করোনার আতঙ্কের মধ্যেও রাঙ্গামাটিতে বাড়িওয়ালাদের চাপে দিশেহারা ভাড়াটিয়ারা
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশের ন্যায় রাঙ্গামাটিতেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারের সাধারণ ছুটি চলমান থাকায় ওষুধের দোকান, মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও অফিস। যার ফলে মানুষ কর্মহীন হয়ে এখন ঘরবন্দী। এতে কোন আয় রোজগার না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিন্ম আয়ের মানুষ।
তবে কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেও অনেকেই আটকে আছেন রাঙ্গামাটিতে। এতে রাঙ্গামাটিতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াতের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ অর্থনীতির চাকা সচল থাকুক আর না থাকুক মাস শেষে ভাড়া পরিশোধ করতেই হবে। ভাড়াটিয়ার আয় থাকুক আর না থাকুক মাস শেষে ভাড়া দিতেই হবে। এমতাবস্থায় করোনার কারণে ব্যবসায়ী ও ভাড়াটিয়ারা নানা আতঙ্কে থাকলেও বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিকদের চাপে দিশেহারা ভাড়াটিয়ারা।
ভাড়াটিয়ারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে আর্থিক সংকটে জীবন-যাপন করছেন ব্যবসায়ী ও নিন্ম আয়ের মানুষ। এরমধ্যে চাপে আছেন বাসা ভাড়া ও দোকান ভাড়া নিয়ে। মালিকদের প্রতিনিয়ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে দিশেহারা ব্যবসায়ী ও নিন্ম আয়ের মানুষ।
তারা আরও বলেছেন, অনেক অফিস মার্চ মাসের বেতন দিতে পারলেও আবার অনেক অফিস বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেতন দিতে পারেন নি। ফলে যাদের কাছে গচ্ছিত টাকা ছিল,তাও শেষ হওয়ার উপক্রম। সংসারের খরচ যোগানো অনেকের দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব সমস্যার মধ্যে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বাড়ি ভাড়া ও দোকান ভাড়া।
এ অবস্থায় বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মানবিক বিবেচনায় অন্তত এক মাসের বাসা ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছেন খেটে খাওয়া ও নিন্ম আয়ের মানুষেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভাড়াটিয়া বলেছেন, বাড়িওয়ালারা বার বার ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করলেও ভয়ে থাকেন। কখন না জানি বলে বাসা ছেড়ে দিতে। এমনিতে করোনা আতঙ্কে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি।
রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপার বাসিন্দা এক ভাড়াটিয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা তো ইচ্ছে করে ভাড়া ধরে রাখেন নি। করোনার কারণে আর্থিক সংকটে আছেন তারা। মানবিক বিচারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বাড়িওয়ালারা কী করছেন? তাদের ভাড়া চাই।
তিনি আরও জানান, যেখানে তিনি বাসা ভাড়া থাকেন, সেখানে যদি বৈদ্যুতিক প্রিপ্রেইট মিটারের টাকা শেষ হয়ে যায়। ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিটারে রিসার্চ করতে বলা হয়। ভাড়াটিয়ারা অপরাগতা প্রকাশ করলে রুম অন্ধকারে থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বাড়ির কেয়ারটেকার। যেখানে চলতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে মিটারে টাকা রিসার্চ করব কি করে এমনটাই জানান তিনি।
রাঙ্গামাটি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম. নেকবর আলী জানান, করোনাভাইরাসেরে কারণে তাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে অনেক কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ চলে গেলেও অনেক কর্মচারীদের খরচ বহন করতে হচ্ছে। হোটেল বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন কর্মচারীদের খরচ বহন করতে হচ্ছে। তেমনি অন্যদিকে দোকানের বাকি, দোকান ভাড়া ও ব্যাংক লোনের টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত চাপে মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি জানান।
অবশ্য বাড়িওয়ালাদের কেউ কেউ বলছিলেন ভিন্ন কথা। শহরের বনরূপার বাড়িওয়ালা মো. নুরুল আলম বলছিলেন, অনেকেরই জীবন-জীবিকা এই ভাড়া। ভাড়া না পেয়ে অনেকেই কষ্টে দিন পার করছেন। তারপরও এখন মানবিক হওয়ার কোনও বিকল্প নেই। তাঁর বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সুবিধাজনক সময়ে ভাড়া দিতে বলছেন তিনি। কোনও চাপ নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছিলেন, মালিকরা যদি এক মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেয়, তাহলে ২০২০ সালের পুরো বছরের পৌরকর শিথিল করা হবে।
রাঙ্গামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুফি উল্লাহ জানান, করোনা পরিস্থিতিতে যদি কোন বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিক ভাড়াটিয়াদের সাথে ভাড়া নিয়ে বিরূপ আচরণ করেন, তাহলে তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।