাচিং হেডম্যানের পুরাতন অব্যবহৃত বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে জবাই করে দেয়।
ঈদুল আযহার দিন এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন আহমদ উল্লাহ। এতে ৬ জনের নামোল্লেখ করা হয়।
এদিকে, বাস টার্মিনাল এলাকার মিজান ড্রাইভারের গাড়ি থেকে একটি ব্যাটারী চুরি হয় পরশু রাতে। এ ঘটনার জের ধরে চোর সিন্ডিকেটের সদস্য সুমনকে সন্দেহ করা হয়। শুক্রবার রাতে তাকেসহ আরো কয়েকজনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে ধরে আনা হয়। এরপর গরু চুরি ও জবাইয়ের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানা যায় সংঘবদ্ধ চোর সুমন ও সাদ্দামের মুখ থেকেই। ছবিতে বাম থেকে দেখা যাচ্ছে চুরি করে গরু জবাইকারী সিন্ডিকেটে সদস্য জিহাদ, সাদ্দাম, জাহেদ মিস্ত্রি,সুমন, ইউনুস ও চোরের লিডার মাহাবুবকে।
চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মাহাবুবের পিতার নাম মৃত রশিদ আহমদ। তাদের বাড়ি চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের কাশেম মেম্বার পাড়ায়। তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন আশেপাশের এলাকায় দোকান পাটে চুরিসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়ে আসছিল। শুক্রবার রাতে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ির আঙ্গিনায় বৈঠক চলাকালে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকেই জানা যায়, চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মাহাবুব (ছবির ডান দিকে)। তার চোখেমুখে বেশ গাম্ভীর্য দেখাচ্ছিল। সে বৈঠক চলাকালে চোরের কাতারে না বসে অন্যান্য মান্যগণ্য লোকজনের ভীড়ের মধ্যে চেয়ার পেতে বসেছিল! তার সম্মুখেই অনেকে অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেট প্রধান মাহাবুবের কাছে রয়েছে দেশীয় অস্ত্র, ধারালো ছুরিসহ একাধিক চুরির সরঞ্জাম।
গত কয়েকদিনের তদন্তে সিন্ডিকেট প্রধান মাহাবুবের কাছে অস্ত্র-শস্ত্র থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন আলীকদম থানার নবাগত সাব ইনস্পেক্টর আল আমিন। তিনি এ ঘটনাটি তদন্ত করছিলেন। এ সময় তিনি জানান, ‘আহমদ উল্লাহর অভিযোগ পাওয়ার পর গোপনে তদন্ত নামে পুলিশ। তারা চোরদের আটকের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করছিলেন। অনেক তথ্য পুলিশ পেয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ ছুটি থেকে কর্মস্থলে আসলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতো!’
উল্লেখ্য, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ইতোপূর্বে একাধিক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটিয়েছে চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সিরাজ কার্বারী পাড়া ও আলী মেম্বার পাড়া এলাকায়। কিন্তু বিধি বাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা ছিল ঠুঁটু জগন্নাথ। অবশেষে চোরের দল ধরা পড়লো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। ধন্যবাদ উপজেলা চেয়ারম্যানকে।