উখিয়ায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে অসহায়দের জন্য সেনা বাজার

fec-image

প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনা ও সেনাবাহিনী প্রধানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত, অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সেবায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শুরু থেকেই নিজেদের সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করে মাঠ পর্যায়ের যোদ্ধা হিসাবে সম্মুখ সমরে নিয়োজিত রয়েছে।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই মহা দুর্যোগের সময় তারা নিজেদের ছুটি ও ঈদের আনন্দকে উহ্য করে পরিবারের প্রিয় মানুষদের কাছে না যেয়ে অম্লান মুখে বারবার ছুটে চলেছেন আর্তপীড়িত ও অসহায় মানুষদের দোরগোড়ায়।

প্রান্তিক আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার লক্ষ্যে সেনা সদস্যদের নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পাশাপাশি ব্যতিক্রমধর্মী “সেনা বাজার” আয়োজনের ধারাবাহিকতায় শনিবার (৬ জুন) ১০ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে আবারো বিনামূল্যের এই সেনাবাজারের আয়োজন করা হয়েছে।

সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী যেমন চাল, আটা, তৈল, লবণ, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের তাজা সবজি সম্বলিত এই ব্যতিক্রমধর্মী সেনাবাজারের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য যে, পূর্বের মতো এবারও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রান্তিক কৃষকদের নিকট হতে উপযুক্ত মূল্যে সবজি ক্রয় করে বাজারে নিয়ে আসা হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারো দূস্থ ও অসহায় ৫০০ পরিবার বিনামূল্যে এ বাজার হতে সুবিধা গ্রহণ করেন।

৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই বাজার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ৬৫ ব্রিগেড এর ব্রিগেড কমান্ডার, রামু সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

রামু সেনানিবাসের মিডিয়া সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মেজর তানজিল এর বরাতে জানা যায়, “আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য” এই স্লোগানকে সামনে রেখে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অসহায় ও দুস্থ মানুষদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর গৃহীত নানাবিধ কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পূর্ব পাহাড়, লম্বার ঘোনা, শৈলের ডোবা, ফলিয়া পাড়া, রাজাপালং, গুচ্চগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক হত দরিদ্র মানুষদের তালিকা তৈরী করতঃ বিশেষ টোকেন প্রদান করা হয়।

উল্লেখিত সেনা বাজারের প্রবেশ পথে সেনাসদস্যদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল জীবাণুনাশক বুথ ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। সারি সারি টেবিলে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা ছিল বিভিন্ন ধরনের দরকারি ত্রাণ সামগ্রী। অসহায় ব্যক্তিরা জীবাণুনাশক টানেলের মধ্যে দিয়ে জীবাণুমুক্ত হয়ে নির্ধারিত সময়ে বাজারে উপস্থিত হয়ে টোকেন দেখিয়ে কোন প্রকার জটিলতা ছাড়াই স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ব্যাগে ভরে বাসায় নিয়ে যান।

এ সময় হত দরিদ্র মানুষদেরকে এই দুঃসময়ে বিশেষ মানবিক সহায়তা পেয়ে আনন্দে উচ্ছসিত হতে দেখা যায়। এ ধরনের মানবিক সহায়তার জন্য তারা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাজার করতে আসা ফলিয়া পাড়ার কুলছুম আক্তার বলেন, করোনার কারণে সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকায় আমরা অত্যন্ত কষ্টের মাঝে আছি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাল, আটা, লবণ, তৈল, আলু, বরবটি, কচুর লতি, কাঁচামরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

সেনাবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় “সেনা বাজার” পরিচালনা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলায় গত ২৪ মার্চ থেকেই মাঠে আছে সেনাবাহিনী। টহল কার্যক্রমসহ করোনার ভয়াবহতার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক বিতরন করছেন তারা।

এছাড়া নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী কর্মহীন অসহায় পরিবারের মানুষগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছেন। সেনা সদস্যরা কক্সবাজার জেলার প্রবেশদ্বার চকরিয়ায় এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রবেশদ্বারে একাধিক ডিজইনফেকশন বুথের মাধ্যমে জরুরি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত যানবাহন সমূহকে ও মানুষজনদের জীবাণুমুক্ত করছেন।

তারা সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন “ঘূর্ণিঝড় আম্পান” উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাঁধ পুনঃনির্মাণ এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জনসাধারণদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা ও ত্রান প্রদানের মাধ্যমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, করোনাভাইরাস, সেনাবাজার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন